রবিবার গুজরাতের মোরবী জেলায় মাচ্ছু নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই ১৪০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা। সেতুটি মেরামত করার পরে গত ২৬ অক্টোবর নতুন করে খুলে দেওয়া হয়েছিল। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যেই ঘটে গেল বিপর্যয়।
একটু পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, গত ২০ বছরে সেতু ভেঙে এমন একাধিক বিপর্যয় ঘটেছে। অতীতের পাতা উল্টে আনন্দবাজার অনলাইন খোঁজার চেষ্টা করেছে সেই মর্মান্তিক ঘটনাবলি।
২০২১ সালের মে মাসে মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির একটি মেট্রো স্টেশনে এসে ধাক্কা মারে একটি ট্রেন। ফলে স্টেশনের উপরের রেলওয়ে ওভারব্রিজের একাংশ ভেঙে পড়ে মারা যান ২৬ জন। আহত হন ১২ জনেরও বেশি।
২০১৮ সালে ভেঙে পড়ে ইতালির মোরান্ডি সেতু। ইতালির জেনোয়া শহরের সেই সেতু ভেঙে মারা যান ৪৩ জন।
মোরান্ডি সেতু ফ্রান্স এবং ইতালির মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সড়কের উপর অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ সেতু। তার উপর দিয়ে যায় একাধিক পণ্যবাহী এবং যাত্রীবাহী যান। ২০১৮ সালের দু’দিনের প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ে সেতুটি।
সেতুটি ভেঙে পড়ার পরেই সেতুর উপরে থাকা গাড়িগুলি অতল খাদে পড়ে যায়। প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য উদ্ধারকাজ শুরু করতেও বিলম্ব হয় অনেক।
সেতু ভেঙে বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে কলকাতা শহরেও। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ শহরের গিরিশ পার্ক এলাকায় ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ রোড ফ্লাইওভার (পোস্তা ওভারব্রিজ)।
কলকাতার ওই দুর্ঘটনায় ২৬ জন মারা যান। সেতুর ভেঙে-পড়া অংশে স্টিল এবং কংক্রিটের স্ল্যাব ভেঙে উদ্ধার করা হয় ১০০ জন আহতকে।
অক্টোবর মাসে দার্জিলিঙে ভেঙে পড়ে একটি কাঠের সেতু। সেখানকার স্থানীয় একটি উৎসবে শামিল হতে রঙ্গিত নদীর উপরে থাকা সেতুটির উপর উঠেছিলেন বহু মানুষ।
সেতুটি ভেঙে মারা যান কমপক্ষে ৩২ জন। আহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যায়। তারও কিছু দিন পরে অরুণাচল প্রদেশের চিন সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে পায়ে চলার সেতু ভেঙে মারা যান ৩০ জন।
২০০৭ সালের অগস্ট মাসে চিনের হুনান প্রদেশে একটি সেতু ভেঙে মৃত্যু হয় ৬৪ জনের। একটি নদীর উপর নির্মীয়মাণ ওই সেতুটির কাজ শেষ করার জন্য তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছিলেন নির্মাণশ্রমিকরা। মূলত তাঁরাই মারা যান ওই দুর্ঘটনায়।
২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে ৩৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি ভয়াবহ সেতু দুর্ঘটনা ঘটে। পুণ্যার্থীরা স্থানীয় একটি মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন বলে সেতুটিতে উঠেছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, দুর্বল কাঠের সেতুটিতে দুর্ঘটনার সময় ৪০০ জন মানুষ উঠেছিলেন। অতিরিক্ত ভার নিতে না পেরে ভেরি নদীর উপর সেতুটি ভেঙে পড়ে।
ওই দুর্ঘটনায় মারা যান ১৬ জন। ২৫ জনের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। খরস্রোতা নদীর জলে তাঁরা ভেসে যান। ১০০ জন কোনওক্রমে সাঁতার কেটে তীরে ওঠেন।
২০০৬ সালের অগস্ট মাসে তুমুল বৃষ্টিতে পাকিস্তানের মর্দানে সেতু ভেঙে পড়ে। পেশওয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বের সেই সেতুটি ভেঙে মারা যান ৪০ জন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক।
২০০৬ সালেরই ডিসেম্বর মাসে বিহারে ১৫০ বছরের পুরনো একটি সেতু ভেঙে পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় মারা যান ৩৪ জন।
বিহারের সেতুটি যখন ভেঙে পড়ে, তখন তার তলা দিয়ে যাচ্ছিল একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। ফলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন বহু মানুষ।
২০০৩ সালে মুম্বইয়ের একটি নদীর উপরে ভেঙে পড়ে একটি সেতু। সেই সময় সেতুটির উপর দিয়ে একটি স্কুলবাস এবং চারটি ছোট চার চাকার গাড়ি যাচ্ছিল।
সেতুটি ভেঙে মারা যান ২০ জন। মৃত ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনই ছিল স্কুলপড়ুয়া।
২০০৩ সালেরই ডিসেম্বর মাসে বলিভিয়ায় প্রবল বন্যায় একটি সেতু ভেঙে পড়ে। প্রশাসন ওই সেতুতে যানচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও একটি বাস সেতুতে উঠেছিল। বাসটি বন্যার জলের তোড়ে ভেসে যায়। মারা যান ২৯ জন।