আশি এবং নব্বইয়ের দশকে বলিউডের একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে গিয়েছেন সানি দেওল। কিন্তু বলিপাড়ায় পদার্পণের পর থেকেই অভিনেতার সঙ্গে জড়িয়ে যায় হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির বহু নামকরা অভিনেত্রীর নাম। কখনও ক্ষণিকের জন্য পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন সানি। কখনও বা নিজের জীবনের দীর্ঘকালীন সঙ্গী বানিয়ে একসঙ্গে বহু বছর পথ চলেছেন অভিনেতা। সানির পেশাগত জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনও কম রঙিন ছিল না।
১৯৮৩ সালে রাহুল রাওয়াইল পরিচালিত ‘বেতাব’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করতে দেখা যায় সানিকে। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সইফ আলি খানের প্রাক্তন পত্নী অমৃতা সিংহ। ছবির শুটিংয়ের সময় থেকেই অমৃতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সানি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যেত যে, সানি এবং অমৃতার চারহাত এক হতে বেশি দেরি নেই। তারকা জুটিকে বড় পর্দাতেও দেখতে পছন্দ করতেন দর্শক। কিন্তু অমৃতার সঙ্গে সানির সম্পর্কে চিড় ধরে যখন অভিনেতার বিয়ের কথা প্রকাশ্যে আসে।
ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার আগেই লন্ডন নিবাসী পূজা দেওলকে বিয়ে করেছিলেন সানি। কিন্তু সেই বিয়ের কথা সকলের কাছে গোপন করে রেখেছিল দেওল পরিবার। সানি যে বিবাহিত, এ কথা জানাজানি হলে অভিনেতার কেরিয়ারে ক্ষতি হতে পারত। তাই বিয়ের কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন সানিও।
সানির বিয়ের কথা জানতে পেরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন অমৃতা। কিন্তু সানির জীবনে প্রেম এসেছিল আবার। ১৯৮২ সালে ডিম্পল কপাডিয়ার সঙ্গে আলাপ হয় সানির। ক্রমশ তাঁদের বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে।
ডিম্পল তাঁর স্বামী রাজেশ খন্নার থেকে আলাদা হয়ে যান। টুইঙ্কল এবং রিঙ্কি— দুই কন্যাকে নিয়ে আলাদাও থাকতে শুরু করেন অভিনেত্রী। সেই সময় তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান সানি।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, ডিম্পলের দুই কন্যা সানিকে ‘ছোটে পাপা’ বলে সম্বোধন করত। বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, ডিম্পলকে গোপনে বিয়েও করেছিলেন সানি। পরিবারের কোনও অনুষ্ঠানে, বলিপাড়ার কোনও পার্টিতে ডিম্পলকে নাকি নিজের স্ত্রী হিসাবেও পরিচয় দিয়েছেন সানি।
১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মঞ্জিল মঞ্জিল’ ছবিতে সানি এবং ডিম্পল একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। ‘অর্জুন’ ছবিতে ডিম্পলকে নাকি কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন সানি নিজেই।
এ ছাড়াও ‘আগ কা গোলা’, ‘গুনাহ’, ‘নরসিংহ’-এর মতো ছবিতে কাজ করেছিলেন সানি এবং ডিম্পল। ডিম্পলের সঙ্গে সানির সম্পর্কের কথা জানাজানি হলে পূজা বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেন।
কানাঘুষো শোনা যায়, ডিম্পলের সঙ্গে বিচ্ছেদের জন্য সানিকে জোর করেছিলেন পূজা। না হলে তিনি দুই পুত্র-সহ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন বলে ভয় দেখিয়েছিলেন সানিকে। পূজার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতে চাননি অভিনেতা। তাই স্ত্রী এবং দুই পুত্রের সঙ্গে একই ছাদের তলায় থাকতেন সানি।
তবে ডিম্পলের প্রতি দায়িত্বও পালন করে গিয়েছেন সানি। এমনকি, অভিনেতার বাবা-মা ডিম্পলের সঙ্গে তাঁর মেলামেশা বন্ধ করতে বললে রেগে অশান্তিও করেছিলেন সানি। অনেকে মনে করেন, ইন্ডাস্ট্রিতে সানি এবং ডিম্পলের সম্পর্কের কথা ছড়িয়েছিলেন সানির প্রাক্তন প্রেমিকা অমৃতা।
ডিম্পলের জীবনের সমস্ত চড়াই-উতরাইয়ে অভিনেতা তাঁর পাশে ছিলেন। ২০০৯ সালে ডিম্পলের বোন সিম্পল মারা যাওয়ার পর সানি সব সময় অভিনেত্রীর পাশে ছিলেন।
অধিকাংশের দাবি, দীর্ঘ ১১ বছর সম্পর্কে ছিলেন সানি এবং ডিম্পল। তার পর তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দুই তারকার কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় তাঁদের কাহিনি অন্য দিকে মোড় নেয়।
সানি এবং ডিম্পল দু’জনকে মোনাকোয় ছুটি কাটাতে দেখা যায়। তারকাদের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের কোনও সদস্য ছিলেন না। সানি এবং ডিম্পল হাতে হাত রেখে একে অপরের পাশে বসেছিলেন। সেই মুহূর্ত পাপারাৎজ়িদের ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ায় আবার তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা শুরু হয়।
ডিম্পলের ভাইপো কর্ণ কপাডিয়াকেও ইন্ডাস্ট্রিতে নামিয়েছিলেন সানি। ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত থ্রিলার ঘরানার ‘ব্ল্যাঙ্ক’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় কর্ণকে। এই ছবিতে কাজ করেছিলেন সানিও। কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
কিন্তু ডিম্পলের সঙ্গে সম্পর্ক এত গাঢ় হওয়া সত্ত্বেও পূজার সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরেনি সানির। অভিনেতার জ্যেষ্ঠ পুত্র কর্ণ ২০১৯ সালে ‘পল পল দিল কে পাস’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় পা রেখেছেন। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র রাজবীরও বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে নামবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।