পঞ্জাবের মানচিত্রে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দুর মতো একটি গ্রাম। গ্রামের বাকি বাসিন্দাদের মতো আটার কলে চাকরি করতেন গৃহকর্তা বলবীর সিংহ। তার মাঝে গোপালন। সিংহ পরিবারের গল্পের শুরুটা খুবই সাধারণ। কিন্তু এই গল্পটাই পরে যত এগিয়েছে, ততই তৈরি হয়েছে রূপকথা।
বলবীরের পুত্র সতনম সিংহ ভামরা প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাস্কেটবলার, যিনি এনবিএ (আমেরিকার জাতীয় বাস্কেটবল লিগ) খেলেছেন।
২০১৫ সালে এনবিএ ড্রাফটে নাম লিখিয়েছিলেন সতনাম। সাত ফুট দুইয়ের এই তরুণকে সই করিয়েছিল এনবিএর অন্যতম বিখ্যাত দল ডালাস মাভেরিক্স।
২০০৫ সালের পরে সতনামই ছিলেন বিশ্বের প্রথম খেলোয়াড়, যিনি কলেজ বাস্কেটবল, অন্য কোনও পেশাদার লিগ বা এনবিএ ডি লিগে না খেলে সরাসরি এনবিএ-তে সুযোগ পান। বছর তিনেক ধরে বাস্কেটবলের শ্রেষ্ঠ ময়দানে তিনি লড়াই করেছেন।
এই নজির অভিভূত করে দিয়েছিল দেশ-বিদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের। অমিতাভ বচ্চন থেকে সচিন তেন্ডুলকর, জ্বালা গাট্টা থেকে রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর, গোটা দেশ মজেছিল উনিশের তরুণে।
কিন্তু এনবিএতে বেশি দিন খেলতে পারেননি সতনাম। ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। পরে দেশেও ডোপিংকাণ্ডে বিপাকে পড়েন সতনাম। যার জন্য দু’বছরের জন্য তাঁকে নির্বাসিত করে জাতীয় ডোপিং-বিরোধী এজেন্সির (নাডা) শৃঙ্খলারক্ষাকারী প্যানেল। অভিযোগ ছিল, তিনি নিষিদ্ধ হাইজেনামাইন সেবন করেছিলেন।
শেষমেশ দ্য গ্রেট খালির মতো সতনামও পা রাখেন ‘রেসলিং’ জগতে। ডব্লুডব্লুই-তেও খেলার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তিনি বেছে নেন ‘অল এলিট রেসলিং’-এর মঞ্চকে। সেখানে তিনিই প্রথম ভারতীয় কুস্তিগীর।
ভারতে ‘রেসলিং’-এর কথা উঠলেই খালির নাম আসে শুরুতে। সতনাম রেসলিংয়ে যোগ দেওয়ার পর থেকে খালির সঙ্গে তাঁর নামও উচ্চারিত হতে শুরু করেছে। অনেকে তাঁদের মধ্যে তুলনাও করে থাকেন।
কিন্তু সতনামের মত, তাঁর সঙ্গে খালির কোনও তুলনা চলে না। তাঁর বক্তব্য, ভারতে যত কুস্তিগীর আছেন, তাঁদের সকলের থেকেই তিনি আলাদা।
সতনামের যুক্তি, খালির শরীরের উপরের অংশ অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু শরীরের নীচের অংশ ততটা নয়। আর এখানেই নাকি তিনি এগিয়ে। সতনাম বলেন, ‘‘আমি ডব্লুডব্লুই-এর বিগ শো-কে দেখেছি। ভীষণ শক্ত মানুষ। শরীরের উপর ও নীচ দুই অংশই শক্তিশালী। আমার মনে হয়, উনি যা করতে পারেন, আমিও তা পারি। অনেক কিছু শিখেছি ওঁর থেকে।’’
তবে জীবনযুদ্ধের কাহিনিতে খালির সঙ্গে মিল রয়েছে সতনামের। দু’জনেই গরিব পরিবার থেকে উঠে এসে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলেছেন।
হিমাচল প্রদেশের সিরমোর জেলার ধিরাইনা গ্রামের এক গরিব পঞ্জাবি রাজপুত পরিবারে জন্ম খালির। দুনিয়া তাঁকে খালি হিসেবে চিনলেও, তাঁর আসল নাম দলীপ সিংহ রাণা।
‘দ্য ম্যান হু বিকেম খালি’ বইতে খালি জানিয়েছেন, ছোটবেলায় এমনও দিন গিয়েছে যে, স্কুলের আড়াই টাকা ফি দেওয়ার মতো সামর্থ্যও ছিল না তাঁর পরিবারের। তার জন্য স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
এর পর খালি যোগ দেন দিনমজুরের কাজে। পরে নিরাপত্তারক্ষী, পুলিশের চাকরি ছেড়ে পাড়ি সুদূর আমেরিকায়। ২০০৬-এ প্রথম ভারতীয় পেশাদার রেসলার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন ডব্লুডব্লুই-এর সঙ্গে। ২০০৭-এ ডব্লুডব্লুই চ্যাম্পিয়ন হন ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট বিভাগে।
সতনামও সেই ল়ড়াইটাই চালিয়ে যাচ্ছেন। এনবিএর স্বপ্ন পূরণ না হলেও এখনও আশা ছাড়েননি তরুণ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘না, এনবিএতে আমি এক দিন ঠিক ফিরে যাব। আমাকে ওরা ডেকে নিতে বাধ্য হবে। আর আমি যদি না পারি, তা হলে আমার ছেলে পারবে। ছেলে না পারলে পরিবারের অন্য কেউ। পারবেই। আর সে দিনই আমি জবাবটা দিতে পারব এনবিএকে।’’