প্রযুক্তির জগতে তিনি অন্যতম সফল নাম। ২০২২ সালে সারা দুনিয়ার প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে সব থেকে বেশি বেতন পেয়েছেন তিনি। এ হেন ব্যক্তির জীবন অনেকটাই বদলে গিয়েছিল একটি ঘটনার পর। সাফল্য এসেছিল স্ত্রীর একটি পরামর্শে।
তিনি সুন্দর পিচাই। গুগ্লের অভিভাবক সংস্থা অ্যালফাবেটের সিইও। ২০২২ সালে তিনি ২২.৬ কোটি ডলার বেতন পেয়েছেন। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১,৮৫৪ কোটি টাকা।
হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে প্রতি দিন পিচাই পাঁচ কোটি টাকা বেতন পেয়েছেন।
পিচাইয়ের জন্ম ১৯৭২ সালের ১০ জুন তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে। বড় হয়েছেন চেন্নাইয়ে।
স্নাতক করেছেন খড়্গপুর আইআইটি থেকে। আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। আমেরিকারই হোয়ার্টন স্কুল থেকে এমবিএ পাশ করেছিলেন তিনি।
২০০৪ সালে গুগ্লে যোগ দেন পিচাই। ২০১৯ সালে তিনি গুগ্লের সিইও নিযুক্ত হন। তাঁর এই সাফল্যের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁর স্ত্রীর।
আইআইটি খড়্গপুরেই পিচাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল অঞ্জলির। ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। সেই বিষয়ে প্রথমে তাঁর বন্ধুরা কিছু জানতেই পারেননি। কলেজের শেষ পর্বে এসে পিচাই নিজেই জানিয়েছিলেন সে কথা। তার পর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এসেছিল।
অঞ্জলি এবং পিচাই প্রথমে নেহাতই বন্ধু ছিলেন। কলেজের প্রথম বর্ষে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল। এর পর বুঝতে পারেন, তাঁদের সম্পর্ক শুধুই বন্ধুত্বের নয়, তার থেকেও বেশি কিছু।
কলেজের চতুর্থ বর্ষেই অঞ্জলিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পিচাই। রাজি হয়েছিলেন তিনি। একটি সাক্ষাৎকারে পিচাই জানিয়েছিলেন, সে সময় স্মার্টফোন ছিল না। তাই দু’জনে কথাবার্তা, যোগাযোগ রাখতে সমস্যায় পড়তেন। প্রায়ই অঞ্জলির হস্টেলে গিয়ে দেখা করতেন তিনি।
অঞ্জলি আদতে রাজস্থানের কোটার বাসিন্দা। তাঁর বাবা কোটার সরকারি পলিটেকনিক কলেজে চাকরি করতেন।
আইআইটি থেকে পাশ করার পর আমেরিকায় চলে গিয়েছিলেন পিচাই। অঞ্জলি থেকে গিয়েছিলেন ভারতে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত অ্যাকসেনচার সংস্থায় চাকরি করেছিলেন তিনি।
আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন পিচাই। হাতে যথেষ্ট অর্থ ছিল না। একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, অঞ্জলিকে ফোন করার মতো যথেষ্ট টাকাও ছিল না তাঁর হাতে।
ছ’মাস দু’জনে কথাই বলতে পারেননি। যদিও তাতে সম্পর্ক এতটুকু বদলায়নি। পড়া শেষে চাকরি পান পিচাই। অঞ্জলির বাবা-মায়ের কাছে বিয়ের কথা পাড়েন।
দু’জনে বিয়ে করেন। তার পর অঞ্জলি আমেরিকা পাড়ি দেন। সেখানেই থাকতে শুরু করেন দু’জন। দু’জনের একটি পুত্র এবং একটি কন্যাসন্তান রয়েছে, নাম কাব্য এবং কিরণ।
অঞ্জলির পরামর্শেই আজ গুগ্লের অভিভাবক সংস্থা অ্যালফাবেটের সিইও। কী ভাবে, সে কথা একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন পিচাই।
এক সময় গুগ্লের চাকরি ছাড়তে চেয়েছিলেন পিচাই। মাইক্রোসফ্টে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। আরও কয়েকটি সংস্থায় চাকরির প্রস্তাব ছিল। তাঁকে বাধা দিয়েছিলেন অঞ্জলি।
সে দিন অঞ্জলির কথা শুনেছিলেন। তাই এখন সেই গুগ্লেরই শিখরে রয়েছেন পিচাই। সঠিক পরামর্শ দেওয়ার জন্য তাই স্ত্রীকে আজও ধন্যবাদ দেন সুন্দর।