দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়ে অনাথ শিশু আশ্রয় পায় এক পরিবারে। মাথার উপর ছাদ, সুরক্ষা সবই ছিল সেখানে। সঙ্গে উপরি পাওনা বন্ধুত্ব। অস্ট্রেলিয়ার এক পরিবারে দেখা মিলবে ক্যাঙারু পোষ্যের! বাড়ির পোষ্য সারমেয়র সঙ্গে রয়েছে তার দিব্যি সহাবস্থান।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি দুর্ঘটনার পরে একটি শিশু ক্যাঙারুকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রাস্তায় ঘুরতে দেখে তাকে উদ্ধার করে আনেন টিফানি ব্যান্টন নামের এক পশুপ্রেমী। তাঁর বাড়িতে ঠাঁই মেলে শিশু ক্যাঙারুটির। তার নাম রাখা হয় স্টার।
২০২৪ সালের মে মাসে টিফানির বাড়িতে আসে আর এক নতুন অতিথি। হেজ়েল নামের আরও এক সারমেয়।
স্টারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোনও সমস্যা হয়নি হেজ়েলের। ভিন্ন প্রজাতির দুই পোষ্যের মধ্যে কখনও অভাব হয়নি মিলমিশের। টিফানির পরিবার জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হেজ়েলের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্টারের।
গত বছর এক বাসচালকের ফোন পেয়ে স্থানীয় স্টার রোডে পৌঁছন টিফানি। সেখানে দেখেন, একটি গাড়ির ধাক্কায় রাস্তার এক পাশে পড়ে রয়েছে ৯ মাসের ওই ক্যাঙারু শাবকটি। কোনও খোঁজ মেলেনি মা ক্যাঙারুটির।
অনাথ ক্যাঙারু শাবকটিকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসেন টিফানি। তাঁর মেয়ে ম্যাগি নিজের হাতে তুলে নেন ক্যাঙারুর যত্নের ভার। স্টার রোড থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে নাম রাখা হয় ‘স্টার’।
৯ মাসের ছোট্ট ক্যাঙারু বাচ্চার যত্ন নেওয়া সহজ কাজ ছিল না বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন টিফানি। কারণ মায়ের থলির ওম থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল শাবকটি। সাধারণত আট মাসের পর ক্যাঙারুর বাচ্চারা থলি থেকে অল্প অল্প করে বাইরে বেরোতে শুর করে। ১১ মাস পর্যন্ত তারা মায়ের থলিতে থাকতেই পছন্দ করে বলে জানা গিয়েছে।
তাকে একটি বৈদ্যুতিক কম্বল দিয়ে উষ্ণ রাখতে হয়েছিল এবং পশুচিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল বলে টিফানি জানান।
স্টারের পরিচর্যার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল ম্যাগি। নানা বাধা সত্ত্বেও ক্যাঙারু শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ম্যাগির ছিল না। সব সময়ই স্টারের খাওয়াদাওয়া এবং তার যত্ন নিত টিফানির ছোট মেয়ে।
গত মে মাসে টিফানির পরিবারে আসে নতুন সদস্যটি। বাড়িতে আসার পরই দুই পোষ্যের সদ্ভাবের কোনও অভাব হয়নি। শিশু ক্যাঙ্গারুর অবিচ্ছেদ্য বন্ধু হয়ে ওঠে হেজ়েল। যারা সারা দিন খেলত এবং শোওয়ার সময় একে অপরকে আলিঙ্গন করে থাকত।
টিফানি জানিয়েছেন, হেজ়েল ও স্টার একসঙ্গে বড় হয়েছে। তাদের দু’জনের মেলবন্ধনও দারুণ। স্টার কখনও একা থাকতে পছন্দ করে না। বাড়িতে দু’জনের কাউকে খুঁজে না পাওয়া গেলে হয় ম্যাগির বিছানায় বা হেজ়েলের বিছানায় পাওয়া যাবে।
সরকারি রিপোর্ট বলছে, অস্ট্রেলিয়ায় মানুষের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যাঙারু রয়েছে। প্রতি বছর সাত হাজারেরও বেশি চালক রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে ক্যাঙারুর সঙ্গে দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। স্টার নামের ক্যাঙারু শাবকটির ভাগ্য সুপ্রসন্ন তাই সে স্বজাতিদের হারিয়েও পেয়েছে পরিবারের আদর, ভালবাসা আর এমন এক বন্ধু যে তাকে সর্ব ক্ষণ আগলে রেখেছে।