বলিউডি তারকা অভিনেত্রীদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বার বার। কোনও প্রেম গড়িয়ে বিয়ে পর্যন্ত গিয়েছে। কোনও সম্পর্ক ভেঙেছে কিছু দিন পরই। আশির দশকে এমনই ছিল অভিনেত্রী নীনা গুপ্ত এবং ভিভিয়ান রিচার্ডসের সম্পর্ক। সম্প্রতি ভিভের সঙ্গে কাটানো সেই সময় ফিরে দেখলেন ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজের মঞ্জু দেবী।
এক জন তখনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেটার। এক ডাকে ভিভকে চেনে ক্রিকেট দুনিয়া। তাঁর সঙ্গে অভিনেত্রী নীনার সম্পর্কের গুঞ্জন শুরু হয়েছিল আশির দশকে। সম্পর্ক নিয়ে বরাবরই অকপট ছিলেন নীনা। অন্য নায়িকাদের মতো প্রেমের কথা অস্বীকার করে কখনও বলেননি, ‘আমরা শুধুই বন্ধু’। বরং ভিভকে বিয়ে না করে সন্তান নিয়েছিলেন। তাঁকে একা হাতে মানুষ করেছেন। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ‘সিঙ্গল মাদার’ নীনা ফিরে গেলেন অতীতে। আবার অকপট হলেন তাঁর ও ভিভের সম্পর্ক নিয়ে।
ভিভ-নীনার সম্পর্কের ফসল মাসাবা। যাঁর বড় হয়ে ওঠা একলা মায়ের কাছে। কেমন ছিল সে দিন? তিনি অন্তঃসত্ত্বা জেনে কী বলেছিলেন প্রেমিক ভিভ? খোলসা করলেন নীনা।
নীনার সঙ্গে সম্পর্কে থাকাকালীন বিবাহিত ছিলেন ভিভ। তবে নীনা তাঁর প্রথম সন্তান রাখতে চান শুনে ভিভ তাঁকে ফোন করে আশ্বস্ত করেছিলেন। বলেছিলেন সঙ্গে আছেন। যদিও নীনার পরিবার একেবারেই এই সম্পর্ক মেনে নেননি। অবিবাহিতা মেয়ে মা হবেন শুনে বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরা। অন্য দিকে, প্রেমিকও তখন বহু দূরে। এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নিজেই নিজের কাঁধে হাত রেখে শক্ত হয়েছিলেন নীনা। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবেনই।
নীনার কথায়, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ফোন করেছিলাম ভিভকে। আমার গর্ভে সন্তান আছে জেনে আমি যে ভীষণ খুশি ছিলাম, এমনটা নয়। তবে আমি খুশি ছিলাম কারণ, ভিভকে ভালবাসতাম। আমি ওকে ফোন করেছিলাম।’’
নীনা আরও বলেন, ‘‘আমি ওকে ফোন করে বলেছিলাম যদি তুমি এই সন্তান না চাও, আমিও চাই না।’’ শুনে ভিভ কী বলেছিলেন? নীনার কথায়, ‘‘আমার এ কথা শুনেই ফোনের ও প্রান্ত থেকে ‘না, না’ বলতে শুরু করল ভিভ। বলে, ‘‘তুমি যদি এই সন্তান রাখতে চাও তা হলে নিশ্চয়ই রাখো। ও আমাদের ভালবাসার চিহ্ন।’’
কিন্তু বিবাহিত ভিভ তাঁর সঙ্গে সংসার বাঁধার জন্য আগের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন সেটা চাননি নীনা। অ্যান্টিগা গিয়ে ভিভের সঙ্গে সংসার করাও তাঁর কাছে অসম্ভব ছিল। তখন তিনি ঠিক করেন একা হাতে এই সন্তানকে মানুষ করবেন।
ভয় হয়নি? নীনার কথায়, ‘‘একে কম বয়স। তার পর প্রেমে পড়েছিলাম। ওই যা হয়... অন্ধ ছিলাম। অনেকে বারণ করেছিলেন। কিন্তু ভালবাসায় অন্ধ থাকলে অন্য কারও কথা কি কেউ শোনে? আমিও বাড়ির কারও কথা শুনিনি।’’ অন্তঃস্বত্ত্বা থাকাকালীন নীনা গুপ্তকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন অভিনেতা সতীশ কৌশিক। অভিনেত্রীর কাছের বন্ধু ছিলেন সতীশ। সেই সময় নীনার পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছিলেন অভিনেতা। সতীশ বলেছিলেন, “চিন্তা কোরো না। তোমার সন্তান যদি শ্যামবর্ণ হয়, তুমি বলে দিও, সে আমার। আমি আর তুমি বিয়ে করে নেব। কেউ কিছু সন্দেহ করবে না।”
নীনা এবং ভিভের আলাপ জয়পুরে। বিনোদ খান্নার সঙ্গে একটি ছবির শুটিংয়ে জয়পুরে ছিলেন নীনা। সে সময় জয়পুরের রানি তাঁদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন ভিভও। সেই আলাপ। তার পর প্রেম হয় ক্রিকেটার ও অভিনেত্রীর।
নীনার মেয়ে মাসাবা এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। ফ্যাশন ডিজ়াইনার তিনি। মাসাবা জানান, তাঁর বাবার পরিচয় নিয়ে কখনও লুকোছাপা করেননি মা। ছোট থেকেই সত্যিটা জেনেছিলেন। তবে বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘অদ্ভুত’ ছিল বলে জানান মাসাবা।
এখনও ভিভের সঙ্গে যোগাযোগ আছে? অভিনয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ব্যস্ত অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘কখনও কখনও আমাদের কথা হয়। কখনও আবার অনেক দিন ধরে কোনও যোগাযোগ থাকে না। তবে মেয়েকে আমি সব বলেছি। ছেলেমেয়েকে সত্যি বলা এবং তাঁদের সৎ থাকার উপদেশ দেওয়া উচিত।’’
মাসাবাও বাবার সম্পর্কে আর ক্ষোভ পুষে রাখেননি। ভিভ ফিরে গিয়েছিলেন স্ত্রী মিরিয়ামের কাছে। নীনার গর্ভে রয়ে গিয়েছিল তাঁদের প্রেমের চিহ্ন। সে জন্য বাবার উপরে অবশ্য কোনও রাগ নেই বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন মাসাবা। তিনি জানান, ভিভকে শ্রদ্ধা করেন। ভালওবাসেন। ঠিক যেমনটা ভালবাসেন আর শ্রদ্ধা করেন মা নীনাকে।
বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হত মাসাবার। অন্তত ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বেশ কিছু মজার স্মৃতি রয়েছে তাঁর। স্কুলে যখন টানা ছুটি থাকত, তখন বাবার কাছে চলে যেতেন মাসাবা।
মাসাবার কথায়, ‘‘ছোটবেলা মানেই ছিল দেদার ঘুরে বেড়ানো। স্কুলে ছুটি পড়লেই বিমানে করে আমি সোজা বিদেশে চলে যেতাম। আফ্রিকা কিংবা ইংল্যান্ড— বাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছি। ওই সময়ে বাবা ক্রিকেটে ধারাভাষ্য দিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরতেন।’’
এখন বলিউডে ব্যস্ততম অভিনেত্রীদের মধ্যে নীনা এক জন। এখন স্বামী বিবেক মেহরা এবং মেয়ে মাসাবাকে নিয়ে নীনার সংসার। তবে বিবেকেরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে।
বিবেক ও নীনার আলাপ একটি বিমানে। সেই আলাপ নিয়ে নীনা বলেন, ‘‘খুব ভাল সময় ছিল। তবে তার পরে বিস্তর সমস্যায় পড়েছিলাম। কারণ, বিবেক তখন দুই সন্তানের বাবা। সে এক মস্ত কাহিনি।’’
এক সময় নীনা এবং বিবেক আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন। তবে এখন আবার একসঙ্গেই থাকেন। এ নিয়ে নীনার মন্তব্য, ‘‘আমাদের মধ্যে আর প্রেম আছে বলে মনে করি না। তবে সন্তানদের জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমার এবং বিবেকের বিশ্বাস এবং কর্তব্যের সম্পর্ক। এখন খুশিই আছি আমরা।’’