‘একলা ঘর আমার দেশ’- রূপম ইসলামের এই গানই যেন হয়ে উঠছে ভারতীয় তরুণদের মনের কথা। বর্তমান যুগে জীবন মানেই শুধু দৌড়ে চলা। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক যেন কেবল মুঠোফোনেই আবদ্ধ। তার ফল? মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে একাকিত্বের নিকষ কালো অন্ধকারের দিকে।
অন্তত সমীক্ষা তো তেমনই বলছে। আর এই সমস্যায় ভারতীয় মহিলাদের পিছনে ফেলেছেন পুরুষেরা। পরিসংখ্যান বলছে ভারতে মহিলাদের দ্বিগুণ সংখ্যক পুরুষ এখন একাকিত্বের শিকার।
জীবনের গতিবেগ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে একাকিত্বের সমস্যা। রাস্তাঘাট কিংবা মুঠোফোনে বন্দি সমাজমাধ্যমের পাতায় ভিড়ের অভাব নেই, তবুও একা বহু মানুষ।
একাকিত্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই মানসিক সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও। যে কোনও ধরনের মানসিক সমস্যা কেবল মনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এর প্রভাব পড়ে জীবনযাপনেও। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা এই সমস্যায় ভুগছেন বেশি।
ইংল্যান্ডের জাতীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ৬০ শতাংশই কোনও না কোনও ভাবে একাকিত্বের শিকার।
আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিকতম গবেষণা জানাচ্ছে, কোভিড চলাকালীন ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সিদের মধ্যে কার্যত মহামারির রূপ নিয়েছে একাকিত্ব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফেও কোভিড পরবর্তী সময়ে একাকিত্বকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি ‘যুব’ নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ভারতে একাকিত্বে ভুগছেন এমন তরুণীদের তুলনায় তরুণদের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
মনোবিদেরা বলছেন, ভারতীয় যুবকদের একাকিত্বের অতিমারি গ্রাস করছে, অথচ কেউই এই বিষয় খুব বেশি সচেতন নন।
চারপাশে বহু মানুষের ভিড় থাকলেই আর একা লাগবে না, এমন ধারণা ঠিক নয় বলেও জানাচ্ছে বিভিন্ন সমীক্ষা।
অধিকাংশ সময় তরুণ-তরুণীরা একাকিত্বের সমস্যা থেকে বাঁচতে সমাজমাধ্যমে বন্ধুর খোঁজ করে, অথচ অজান্তে সেই সমাজমাধ্যমই তাঁদের আরও দূরে ঠেলে দেয় বাস্তব জগৎ থেকে।
কিন্তু, কী ভাবে মিলতে পারে মুক্তি? এই ধরনের সমস্যায় সবার আগে বুঝতে হবে নিজের মনকে। চিনতে হবে নিজের ভাল লাগা-ভাল থাকার ক্ষেত্রগুলিকে।
মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করলে, সাফল্যকেও সাফল্য বলে মনে হয় না। কাজেই সাফল্যের থেকেও দিনের শেষে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনের শান্তি।
অবহেলা করলে চলবে না মনের ছোট ছোট আপাততুচ্ছ ভাল লাগাগুলোকে। অনেক সময়ই এই ধরনের সমস্যা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি না।
মনের কথা শোনানোর জন্য আমাদের চাই এমন এক জন মানুষ যিনি আমাদের মনের পরিস্থিতির কথা জেনেও কোনও বিরূপ মন্তব্য করবেন না।
এ ক্ষেত্রে আপনার ভরসার সঙ্গী হতে পারেন এক জন মনোবিদ। তিনিই আপনার মনের কথা শুনে আপনাকে সুস্থ জীবনে ফেরার পথ দেখাতে পারেন।