ভারতের শিয়রে এখন জি২০। আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে বসবে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আসর। আর তা নিয়ে রাজধানীতে ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।
জি২০ তৈরি হয়েছে ১৯টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নিয়ে। প্রতি বছর আলাদা আলাদা দেশ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে। চলতি বছরে ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ভারত। ওই বৈঠকে এ বার সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সদস্য দেশগুলির রাষ্ট্রনেতারা দিল্লি আসছেন। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন বাইডেন। শুক্রবার দিল্লি পৌঁছবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও করবেন।
এ বারের জি২০ সম্মেলনে রাশিয়া এবং চিন—এই দু’দেশের রাষ্ট্রনেতা অনুপস্থিত থাকবেন। জি২০ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন যোগ দিতে আসবেন না বলে আগেই জানিয়েছিল ক্রেমলিন। ২৮ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোনে আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা জানান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মোদীকে পুতিন জানিয়েছেন তাঁর পরিবর্তে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভারভ জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
কেন পুতিন জি২০ সম্মেলনে গরহাজির থাকবেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গত শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেছিলেন, ‘‘সে সময় জরুরি সামরিক সক্রিয়তার কারণেই প্রেসিডেন্ট পুতিন শারীরিক ভাবে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে হাজির থাকতে পারবেন না।’’ তবে তিনি ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য দিকে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, নয়াদিল্লির জি২০ শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন না সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পরিবর্তে চিনের প্রতিনিধি হিসাবে সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। সেই জল্পনা সত্যি করে সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে জিনপিংয়ের পরিবর্তে কিয়াংয়ের আসার কথা জানিয়েছে চিন।
যদিও কী কারণে জিনপিং ভারতে আসছেন না, তা স্পষ্ট করা হয়নি চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের আবহে নিজে নয়াদিল্লি না এসে অনুগত কিয়াংকে পাঠাচ্ছেন জিনপিং।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও অনেক জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান এড়িয়েছেন রাষ্ট্রনেতারা।
২০১০ সালের পঞ্চম জি২০ সম্মেলনের আয়োজক দেশ ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু এই সে দেশের সিওলে আয়োজিত সেই বৈঠকে যোগ দেননি সৌদি আরবের প্রধান আবদুল্লা বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ।
২০১৪ সালের অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে আয়োজিত নবম জি২০ সম্মেলনে যোগ দেননি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্ডেজ। এর পর ২০১৫ সালের তুরস্ক আয়োজিত দশম জি২০ সম্মেলনে যোগ দেননি তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ।
এর পর ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনা এবং জাপান আয়োজিত জি২০ সম্মেলনে যোগ দেননি ইন্দোনেশিয়া এবং মেক্সিকোর রাষ্ট্রনেতারা।
২০২০ সালের জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অবশ্য সব দেশের রাষ্ট্রনেতাই অংশ নিয়েছিলেন। সৌদি আরবের রিয়াধে এই সভা আয়োজিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা অতিমারির জন্য এই বৈঠক ভার্চুয়ালি হয়েছিল।
২০২১ সালের ১৬তম জি২০ সম্মেলনে সব থেকে বেশি দেশের রাষ্ট্রনেতারা অনুপস্থিত ছিলেন। সে বারের বৈঠকের আয়োজক দেশ ছিল ইটালি। ইতালির রোমে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে, চিন, জাপান, রাশিয়া, মেক্সিকো, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রনেতারা বৈঠকে যোগ দেননি।
২০২২ সালের জি২০ সম্মেলনের আয়োজক ছিল ইন্দোনেশিয়া। বালিতে আয়োজিত সেই বৈঠকে যোগ দেননি ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতারা।
২০২৩ সালেও নিশ্চিত ভাবে যোগ দিচ্ছেন না চিন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক দেশের প্রধানই এখনও শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত করেননি। দেশগুলি হল, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, জাপান, ইটালি, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা।
অন্য দিকে, শীর্ষ সম্মেলনে নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুর, স্পেন, ওমান, বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস এবং নাইজেরিয়া-সহ কয়েকটি দেশ অতিথি হিসাবে অংশ নেবে।