২২ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা! মুখের কথা নয়। ঠিক এই বিপুল পরিমাণ অঙ্কের অর্থ-প্রতারণারই শিকার ভারতের প্রধান ব্যাঙ্কগুলি। ভারতের ইতিহাসে এটিই এখনও পর্যন্ত সব থেকে বড় ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা। অভিযুক্ত গুজরাতি সংস্থা এবিজি শিপইয়ার্ড লিমিটেড।
ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে। দেশের প্রধান ব্যাঙ্কগুলির পাশাপাশি এই প্রতারণায় বিধ্বস্ত দেশের বেশ কয়েকটি মাঝারি এবং ছোট ব্যাঙ্ক। ইডি-ও ইতিমধ্যেই এই সংস্থা এবং সংস্থার প্রধানদের বিরুদ্ধে অর্থ-তছরুপ মামলার তদন্ত শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।
তবে এই সংস্থার চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ঋষি অগ্রবাল-সহ আরও বহু কর্তা পলাতক। তাঁরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছে সিবিআই।
এবিজি গ্রুপের মালিকাধীন আরও ৯৮টি সংস্থা এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলেও সিবিআই সূত্রে খবর।
দেশের কোন কোন ব্যাঙ্ক এই দুর্নীতির শিকার? রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৮টি ব্যাঙ্ক পাঁচ বছরে ২২ হাজার ৮৪২ কোটি ঋণ দিয়েছে এই সংস্থাকে। যার মধ্যে রয়েছে এসবিআই এবং আইসিআইসিআই-এর মতো ব্যাঙ্কও।
এবিজি গ্রুপ-কে ঋণ দেওয়া ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে সব থেকে বড় ক্ষতির মুখে বেসরকারি ব্যাঙ্ক আইসিআইসিআই। পাঁচ বছরে এই ব্যাঙ্কের মোট ঋণ দেওয়া অর্থের পরিমাণ সাত হাজার ৮৯ কোটি টাকা। তালিকায় এর পরই রয়েছে আইডিবিআই-ব্যাঙ্কের নাম। তাদের ঋণ দেওয়া মোট অঙ্ক তিন হাজার ৬৩৯ কোটি।
ঋণ দেওয়া অর্থের পরিমাণের নিরিখে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এসবিআই। এসবিআই পাঁচ বছরে মোট দু’হাজার ৯২৫ কোটি ঋণ দিয়েছে এবিজি-কে।
হাজার কোটির উপরে ঋণ দেওয়া ব্যাঙ্কগুলির তালিকায় আরও চারটি ব্যাঙ্ক রয়েছে। ব্যাঙ্ক অব বরোদা ঋণ দিয়েছে এক হাজার ৬১৪ কোটি। এক্সিম ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩২৭ কোটি।
পলাতক হিরে ব্যাবসায়ী নীরব মোদী-কে ঋণ দিয়ে আগেই ক্ষতির মুখে থাকা পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের নতুন করে ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ২৪৪ কোটি। এর পরে রয়েছে ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক। ঋণ দেওয়া অর্থের পরিমাণ এক হাজার ২২৮ কোটি।
৪০০ থেকে ১০০০ কোটি-র মধ্যে রয়েছে ছ’টি ব্যাঙ্ক। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়েছে ৭৪৩ কোটি। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া এবং ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স (এখন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের অর্ন্তভুক্ত)-এর ক্ষতির পরিমাণ যথাক্রমে ৭১৯ এবং ৭১৪ কোটি টাকা।
তালিকায় এর পরই রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর-এর নাম। ঋণের পরিমাণ ৪৫৮ কোটি। সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক (এখন কানাড়া ব্যাঙ্ক) এবং দেনা ব্যাঙ্ক (এখন ব্যাঙ্ক অব বরোদা)-এর পাঁচ বছরে দেওয়া ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০৮ এবং ৪০৬ কোটি।
১০০ থেকে ৩০০ কোটি-র মধ্যে ঋণ দেওয়া ব্যাঙ্কের সংখ্যা সাতটি। এর মধ্যে অন্ধ্র ব্যাঙ্ক (এখন ইউবিআই ব্যাঙ্ক) এবিজি শিপইয়ার্ড লিমিটেড-কে পাঁচ বছরে মোট ৩৫০ কো়টি টাকা ঋণ দিয়েছে। আইএফসিআই লিমিটেড দিয়েছে ৩০০ কোটি এবং সিকম্ লিমিটেড দিয়েছে ২৬০ কোটি টাকা। ফিনিক্স এআরসি প্রাইভেট লিমিটেড অর্থাত্ সাউথ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ঋণ দিয়েছে ১৪১ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এলআইসি-র ক্ষতির পরিমাণও নেহাত কম নয়। পাঁচ বছরে এলআইসি-র দেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ১৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়াও এসবিএম ব্যাঙ্ক লিমিটেড এবং ডিসিবি ব্যাঙ্ক লিমিটেড-এর দেওয়া ঋণ যথাক্রমে ১২৫ কোটি এবং ১০৬ কোটি।
১০০ কোটির নীচে ঋণ দেওয়া এবং অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতির মুখে পড়া ব্যাঙ্কের সংখ্যা আটটি। পিএনবি (আর্ন্তজাতিক) লিমিটেড-এর ঋণের পরিমাণ ৯৭ কোটি টাকা। লক্ষ্মী বিকাশ ব্যাঙ্ক লিমিটেড এবং ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, সিঙ্গাপুর-এর দেওয়া ঋণ যথাক্রমে ৬১ কোটি এবং ৪৩ কোটি। পাঁচ বছরে কানাড়া ব্যাঙ্ক ৪০ কোটি, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ৩৯ কোটি, পঞ্জাব-সিন্ধ ব্যাঙ্ক ৩৭ কোটি এবং ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ১৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
তবে এবিজি শিপইয়ার্ড লিমিটেড সংস্থার ঋণ দুর্নীতির কারণে সব থেকে কম ক্ষতির মুখে বেসরকারি ইয়েস ব্যাঙ্ক। এই ব্যাঙ্কের ক্ষতির পরিমাণ মাত্র দু’কোটি টাকা।