নগরায়ন প্রতিনিয়ত জঙ্গল কেটে সাফ করে চলেছে। কিন্তু কখনও শুনেছেন জঙ্গল এক আস্ত জনবসতিকে গিলে খাচ্ছে? এ যেন ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে দৌড়। বইয়ের পাতায় নয়, বরং বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটেছে। চিনের একটি গ্রামকে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলেছে অরণ্য।
হউতুওয়ান গ্রাম। চিনের ‘ফিশিং ভিলেজ’ নামে পরিচিত এই গ্রাম এক সময়ছিল জনবহুল। ধীরে ধীরে গ্রামবাসীরা পার্শ্ববর্তী শহরে চলে যান। এই গ্রামে পড়ে থাকে তাঁদের বসবাসের স্মৃতি।
১৯৮০ সালের জনগণনা অনুযায়ী এই গ্রামের লোকসংখ্যা ছিল তিন হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু এই গ্রামে যাতায়াতের সুবিধা তেমন নেই।
এমনকি, এই গ্রাম বাইরের কেউ খুব সহজে খুঁজেও পেতেন না। ৯০-এর দশকে তাই একের পর এক ঘর শূন্য হতে শুরু করে। বেশিরভাগ ঘরের ভিতর আসবাবপত্রও রয়ে যায়।
২০০২ সাল নাগাদ এই গ্রামটি পুরোপুরি জনমানবহীন হয়ে পড়ে।
পরিত্যক্ত হউতুওয়ান গ্রামটি আবার নজরে আসে প্রায় ১৩ বছর। আবার ওই গ্রামে লোকজনের ভিড় দেখা দিতে শুরু করে। কিন্তু এর কাহিনি অন্য।
২০১৫ সালের ঘটনা। এক চিত্রগ্রাহক ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ এই গ্রামে এসে পৌঁছন। তিনি এসে দেখেন, পুরো গ্রাম গাছপালায় ঢাকা। বাড়ির দেওয়াল বেয়ে গাছ বেড়ে উঠেছে। এমনকি, ঘরের ভিতরেও গাছপালা বেড়ে উঠছে। যেন প্রকৃতি এক আস্ত গ্রামকে গিলে ফেলছে।
তিনি এই গ্রামের ছবি তুলে নেটমাধ্যমে পোস্ট করেন। ছবি দেওয়া মাত্রই নেটব্যবহারকারীরা এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন। এই গ্রামে কী ভাবে ঘুরতে যাওয়া যায় তার খোঁজ করতে শুরু করেন অনেকে।
হউতুওয়ান গ্রামে পৌঁছনোই খুব কঠিন। চিনের পূর্ব উপকূলের শেংসান দ্বীপে রয়েছে এই গ্রাম। সাংহাই শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে পৌঁছতে হলে প্রথমে ফেরি করে গাউকি দ্বীপপুঞ্জে যেতে হয়।
তিন ঘণ্টা ফেরিযাত্রা করার পর গাউকি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছলে সেখান থেকে গাড়ি করে যেতে হয় হউতুওয়ান গ্রামে।
শুরুর দিকে এই গ্রাম পর্যটকদের ঘুরতে আসার জন্য যোগ্য না হলেও বিগত কয়েক বছরে এই গ্রামটি আবার নতুন প্রাণ পেয়েছে।
পর্যটকেরা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে যাতে পুরো গ্রাম দেখতে পান তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাথাপিছু তিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায়প্রায় ২৪০ টাকা) টিকিট কেটে এখানে যান পর্যটকেরা।
এ ছাড়াও কেউ এই গ্রাম পায়ে হেঁটে ঘুরতে চাইলে তাঁকে আট ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬৩৫ টাকা) খরচ করে টিকিট কাটতে হয়।
বর্তমানে পর্যটক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ায় হউতুওয়ান গ্রাম ২০১৭ সালে এক লক্ষ আমেরিকান ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৭৯ লক্ষ টাকা) আয় করেছিল।