প্রথম বার দিল্লি পুরনিগমের নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেই কাউন্সিলর হয়েছেন। এ বার দিল্লির মেয়রের আসনেও কি দেখা যাবে শেলি ওবেরয়কে?
শুক্রবার দিল্লির মেয়র পদে শেলির নাম ঘোষণা করেছে আম আদমি পার্টি (আপ)। তার পরই প্রশ্ন উঠছে, প্রথম বারের কাউন্সিলর শেলিই কি দিল্লির প্রথম মহিলা মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হবেন? এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আগামী ৬ জানুয়ারি। ওই দিনই দিল্লির মেয়র নির্বাচন।
প্রথম বার কাউন্সিলর হওয়ার পথে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা শেলির লড়াই সহজ ছিল না। তা-ও আবার বিজেপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত দিল্লির ইস্ট পটেল নগর এলাকার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে ওই ওয়ার্ডে বিজেপির দীপালি কপূরকে হারিয়ে অনেককেই চমকে দিয়েছেন তিনি।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ বছরের এই অধ্যাপকের ডেপুটি হিসাবে আপের পছন্দ পোড়খাওয়া রাজনীতিক তথা ৬ বারের বিধায়ক শোয়ের ইকবালের ছেলে আলে মহম্মদ ইকবাল।
শুক্রবার শেলির পাশাপাশি তাঁর নামও ঘোষণা করেছেন আপ নেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, ডিসেম্বরের গোড়ায় পুরনিগমের ফল প্রকাশিত হতে দেখা গিয়েছে, ১৭ হাজারেও বেশি ভোটে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছেন আলে।
শেলিকে মেয়র পদে মনোনীত করার পর শুক্রবার টুইট করেছেন খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘‘মেয়র এবং ডেপুটি মেয়র পদে আপ প্রার্থী যথাক্রমে শেলি ওবেরয় এবং আলে মহম্মদ খানকে শুভেচ্ছা জানাই।’’
কেজরীর আশা, দিল্লিকে দূষণমুক্ত করার পথে মেয়র হিসাবে সদর্থক ভূমিকা নেবেন শেলি, আলে–সহ পুরনিগমের অন্যান্য আপ নেতা-নেত্রী।
কেজরীর এই আস্থার প্রত্যুত্তরে শুক্রবার টুইট করেছেন শেলিও। তিনি লিখেছেন, ‘‘দিল্লির মেয়র হিসাবে আমাকে মনোনীত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল’জিকে ধন্যবাদ।’’ সেই সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
দিল্লির মেয়র পদের দৌড়ে নেমেই নিজের লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছেন শেলি। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘‘দিল্লিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে করাই আমার লক্ষ্য। দিল্লিকে স্মার্ট সিটি করব আমরা।’’
দিল্লি পুরনিগমে ১৫ বছরের বিজেপির কর্তৃত্ব শেষ করার পর আগামী ৬ জানুয়ারির দিকেই তাকিয়ে আপের কর্মী-সমর্থকেরা। ওই দিন মেয়র পদের জন্য ভোট দেবেন ২৫০ জন নির্বাচিত কাউন্সিলর-সহ দিল্লির ৭টি লোকসভা এবং ৩টি রাজ্যসভার সদস্য। থাকবেন দিল্লি বিধানসভার মনোনীত ১৪ জন বিধায়কও।
কাউন্সিলর হিসাবে চমকপ্রদ জয়ের পর শিরোনামে উঠে এসেছেন শেলি। ইন্ডিয়ান কর্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য শেলি ম্যানেজ়মেন্ট স্টাডিজ়ে পিএইচডি করেছেন ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (ইগনু) থেকে। বিভিন্ন কনফারেন্সের পুরস্কারও জিতেছেন শেলি।
দিল্লি পুরনিগম আইনের ৩৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী, প্রতি বছর মেয়র পদের নির্বাচন হয়। ওই ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘প্রতি বছর পুরনিগমের প্রথম বৈঠকে পুরপ্রতিনিধিরা চেয়ারপার্সনকে (মেয়র) বেছে নিতে হবে। অন্য সদস্য তাঁর ডেপুটি হবেন।’’
যদিও দিল্লি পুরনিগম আইন অনুযায়ী, মেয়র হিসাবে শেলি নির্বাচিত হলে গোড়ায় তাঁর মেয়াদ হবে ৩ মাসের। এর পর আবার ওই পদে নির্বাচন হবে ২০২৩ সালে এপ্রিলে।
শেলির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে পদ্মশিবির থেকে কাকে দেখা যেতে পারে? এ বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও পুরনিগমের দখল হাতছাড়া হওয়ার পর বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় দাবি ছিল, আপ বা বিজেপি, যে কোনও দলের সদস্যই মেয়র হতে পারেন। কে পরবর্তী মেয়র হবেন, তা নির্বাচিত কাউন্সিলররাই ঠিক করবেন। ৩৫ আসনের চণ্ডীগড় পুরভোটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, আপ ওখানে ১৪টি আসন পেলেও বিজেপি কাউন্সিলর মেয়র হয়েছেন।
২৫০ আসনের দিল্লি পুরনিগমে আপ ১৩৪টি আসন দখল করেছে। অন্য দিকে, বিজেপি পেয়েছে ১০৪টি আসন। এই হারের দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন দিল্লিতে বিজেপির প্রধান আদেশ গুপ্ত।
শুক্রবার আদেশ গুপ্তর মন্তব্য, ‘‘পুরনিগমে ভোটদাতাদের মতদান পেয়েছে আপ। সুতরাং তাঁরা তাঁদের মেয়রও পেতে পারেন। আমাদের শুভেচ্ছা রইল।’’