৮,৮৪৮ মিটার। পৃথিবীর স্থলভাগে সবচেয়ে উঁচু স্থানের উচ্চতা এটাই। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ার চেয়ে উঁচু কোনও অংশ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি পৃথিবীতে।
তবে পৃথিবীতে না মিললেও মাউন্ট এভারেস্টের ‘দাদা’র খোঁজ মিলেছে অন্য গ্রহে। পৃথিবীর পড়শি মঙ্গলেই আছে এভারেস্টের চেয়ে অন্তত আড়াই গুণ উঁচু পর্বত।
মঙ্গলের সেই পর্বতের নাম অলিম্পাস মন্স। তবে এটি কোনও সাধারণ পর্বত নয়। এটি একটি আগ্নেয়গিরি। পাহাড়ের মতো শৃঙ্গ নেই অলিম্পাসে। আছে অগ্ন্যুৎপাতের জ্বালামুখ।
শুধু মঙ্গল নয়, সমগ্র সৌরজগতের সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরি এই অলিম্পাস। একসময় নাকি এর চারদিকে জল ছিল। তার নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সত্তরের দশকে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তরফে প্রথম মঙ্গল অভিযানের আয়োজন করা হয়েছিল। একাধিক বার মঙ্গল গ্রহে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল নাসা।
সেই অভিযানের সময়েই ১৯৭১ সালে অলিম্পাস আগ্নেয়গিরির খোঁজ মেলে। নাসার মেরিনার ৯ মহাকাশযানের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল অলিম্পাস। এটি গম্বুজাকৃতি আগ্নেয়গিরি।
অলিম্পাসের উচ্চতা প্রায় ২১.৯ কিলোমিটার। সম্প্রতি, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মার্স এক্সপ্রেসের ক্যামেরায় অলিম্পাসের কিছু অসাধারণ ছবি উঠেছে। সেখানে দেখা গিয়েছে অদ্ভুত দৃশ্য, যা এই আগ্নেয়গিরির অতীতের সাক্ষ্য বহন করে।
মার্স এক্সপ্রেসের ক্যামেরায় অলিম্পাসকে ঘিরে ‘অরিওল’ দেখা গিয়েছে। এই অরিওল হল একপ্রকার উজ্জ্বল আলোর আভা, কোনও বস্তুকে কেন্দ্র করে যা গোল হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
মহাকাশ থেকে অলিম্পাসকে লাল আভায় ছেয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। আগ্নেয়গিরিকে কেন্দ্র করে যার বিস্তৃতি হাজার হাজার কিলোমিটার। এই ‘অরিওল’-এই লুকিয়ে ধ্বংসের কাহিনি।
বিজ্ঞানীদের মতে, কয়েকশো কোটি বছর আগে অলিম্পাসকে কেন্দ্র করে মঙ্গলের মাটি ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল। অলিম্পাসের অগ্ন্যুৎপাতে বিপুল পরিমাণ লাভা নিঃসৃত হয়েছিল। যা ডেকে আনে বিপদ।
প্রচুর লাভা নিঃসরণের ফলে ভূমিধস নামে মঙ্গলে। ধসের দাপটে অলিম্পাসের ভিত নড়ে যায়। খসে পড়তে শুরু করে পাহাড়ের অংশ। আগ্নেয়গিরিটির একাংশ ধসে যায় ওই প্রবল ভূ-আলোড়নে।
মাটির নীচে অলিম্পাসের গভীরে ছিল বরফের আস্তরণ। জ্বলন্ত লাভা সেই বরফ গলিয়ে দেয়। এর ফলে নড়বড় হয়ে পড়েছিল আস্ত আগ্নেয় পর্বতটি। ওই সময় মঙ্গলে ভূমিধস গ্রহের বিস্তীর্ণ এলাকাকে বিপর্যস্ত করেছিল।
বিজ্ঞানীরা জানান, অলিম্পাসের এই ভূমিধস পৃথিবীর হাওয়াই এবং ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের ধসের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। দ্বীপগুলির আশপাশে যেমন জল আছে, তেমন মঙ্গলেও ছিল আস্ত সমুদ্র।
মার্স এক্সপ্রেসের ক্যামেরায় তোলা একটি ছবিতে ইয়েলওয়া ক্রেটারকেও (গর্ত) দেখা গিয়েছে। অলিম্পাস থেকে যার দূরত্ব এক হাজার কিলোমিটার। এই গর্তের গভীরতা আট কিলোমিটার, যা এভারেস্টের প্রায় সমান।
ইয়েলওয়া ক্রেটার অলিম্পাসের ধ্বংসলীলার প্রমাণ দেয়। ওই সময় ধসের ফলে পাহাড়ের চাঁই কত দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিল, তার প্রমাণ হাজার কিলোমিটার দূরের এই গর্ত।
মার্স এক্সপ্রেসের ছবিগুলি মঙ্গলে বিপর্যয়ের চিহ্ন বহন করে। দূর থেকে যা ‘অরিওল’, আসলে তা অলিম্পাসের আশপাশের ধ্বংসস্তূপ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা থিতু হয়ে নতুন ভূমিরূপ তৈরি করেছে।
২০১৪ সালে মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে সফল ভাবে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়েছিল ভারত। ভারতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম চেষ্টাতেই মঙ্গলজয় করে দেখিয়েছে। মঙ্গলের কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠানো চতুর্থ দেশ ভারত।
ভারতের আগে মঙ্গলের কক্ষপথে উপগ্রহ পাঠিয়েছিল রাশিয়ার রসকসমস, আমেরিকার নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। তবে তারা কেউ এক বারের চেষ্টায় এই কাজ করতে পারেনি। ভারতের ‘মঙ্গলযান’ই প্রথম।
পৃথিবীর পড়শি লালগ্রহ সম্পর্কে পৃথিবীর মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। বছরের পর বছর ধরে নানা তথ্য মঙ্গল থেকে সংগ্রহ করেছে ইসরো। অজানা তথ্যের অনুসন্ধান ভারতকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতই প্রথম পা রেখেছে। সফল ভাবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণ করিয়েছে ইসরো। চন্দ্রযান-৩ অভিযানের সাফল্য ন’বছর আগের সেই মঙ্গল অভিযানের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে।