পরনে বোতাম খোলা সাফারি কোট। শরীরে অন্তর্বাসের ছিটেফোঁটাটুকু নেই। পোশাকের আড়াল থেকেই উঁকি দিচ্ছে স্তনযুগল। স্পষ্ট বক্ষবিভাজিকা।
এই পোশাকেই টেলিভিশনের পর্দায় খবর পড়ছেন এক সংবাদ পাঠিকা। পর্দার ও পারে তখন দর্শকসংখ্যাও বিপুল। খবরের দুনিয়ার প্রতিযোগিতার বাজারে আলবেনিয়ার একটি বাণিজ্যিক চ্যানেল ‘জ়ার’ বাকিদের পিছনে ফেলে এই পথেই এখনও পর্যন্ত জনপ্রিয়তার বিচারে নিজেদের শীর্ষস্থানটি ধরে রেখেছে।
আলবেনিয়ার প্রথম টেলিভিশন চালু হয় ১৯৬০ সালে। ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠানের বেশ কিছু চ্যানেল নিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা।
সময় গড়ালে বাড়তে থাকে চ্যানেলের সংখ্যাও। এই ভাবেই নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেয় ‘জ়ার’ নামক একটি চ্যানেল।
এটি একটি বাণিজ্যিক চ্যানেল। সিনেমা, বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খবর সম্প্রচারিত হয়।
ঠিক কবে এই চ্যানেলের শুরু, সেই দিনক্ষণ, তারিখ স্পষ্ট করে কোথাও উল্লেখ নেই।
প্রথম থেকেই বাকিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছিল এই চ্যানেলটি। টিআরপি রেট অন্যদের তুলনায় অনেক কম ছিল।
দর্শকর মন বুঝে অনুষ্ঠানগুলি সাজানোও হয়। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হচ্ছিল না।
এমন একটা সময় আসে যে, চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবা হয়। কারণ চ্যানেলটি চালাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছিলেন কর্তৃপক্ষ, তার এক শতাংশও ঘরে আসছিল না।
বহু পরিকল্পনা, ভাবনাচিন্তা, আলাপ-আলোচনার পরে দর্শক ধরে রাখার একটি উপায় বার করা হয়। যে চমকের জন্য বোধহয় প্রস্তুত ছিলেন না আলবেনিয়ার দর্শকও।
এই চ্যানেলটিতে বাকি অনুষ্ঠানগুলি একেবারেই চলত না। তা-ও খবর দেখার কিছু দর্শক ছিল। এক সন্ধ্যায় সেই খবর দেখতে গিয়েই গুটিকয়েক দর্শকের চোখ আটকে গেল টিভির পর্দায়।
পর্দার ওপারে কমবয়সি সুন্দরী সংবাদ পাঠিকা। ঊর্ধ্বাঙ্গে পোশাক বলতে শুধু বোতাম খোলা কোট। তা-ও অন্তর্বাসহীন।
মুহূর্তে দাবানলের মতো লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। সবার টিভিতে সেই সময় একটি চ্যানেলই চলতে থাকে। শোনা যায়, সে দিন ওই চ্যানেলটি যা ব্যবসা করেছিল, তা এত দিনের আর্থিক ক্ষতির অর্ধেক পূরণ করে দিয়েছিল।
তার পর থেকেই এমন পোশাকেই সংবাদ পাঠ করতে শুরু করেন পাঠিকারা। টিআরপি রেট এক ধাক্কায় শূন্য থেকে আকাশ ছুঁয়ে ফেলে।
চ্যানেলের তরফে আরও বেশ কয়েক জন মহিলা সংবাদ পাঠিকা নিয়োগ করা হয়। তাঁদের সকলেরই পোশাকের ধরন একই রকম।
সেই সময় এই বিষয়টি নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছিল। আলবেনিয়া এমনিতে ভীষণ রক্ষণশীল দেশ। পোশাক-বিতর্ক যত বাড়তে থাকে, ওই চ্যানেলের তত শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে।
সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে চ্যানেলটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠে। কিন্তু চ্যানেলের কর্ণধার ইসমেতের দৃষ্টি সে বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, দর্শক তাঁর সঙ্গে আছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যৌনতা বিক্রি করছি না। শুধু সংবাদ উপস্থাপিকার পোশাকে খানিক বদল এনেছি। নিজেদের ভাষা ছাড়াও একই সঙ্গে ফরাসি এবং ইংরাজি ভাষায় বুলেটিন চালু করার কথাও ভেবেছি।’’
পোশাকে বদল আনার পর থেকে চ্যানেলের জনপ্রিয়তা তো বাড়েই। সেই সঙ্গে রাতারাতি তারকা বনে যান সংবাদ উপস্থাপিকারাও।
২৪ বছর বয়সি গ্রেটা হক্সহাজ। আলবেনিয়ার অন্য একটি টেলিভিশনে পাঁচ বছর কাজ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে বেশ কিছু সমস্যা হওয়ায় ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিয়েছিলেন ‘জ়ার’-এ।
তার পর থেকেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় গ্রেটার। তিনি হয়ে ওঠেন তারকা।
এএফপি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে গ্রেটা বলেছিলেন, ‘‘এখানে আসার আগে অন্য একটি চ্যানেলে পাঁচ বছর চাকরি করেছিলাম। কিন্তু এত দিন সংবাদ পাঠিকার কাজ করেও কেউ আমাকে ঠিক করে চেনেনি। জ়ার-এর সঙ্গে আমার পথচলা মাত্র তিন মাসের। অথচ এর মধ্যেই আমি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছি।’’
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, হোক না ঘুরপথে, তবু সাফল্যকে তো কখনও অস্বীকার করা যাবে না। যে যাই বলুক, আমার কোনও আফসোস নেই।
প্রতি দিন সন্ধে সাড়ে ৭টায় বুলেটিন থাকে গ্রেটার। গোলাপি রঙের বোতামখোলা কোটে মোহময়ী হয়ে দেশকাল, রাজনীতি সংক্রান্ত খবর উপস্থাপন করেন দর্শকের সামনে।
এই বিপুল জনপ্রিয়তার পর গ্রেটার কাছে মোটা মাইনের চাকরির সুযোগ আসতে শুরু করে।
অস্ট্রেলিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘টপলেস’ হয়ে সংবাদ পাঠ করারও প্রস্তাব আসে। কিন্তু গ্রেটা জানিয়েছেন এ ব্যাপারে তিনি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
গ্রেটা আসার আগে ওই কাজটি করতেন ২১ বছর বয়সি এনকি ব্রাকাজ। তিনিই প্রথম অন্তর্বাসহীন অবস্থায় খোলা কোট পরে সংবাদ উপস্থাপন করেছিলেন।
সে দিনের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পরিচিতি পেয়েছিলেন। পরে অবশ্য মাইনে মনঃপূত না হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দেন। পরে একটি ফ্যাশন পত্রিকার হয়ে মডেলিং শুরু করেন।