বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝাঁসির বাবিনা রোডে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ‘গ্যাংস্টার’ আতিক আহমেদের পুত্র আসাদ। পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন আসাদের সঙ্গী গুলামও। তার পর থেকেই সরগরম উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি।
লখনউ-এর এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন, মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ‘জ়িরো-টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে যোগী সরকার। এ-ও জানান, উত্তরপ্রদেশে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে এখনও পর্যন্ত ১৮৩ জন অপরাধী নিহত হয়েছে। যার সম্প্রতিতম নিদর্শন আসাদ এবং গুলামের এনকাউন্টারের ঘটনা।
শুধু আসাদের এনকাউন্টার নয়, গত কয়েক বছরে চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশের আরও বেশ কয়েকটি এনকাউন্টারের ঘটনা।
২০২০ সালের ১০ জুলাই। কানপুরে একটি এনকাউন্টারে নিহত হন গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে৷ পুলিশের দাবি ছিল, বিকাশকে উজ্জয়িনী থেকে কানপুরে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি উল্টে যায়। সুযোগ পেয়ে বিকাশ পালানোর চেষ্টা করেন। পরে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় বিকাশের।
এর ঠিক কয়েক দিন পর অর্থাৎ, ২০২০ সালের ২৫ জুলাই পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হন গ্যাংস্টার টিঙ্কু কাপালা। টিঙ্কুর মাথার দাম ১ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল পুলিশ। বারাবাঁকিতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এবং স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের যৌথ অভিযানে তিনি মারা যান।
২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর পুলিশের লখনউয়ের গোমতীনগরে পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় বাংলাদেশি গ্যাংস্টার হামজার।
মতি সিংহ ছিলেন সিদ্ধপুরা থানা এলাকার এক জন কুখ্যাত অপরাধী। সিদ্ধপুরা থানারই এক কনস্টেবলকে খুনের অভিযোগে এবং কাসগঞ্জ থানার এক পুলিশ আধিকারিকের উপর হামলা চালানোর জন্য পুলিশ তাঁকে খুঁজছিল। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাঁর খোঁজ পায়। পুলিশ তাঁর ডেরায় পৌঁছলে দু’পক্ষের মধ্যে গুলির লড়াই শুরু হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন মতি।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে পুলিশের এনকাউন্টারে নিহত হন কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিনোদকুমার সিংহ। বিনোদের উপর অপহরণ এবং তোলাবাজির একাধিক অভিযোগ ছিল। পুলিশ তাঁর মাথার উপর ১ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
২০২২ সালের ২১ মার্চ বারাণসীতে উত্তরপ্রদেশ স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় মণীশ সিংহ ওরফে সোনু। মোনুর মাথায় ২ লক্ষ টাকার পুরস্কার ধার্য ছিল। সোনুর বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, ছিনতাই-সহ মোট ৩২টি মামলা ছিল।
প্রয়াগরাজে উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন আসাদ এবং গুলাম। উমেশ হত্যাকাণ্ডের সময় একটি সিসি ক্যামেরায় ফুটেজে অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁদেরকেও। তার পর থেকেই তাঁরা পলাতক ছিলেন। পুলিশের খাতায় ‘ওয়ান্টেড’ অপরাধীর তালিকাতেও নাম উঠেছিল দু’জনের।
আসাদ ও গোলাম উভয়ের মাথায় দাম ৫ লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছিল পুলিশ। ২০২৩-এর ১৩ এপ্রিল ঝাঁসির বাবিনা রোডে পুলিশের এনকাউন্টারে আসাদ এবং তাঁর সঙ্গী গুলামকে লক্ষ্য করে মোট ৪২ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল পুলিশ। সেই গুলিতেই তাঁদের মৃত্যু হয়।
আসাদ এবং গুলামের আগেও উমেশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নাম জড়ানো দুই অভিযুক্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তার পর থেকেই সুর বদলেছেন আতিক। বার বার অভিযোগ করেছিলেন ভুয়ো ‘এনকাউন্টার’ করে পুলিশ তাঁকেও মারতে চাইছে। আর তাঁর এই অভিযোগের মধ্যেই পুলিশের গুলিতে হত তাঁর ছোট পুত্র আসাদ এবং এক সহযোগী গুলাম।
প্রসঙ্গত, উমেশ হত্যাকাণ্ডের পর পরই উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, ‘মাফিয়াকো মিট্টি মে মিলা দেঙ্গে’ (অর্থাৎ মাফিয়াদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেব)। ঘটনাচক্রে, তার পর থেকেই উমেশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তরা একের পর এক পুলিশ এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের আমলে গত ছ’বছরে, ১০,৭১৩ ‘এনকাউন্টার’ হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। যাতে ১৮৩ জন অভিযুক্ত নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪,৯১১ জন। উত্তরপ্রদেশের এনকাউন্টারে যারা নিহত হয়েছেন, তাঁরা সকলেই গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত।
হিসাব বলছে, গত ছয় বছরে উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গড়ে ১৩ দিনে অন্তত এক জন করে অভিযুক্ত নিহত হয়েছেন।
যোগী আদিত্যনাথের ‘ঠোক দো’ শব্দবন্ধ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল এর আগেও। অখিলেশ যাদবও যে সময় অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘‘যোগী কথায় কথায় বলেন, গুলি চালিয়ে দাও। পুলিশও তাঁর ‘ঠোক দো’ নীতি মেনে চলছে। তার জন্যই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।’’
প্রশ্ন উঠেছে, এই সব ‘এনকাউন্টার’ ‘একতরফা হত্যা’ নয় তো? কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং পুলিশ সেই তত্ত্বে মান্যতা দেয়নি। তাদের বক্তব্য, যা হয়েছে, সবই যথাবিহিত বিধি মেনেই।