তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল ৮২ বছরের এক বৃদ্ধাকে। তবে সে উপসর্গের উপশম করাতে গিয়ে জানতে পারলেন, গত ৪০ বছর ধরে তাঁর পেটে রয়েছে একটি আস্ত ‘পাথুরে’ ভ্রূণ।
কলম্বিয়ার ওই বৃদ্ধার পেটে পাথুরে ভ্রূণের সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে শোরগোল পড়েছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। সংবাদমাধ্যমের দাবি, প্রায় ৪ দশক ধরে এর অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না বৃদ্ধার।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ওই বৃদ্ধার তলপেটের এক্স-রে করানো হলে তাতে ধরা পড়ে ‘লিথোপেডিওন’ হয়েছে তাঁর। চিকিৎসকদের পরিভাষায় যা অতি বিরল ঘটনা। একে ‘স্টোন বেবি’ও বলেন তাঁরা।
চিকিৎসকদের কাছে বৃদ্ধা জানিয়েছিলেন, পাকস্থলীতে কিছু সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয়েছিল তাঁর। তবে এক্স রে রিপোর্ট দেখে হতবাক হয়ে যান তিনি। বৃদ্ধার তলপেটে অস্ত্রোপচার করে ওই ভ্রূণটি বার করার তোড়জো়ড় শুরু করে দেন তাঁরা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা অতি বিরল বলে জানিয়েছিলেন ক্লিভল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি হসপিটালস কেস মেডিক্যাল সেন্টারের চিকি়ৎসক কিম গার্কসি।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ‘এবিসি নিউজ়’-এর কাছে গার্কসি জানিয়েছিলেন, ওই বৃদ্ধার পেটে ‘স্টোন বেবি’ ধরা পড়ার আগে সারা বিশ্বে মাত্র ৩০০ বার এমনটা দেখা গিয়েছে।
চিকিৎসকদের দাবি, মাত্র ০.০০৫৪ শতাংশের ক্ষেত্রে গর্ভের বাইরে ভ্রূণের জন্ম হয়ে তা পাথরে পরিণত হয় বা ‘লিথোপেডিওন’ ধরা পড়ে।
একটি রিপোর্টের দাবি, গর্ভের বাইরে ভ্রূণের জন্মের পর তা ‘লিথোপেডিওন’-এ পরিণত হওয়ার ঘটনা ১.৫ থেকে ১.৮ শতাংশের মধ্যে ধরা পড়েছে।
গার্কসি ওই বৃদ্ধার চিকিৎসা করেননি। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, জরায়ুর পরিবর্তে তলপেটে ভ্রূণের অবস্থান হলে তা ‘লিথোপেডিওন’-এ পরিণত হতে পারে। ওই ভ্রূণটিতে পর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চার না হওয়ায় তা গর্ভেই নষ্ট হয়ে যায়। তবে সাধারণত সেটি তলপেটেই থেকে যায়।
এই অবস্থার জেরে ভ্রূণটি ‘পাথরে’ পরিণত হয়। চিকিৎসকদের মতে, আসলে ওই ভ্রূণের উপর ক্যালশিয়ামের পরত জমতে থাকে। তাতেই মৃত ভ্রূণটি শক্ত হতে শুরু করে।
গার্কসি জানিয়েছিলেন, বাইরের কোনও বস্তু দেহের ভিতরে ঢুকলে আমাদের রক্ষাকর্তা হয়ে ওঠে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শরীরকে সুস্থসবল রাখতে ক্রমাগত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ওই একই ভাবে মৃত ভ্রূণটিকে ‘পাথরে’ পরিণত করে বৃদ্ধাকে রক্ষা করছিল তাঁর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করেছিলেন গার্কসি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘হাঁটুর তরুণাস্থি পুরনো হয়ে গেলে তাতে ক্যালসিয়াম জমতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ সে ভাবেই টিস্যুগুলিকে ক্ষয় থেকে বাঁচানো যায়।’’
ওই একই ভাবে ভ্রূণের উপর ক্যালসিয়ামের পরত জমতে থাকায় দশকের পর দশক ধরে নিজের তলপেটে ‘স্টোন বেবি’র অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছুই বুঝতে পারেননি বৃদ্ধা।
কলম্বিয়ার ওই বৃদ্ধার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার আগে ২০০৯ সালে এ ধরনের ঘটনার কথা জানিয়েছিল আমেরিকার সংবাদমাধ্যম। ওই বছর দক্ষিণ চিনের ৯২ বছরের এক মহিলার পেট থেকে ৬০ বছরের একটি মৃত ভ্রূণ অস্ত্রোপচার করে বার করা হয়েছিল।
এমনই আর একটি ঘটনার কথা শোনা গিয়েছিল ২০১৫ সালে। সে বার চিলির লা বোকা শহরের ৯১ বছরের এক বৃদ্ধার ধারণাই ছিল না যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পেটে একটি মৃত ভ্রূণ বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
চিকিৎসকদের দাবি, ৬৮ বছরের এক ফরাসি মহিলার দেহে ‘লিথোপেডিওন’-এর কেস প্রথম বার প্রকাশ্যে এসেছিল। ১৫৮২ সালে তাঁর দেহের ময়নাতদন্তে জানা যায়, ২৮ বছর ধরে ‘স্টোন বেবি’ রয়েছে তাঁর তলপেটে।
গার্কসি বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের মহিলাদের শরীরের ‘লিথোপেডিওন’ হওয়ার কোনও উপসর্গ ধরা পড়ে না। ফলে এ নিয়ে কিছু করার থাকে না তাঁদের।’’
১০,০০০ অন্তঃসত্ত্বার মধ্যে ১ জনের এই ‘অস্বাভাবিক’ অবস্থা হয় বলে মত চিকিৎসকদের। যদিও গার্কসির দাবি, অন্তঃসত্ত্বাদের মধ্যে এই অবস্থাকে সহজেই চিহ্নিত করতে সক্ষম আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র।