নতুন বছরের গোড়া থেকেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত জাপান। নোটো উপদ্বীপ অঞ্চলে তীব্র ভূমিকম্পের জন্য কার্যত থমকে গিয়েছে জাপানের একাংশের জীবনযাত্রা।
রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৭.৫। ২১৩ জন প্রাণ হারান সেই বিপর্যয়ে। ২৬ হাজার মানুষের ঠাঁই হয়েছিল আশ্রয় শিবিরে।
অন্তত ৬০ হাজার ঘরে জল নেই, ১৫ হাজার পরিবার বিদ্যুৎহীন। এ পর্যন্ত জানা ছিল। কিন্তু তার পরেও বিপর্যয়ের আরও খবর আসতে শুরু করে।
পরে যা জানা গেল, তা বেশ চমকে যাওয়ার মতো বিষয়। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সে দিনের কম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, সমুদ্র পিছিয়ে গিয়েছে। সমুদ্র ঘেঁষে জেগে উঠেছে ২৫০ মিটার (প্রায় ৮০০ ফুট) স্থলভাগ।
সে জমি এতটাই বড় যে, দু-দুটো ফুটবল মাঠ ধরে যেতে পারে। এর ফলে সমুদ্র বন্দরের জল শুকিয়ে যায়। উপগ্রহচিত্রে ধরা পড়েছে সেই দৃশ্য।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ভূমিকম্পের জেরে উপকূল থেকে সমুদ্র সরে গিয়েছে।
ফ্রান্সের নাহেল বেলগারজ়ে নামক এক ব্য়ক্তি (তিনি ভূ-পর্যবেক্ষক, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিপর্যয় পর্যবেক্ষণ করেন) প্রথম ৪ জানুয়ারি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘‘জাপানের নোটো উপদ্বীপে সোমবার ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, উপকূলবর্তী অঞ্চলে ২৫০ মিটার জমি জেগে উঠেছে।’’
তিনি নোটো উপদ্বীপের ভূমিকম্পের আগের ও পরের ছবিও শেয়ার করেন সমাজমাধ্যমে।
টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, নোটো উপদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে অনুসন্ধানে নেমে অন্তত ১০টি স্থানে তাঁরা জমি জেগে ওঠার (কোস্টাল আপলিফ্ট) প্রমাণ পেয়েছেন।
‘জাপান এরোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি’-র বিশেষ কৃত্রিম উপগ্রহ ‘অ্যাডভান্সড ল্যান্ড অবজ়ারভিং স্যাটেলাইট-২’-এর পাঠানো ছবিতেও বিষয়টি ধরা পড়েছে।
সে দেশের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের তরফে সেই সময় জানানো হয়েছিল যে, সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মৃদু এবং মাঝারি মাত্রার কম্পনে ১৫৫ বার কেঁপে উঠেছে জাপান।
এগুলির মধ্যে রিখটার স্কেলে কম্পনের সর্বোচ্চ যে মাত্রা ধরা পড়েছে, তা হল ৭.৬। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কম্পনের মাত্রা ৬। অন্য কম্পনগুলির অধিকাংশেরই মাত্রা ৩ বা তারও কম। তবে এগুলি কম্পন, না কি ভূকম্প পরবর্তী কম্পন (আফটারশক), তা নিয়ে নানা মত রয়েছে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যেই।
সূত্র অনুযায়ী, জাপানের মূল ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল হোনসু দ্বীপের ইশিকাওয়া। যার মাত্রা ছিল ৭.৫।
নতুন বছরের পয়লা তারিখ দুপুর ১টা নাগাদ এই কম্পনেই প্রথম কেঁপে ওঠে জাপান। ভূমিকম্পের পরেই জাপানের বেশ কয়েকটি উপকূল এলাকায় সুনামির সতর্কতা জারি হয়।
আশঙ্কাকে সত্যি করে সে দেশের পশ্চিম উপকূল সংলগ্ন একাধিক শহরে ফুঁসে ওঠে সমুদ্র। কোথাও কোথাও ঢেউয়ের উচ্চতা ১৪ ফুট পর্যন্ত ওঠে।