প্রেমের আবার বয়স হয় নাকি! মনে প্রজাপতি পাখনা মেললে যে কেউ যে কোনও বয়সেই ভালবাসার বাঁধনে নিজেকে জড়াতে পারেন। ঠিক যেমনটা হয়েছে ৮৫ বছরের বৃদ্ধ চার্লস পোগের। জীবনপথে বার্ধক্য তাঁকে ছুঁলেও, তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি। আর সেই কারণেই তো ৮৫ বছরের বৃদ্ধের মনটা একেবারে তরতাজা। সেই মনের টানেই বৃদ্ধ বয়সে প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়েছেন তিনি। নাতনির বয়সি এক তরুণীর সঙ্গে ঘটা করে বিয়ে করেছেন।
২৪ বছরের মিরাকেল পোগের সঙ্গে ৮৫ বছরের চার্লসের এ হেন প্রেমকাহিনি বেশ আলোচিত হয়েছে। কেউ এই অসমবয়সি প্রেমের কথা শুনে চোখ বড় বড় করেছেন। আবার কেউ এমন প্রেমের গল্পে মজেছেন।
তবে, নিন্দকরা যা-ই বলুন না কেন, তাতে ওই যুগলের কিছু যায়-আসে না। তাঁরা চুটিয়ে সংসার করছেন।
ঘটনাটি মিসিসিপির স্টার্কভিলের। ২০১৯ সালে একটি লন্ড্রিতে চার্লসের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল মিরাকেলের।
সেই সাক্ষাতের অল্প দিনের মধ্যেই তাঁদের মধ্যে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে যায়। বন্ধুত্ব থেকেই ধীরে ধীরে শুরু হয় প্রেমপর্ব।
রিয়েল এস্টেট এজেন্ট হিসাবে অতীতে কর্মরত ছিলেন চার্লস। আর মিরাকেল পেশায় নার্স। ২০১৯ সালে প্রথম দেখা। তার পর বন্ধুত্ব এবং একে অপরের আরও কাছে আসা। মনের কথা একে অপরকে বলতে তাঁরা কেউই দেরি করেননি।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিরাকেলকে প্রেম নিবেদন করেন চার্লস। প্রস্তাব দেন বিয়েরও। তাতে রাজিও হয়েছিলেন মিরাকেল। কারণ মনে মনে চার্লসকে তত দিনে ভালবেসে ফেলেছিলেন ওই তরুণী।
তবে ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে সংসার পাতা তো চাট্টিখানি কথা নয়। পরিবারকে রাজি করানোটাও চ্যালেঞ্জ ছিল মিরাকেলের কাছে।
মা তামিকা ফিলিপস এবং দাদু জো ব্রাউনকে পাশে পেয়েছিলেন মিরাকেল। চার্লসের সঙ্গে মিরাকেলের সম্পর্ক তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন। মিরাকেলের দাদুও চার্লসের থেকে ছোট। তাঁর দাদুর বয়স ৭২।
মা, দাদুকে রাজি করাতে পারলেও বাবা কারিম ফিলিপ্স মেয়ের এই সম্পর্ককে মানতে পারেননি। তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন। বাবাকে রাজি করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল মিরাকেলকে।
এই নিয়ে বাবা এবং কন্যার মধ্যে দীর্ঘ মান-অভিমান পর্ব চলে। তবে চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁকে জামাই হিসাবে সাদরে গ্রহণ করে নেন মিরাকেলের বাবা।
এর পরই বিয়ের আসর বসে। গত বছরের জুলাই মাসে চার হাত এক হয় মিরাকেল এবং চার্লসের।
বিয়ের দিন সাদা রঙের গাউনে কনের সাজে মিরাকেলকে দেখে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন চার্লস। একে অপরকে কেকও খাওয়ান তাঁরা।
বিয়ের দিন যে কারও কাছেই বিশেষ দিন। ব্যতিক্রম নয় মিরাকেলের ক্ষেত্রেও। তাঁর কথায়, ‘‘আমার জীবনের সবচেয়ে ভাল দিন ওটা।’’
বিয়ের পর গুছিয়ে সংসার করছেন মিরাকেল এবং চার্লস। মা হতে চান মিরাকেল। সেই সঙ্গে চার্লসকেও তিনি পিতৃত্বের স্বাদ দিতে চান।
কিন্তু চার্লসের যা বয়স, তাতে দম্পতির সন্তানলাভ মুশকিল। আর সেই কারণেই আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানধারণের পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
এই অসমবয়সি প্রেম নিয়ে কম কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হয়নি মিরাকেলকে। এই নিয়ে সমাজমাধ্যমে ‘ট্রোলড’ হতে হয়েছে তাঁকে। তবে তাতে ‘কুছ পরোয়া নেহি’ মিরাকেলের।
মিরাকেলের কথায়, ‘‘ওর (চার্লস) বয়স ১০০ হোক কিংবা ৫৫, আমার কিছু যায়-আসে না। আমি শুধু ওকে ভালবাসি। পছন্দ করি।’’
অনেকেই চার্লস এবং মিরাকেলকে দেখে বাবা-কন্যা ভাবেন। তবে এ সব নিয়ে একদমই মাথা ঘামান না মিরাকেল।
কেউ আবার এমন কটাক্ষও করেছেন যে, টাকার জন্যই চার্লসের সঙ্গে সংসার পেতেছেন মিরাকেল। এর পাল্টা জবাবও দিয়েছেন তরুণী। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনিও চাকরি করেন। তাঁর নিজের টাকা রয়েছে। যতই নিন্দা, সমালোচনা হোক, সব কিছুকে সরিয়ে চার্লসের হাত ধরে ভালবাসার ঘর বানিয়েছেন মিরাকেল।