কোটি কোটি বছর আগে আচমকাই উধাও হয়ে গিয়েছিল গোটা জঙ্গল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২ কোটি ২০ লক্ষ বছর আগে সেই ঘটনা হয়েছিল। আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের কারণেই তা ঘটেছিল। আবার হদিস মিলল সেই বনভূমির।
পানামা খাল অঞ্চল থেকে আবিষ্কার করা হয়েছে সেই বনভূমির একাংশ। স্মিথসোনিয়ান ট্রপিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক দল সেই বনভূমির হদিস পেয়েছে বারো কলোরাডো দ্বীপে। দলটি গবেষণা করে দেখেছে, সেখানে যে জীবাশ্ম মিলেছে, তার অস্তিত্ব আজকের পৃথিবীতে আর নেই।
বারো কলোরাডো দ্বীপে সেই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের যখন প্রথম দেখা পান বিজ্ঞানীরা, তখন বেশ চমকেই গিয়েছিলেন। বর্তমানের সঙ্গে কোনও মিল নেই। তাঁদের মনে হয়েছিল, যেন অতীতে চলে গিয়েছেন তাঁরা।
জঙ্গলের ভূপ্রকৃতি বিজ্ঞানীদের নিয়ে গিয়েছিল ২ কোটি ৩০ লক্ষ বছর আগে। সে সময় দক্ষিণ আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান পাত পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল। তারই ফল বর্তমানের পানামা এবং মধ্য আমেরিকার ভূমিরূপ।
দুই পাতের ধাক্কার কারণে ভূমিরূপে বড়সড় পরিবর্তন এসেছিল। ছোট টিলাগুলো পরিণত হয়েছিল পাহাড়ে। আড়েবহরে বৃদ্ধি পেয়েছিল দ্বীপও।
এখন পানামার সেই জঙ্গলে রয়েছে দৈত্যাকৃতি গাছ। এক-একটির দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট। গভীর এই অরণ্যের মাটি নিয়ে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মাটি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, এককালে এই জঙ্গলেই ছিল ম্যানগ্রোভ জাতীয় অরণ্য। অতীতে এখানে মিষ্টি জল এবং নোনা জলের সংমিশ্রণ ঘটেছিল। সে কারণেই জীবজগতে অদ্ভুত বৈচিত্র লক্ষ করেন বিজ্ঞানীরা।
অতীতে সেখানে ছিল শুধুই ম্যানগ্রোভ। অন্য কোনও উদ্ভিদ সেখানে জন্মাত না। এর পর দুই পাতের সংঘর্ষ হয়। তার জেরে বদলাতে থাকে ভূমিরূপ। এই অঞ্চলে ঢুকে পড়ে মিষ্টি জল।
বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, ম্যানগ্রোভ গাছ মরে গিয়ে বা পচে গিয়ে এমন হতে পারে। তবে আসল কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, আরও বেশি করে অক্সিজেন পেতেই উদ্ভিদগুলি ক্রমে দীর্ঘ হয়েছে। সেই দীর্ঘ গাছই এখন দেখা যায় কলোরাডোর ওই দ্বীপে।
ওই বনভূমি থেকে প্রায় ১২১টি কাঠের টুকরো সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, সেগুলি সবই ম্যানগ্রোভ গাছ। সুন্দরবন-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ধরনের গাছের ‘আত্মীয়ের’ সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কলোরাডো দ্বীপের ওই অংশ থেকে অন্য কোনও শ্রেণির উদ্ভিদের জীবাশ্ম মেলেনি। মনে করা হচ্ছে, ওই অংশে কোটি কোটি বছর আগে রাজত্ব ছিল ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের।
জীবাশ্ম দেখে বিজ্ঞানীরা আরও মনে করছেন, অগ্ন্যুৎপাতের কারণেই ওই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মৃত্যু হয়েছিল। আগ্নেয়গিরি থেকে নেমে এসেছিল ফুটন্ত লাভা। তাতেই চাপা পড়েছিল গাছের সারি।
লাভা শুকিয়ে যাওয়ার পর ওই অঞ্চলে গাছ এবং জীবজগতের উপর ‘কংক্রিটের আবরণ’ তৈরি হয়। তার নীচে ক্রমে পচতে থাকে জীবজগৎ। তার উপর ক্রমে জমতে থাকে পলি। জন্মায় গাছ। অবশেষে কোটি বছর পর সেখানে সেই পুরনো জঙ্গলের হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা।