পৃথিবীর তিন ভাগ জল এবং এক ভাগ স্থল। এই তিন-একের নম্বরে বাঁধলেও সাগর-মহাসাগরের এই বিস্তৃত জলরাশির ৯৫ শতাংশই অজানা। বছরের পর বছর ধরে সমুদ্রের তলায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়েছে। কখনও অজানা সামুদ্রিক প্রাণীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, কখনও বা ফুটে উঠেছে কোনও ইতিহাস।
সমুদ্রের অতলে ডুব দিয়েই সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এক পর্বতমালার। যার বয়স দু’কোটি বছর!
কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিএসআইআরও) তরফে সমুদ্রের তলায় একটি অনুসন্ধানকারী দল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
আন্টার্কটিকা এবং তাসমানিয়া এলাকার মধ্যবর্তী ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ‘ভেসেল ইনভেস্টিগেটর’-এর মাধ্যমে সন্ধান চালানো হয়।
সিএসআইআরও-এর তরফে ‘হাই রেজ়োলিউশন ম্যাপিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে দক্ষিণ মহাসাগরে অনুসন্ধান চালানো হয়। মহাসাগরের যে অংশে ‘আন্টার্কটিক সারকামপোল কারেন্ট’ নামে যে তীব্র গতির স্রোত বয়ে যায়, সেখানেই অতলে সন্ধান চালিয়েছে সিএসআইআরও।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে প্রকাশ, দক্ষিণ মহাসাগরের নির্দিষ্ট একটি এলাকায় চার হাজার মিটার গভীরে আটটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির অস্তিত্বের প্রমাণ আগেই পাওয়া গিয়েছিল।
সমুদ্রের তলায় আটটি আগ্নেয়গিরির মধ্যে চারটি আগ্নেয়গিরি সম্প্রতি আবিষ্কার করেছে সিএসআইআরও। কোনও কোনও আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ১৫০০ মিটারের কাছাকাছি।
সিএসআইআরও-এর ভূতত্ত্ববিদ ক্রিস ইউলে চারটি আগ্নেয়গিরির সন্ধান পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। চ্যুতিরেখা বরাবর চারটি আগ্নেয়গিরির গুরুত্ব এবং সেগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাও ভাগ করে নেন তিনি।
ম্যাককুয়েরি দ্বীপ থেকে ৩৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে ম্যাককুয়েরি রিজের কাছে আগ্নেয়গিরিগুলির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে জানান ক্রিস। গত দু’কোটি বছর ধরে ম্যাগমা সঞ্চয় হয়েছে এই অঞ্চলে।
সিএসআইআরও-এর তরফে এই যাত্রার নাম রাখা হয়েছে ‘ফোকাস’। ‘সারফেস ওয়াটার অ্যান্ড ওশন টপোগ্রাফি (এসডব্লিউওটি)’ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমুদ্রের ম্যাপিং খুব সহজে ধরা পড়ে।
‘ফোকাস’-এর বিজ্ঞানী বেনোইট লেগ্রেসি জানান যে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তার প্রভাব পড়ে সমুদ্রে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে যে পরিমাণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, তা সমুদ্রের গভীরেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সমুদ্রের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সমুদ্রের তলায় যে আগ্নেয়গিরিগুলির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তা থেকে সমুদ্রস্রোতের গতি থেকে সামুদ্রিক পরিবেশের উপর কী প্রভাব পড়বে তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
দু’কোটি বছর পুরনো পর্বতমালার উপর যে আগ্নেয়গিরিগুলি রয়েছে, সেগুলি আদৌ কোনও দিন ফাটবে না কি আজীবন সুপ্ত অবস্থায় থাকবে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।