• গত আর্থিক বছরে শেয়ার বাজারে চূড়ান্ত দোলাচল ছিল। বাজার ভাল ছিল না মিউচুয়াল ফান্ডেরও। এখন এই বছরও শেষের মুখে। কী মনে হয়, ফান্ড শিল্পের হাল কিছুটা হলেও ফিরেছে?
অবশ্যই। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরের পরে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়া আটকাতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বলতে পারেন, তখন থেকেই শেয়ার বাজারের হাল ফেরার ইঙ্গিত পেয়েছিলাম আমি। সেই ইঙ্গিত সত্যি হতে শুরু করল শীর্ষ ব্যাঙ্কের ওই সমস্ত ব্যবস্থার দৌলতে টাকার দর বাড়তে শুরু করার পর। একই সঙ্গে তখন বদলাতে শুরু করল বাণিজ্য ঘাটতির মলিন ছবি। উন্নতির ঝলক ধরা পড়তে শুরু করল সেখানেও। আর তার পরে বাজারের পালে জোর হাওয়া লাগল কেন্দ্রে নতুন সরকার আসার পর।
• স্থায়ী সরকার...
হ্যাঁ, অবশ্যই। যে সরকারকে প্রতি পায়ে জোট শরিকদের উপর নির্ভর করতে হবে না। যারা চাইলে দ্রুত এগোতে পারবে আর্থিক সংস্কারের পথে।
দেখুন, আমি মনে করি, কেন্দ্রে এত বছর পরে স্থায়ী সরকার তৈরি হওয়ার দিন থেকেই উন্নতির কক্ষপথে ফের ঢুকে পড়েছে ভারত। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের তরফ থেকে সংস্কারের যে সব ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, তাতে আগামী চার-পাঁচ বছরে দেশের অবস্থা যে আমূল বদলে যাবে, তা নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। সেই পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে দেশের শিল্প ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির আয়ও উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে। এ দেশে আরও বেশি করে টাকা ঢালতে আগ্রহী হবেন বিদেশি লগ্নিকারীরাও।
• এই পরিস্থিতিতে সাধারণ লগ্নিকারীদের প্রতি আপনার পরামর্শ?
সত্যি কথাটা গোড়াতেই স্পষ্ট করে বলা ভাল। তা হল, মূলধনী বাজারে ভাল রিটার্নের নৌকা চড়ে দু’পয়সা করতে হলে, শেয়ারে লগ্নি করতেই হবে। সেখানে ঝুঁকি বেশি ঠিকই। তা মাথায় রেখেও বলছি, চোখে পড়ার মতো রিটার্নের বা মুনাফার মুখ দেখতে এর থেকে ভাল বিকল্প খুঁজে পাওয়া কিন্তু বেশ শক্ত।
আর আমি মনে করি, শেয়ারে টাকা ঢালার এটিই উপযুক্ত সময়। তাই আমি বলব, যাঁরা ইতিমধ্যেই শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরা তার পরিমাণ বাড়ান। আর যাঁরা এখনও শেয়ারে লগ্নি শুরুই করেননি, তাঁরা অবিলম্বে তা আরম্ভ করুন।
• কিন্তু অনেকে ভাবেন শেয়ারে টাকা ঢালা মানেই রাতারাতি বড়লোক বনে যাওয়া।
একেবারে তা-ই। এটা একটা মস্ত ভুল ধারণা। এ বিষয়ে আমি লগ্নিকারীদের একটি কথা বিশেষ ভাবে বলতে চাই। তা হল, শেয়ারে টাকা ঢেলেই মুনাফার জন্য ছটফট করবেন না। ভাববেন না যে, দু’দিনেই লাভের কড়ি ঘরে তুলবেন। বরং তার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
লগ্নির পরে দাম সামান্য বাড়লেই তাড়াহুড়ো করে শেয়ার বেচবেন না। যদি সত্যিই ভাল রিটার্ন চান, তাহলে ৫-১০ বছরের জন্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা করুন। মনে রাখবেন, ভারতের শেয়ার বাজার গত ১০ বছর ধরে গড়ে ২৩% করে রিটার্ন দিয়েছে। তাই দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে লগ্নিই ভাল রিটার্ন পাওয়ার একমাত্র উপায়।
• কিন্তু আপনি সত্যিই মনে করেন লগ্নিকারীরা এখনও দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে শেয়ার বাজারের উপর আস্থা রাখবেন? বিশেষত যেখানে আবাসনে (ফ্ল্যাট বা বাড়ির মতো রিয়েল এস্টেট) লগ্নির টাকা দ্রুত বাড়িয়ে নেওয়ার হাতছানি রয়েছে?
মনে রাখবেন, আবাসন শিল্পেও এখন সেই তেজী ভাব আর নেই। বরং কিছুটা ভাটার টান। আশা করি ভুলে জাননি যে, ২০০৮ সালে বিশ্বজোড়া মন্দার সময়ে ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনার লোক ছিল না। ফলে অনেক ফ্ল্যাট ও বাড়ি অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে ছিল। এবং মজার কথা হল, সাধারণত লগ্নিকারীরা বাড়ির দাম পড়ে গেলেও তা চটজলদি বিক্রির রাস্তায় হাঁটেন না। অথচ দেশের আর্থিক অবস্থার হাল সামান্য একটু খারাপ হলে আতঙ্কে প্রথমেই শেয়ার বেচতে শুরু করেন। গত এক দশক জুড়ে শেয়ার বাজার গড়ে ২৩% রিটার্ন দেওয়া সত্ত্বেও।
• ফান্ডে লগ্নির মাধ্যম হিসেবে এখন এসআইপি-র (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) জনপ্রিয়তা কতটা? অনেকেই কিন্তু এসআইপি বন্ধ করে লগ্নির টাকা তুলে নিচ্ছেন।
ঠিকই বলেছেন। তবে সেটা কয়েক মাস আগের ঘটনা। এখন ছবি পাল্টাচ্ছে। অনেক লগ্নিকারী যেমন এসআইপি বন্ধ করে দিয়েছেন, তেমনই নতুন করে তা চালুও করেছেন বহু বিনিয়োগকারী। আর এখন তো প্রতি মাসেই এসআইপি-র সংখ্যা বাড়ছে। অন্তত আমাদের সংস্থায় তা-ই দেখছি। সার্বিক ভাবেও লগ্নির পথ হিসেবে এসআইপি ক্রমশ জনপ্রিয় হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
• আর মেয়াদ?
এ ক্ষেত্রেও আমার অভিজ্ঞতা হল, অধিকাংশ লগ্নিকারীই ১ থেকে ৩ বছরের মেয়াদে এসআইপি করেন। খুব কম জনই বড় মেয়াদের জন্য বা ‘পার্পিচুয়াল এসআইপি’ করেন। কিন্তু আমি মনে করি, ভাল রিটার্ন পেতে এখানেও দীর্ঘ মেয়াদে টাকা ঢালা একান্ত জরুরি। তাই আমার মতে, পার্পিচুয়াল এসআইপি করুন। বাড়ি কেনা বা অন্য কোনও জরুরি প্রয়োজনে এসআইপি থেকে টাকা তুলুন। কিন্তু এসআইপি-টিকে বন্ধ করবেন না। এতে প্রয়োজনের সময় টাকার ব্যবস্থাও হল, আবার দীর্ঘ মেয়াদে ফান্ডে আপনার লগ্নি রইল। আবার এসআইপি বজায় থাকায় ফস্কে গেল না ভাল রিটার্ন ঘরে তোলার সুযোগও।
• ফান্ডে লগ্নির ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে। আগামী দিনে ক্রমশ তা আরও বাড়বে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলি কি ওই সব মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিতে তৈরি?
নিশ্চয়ই। মনে রাখবেন, মিউচুয়াল ফান্ড তৈরিই হয়েছে লগ্নিকারীদের উন্নত মানের পরিষেবা দিতে। এ জন্য আমাদের যে পরিকাঠামো রয়েছে, লেনদেন সেই অনুপাতে না-বাড়ায় তার অনেকটাই বরং অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। যদিও বছরখানেক ধরে লেনদেনের পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী।