যে কোনও ব্যক্তির জীবনেই বিমার গুরুত্ব অপরিসীম। করোনা মহামারির জেরে এই বিমার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তবে বিমা করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। যেমন বিমার কভারেজ, প্রিমিয়াম বা কিস্তির পরিমাণ, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি। তাই এই ক্ষেত্রে অন্যান্য বিমা প্রতিষ্ঠানের দিকে না তাকিয়ে চোখ বুজে ভরসা রাখতে পারেন এলআইসিকে।
প্রথমত, কর ছাড়। দ্বিতীয়ত, ভাল রিটার্ন। এই দুই কারণেই এলআইসিকে বিনিয়োগের জন্য বেশ ভাল মাধ্যম হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তা ছাড়াও পাল্টে যাওয়া সময়ের কথা মাথায় রেখেই এলআইসি বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যান নিয়ে এসেছে। যেখানে বিনিয়োগকারীকে বিমার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য একটি তহবিল তৈরির সুবিধাও দেওয়া হয়।
অর্থাৎ শুধু বিমাই নয়, সঞ্চয়ের অঙ্কেও বেশ ভাল রিটার্ন দেয় জীবনবিমা। এই পলিসিটির নাম জীবন লাভ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এলআইসির সব থেকে বেশি বিক্রিত পলিসিগুলির মধ্যে জীবন লাভ অন্যতম। এই পলিসি বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। কর ছা়ড়ের সুবিধাও রয়েছে এই পলিসিতে।
এলআইসির জীবন লাভ পলিসিতে ন্যূনতম বিমার পরিমাণ হল দু’লক্ষ টাকা। বিনিয়োগকারীরা ১৬ বছর থেকে ২৫ বছরের সময়সীমার মধ্যে একটি পলিসি নিজেদের পছন্দ মতো বেছে নিতে পারবেন। তা ছাড়াও বিনিয়োগকারীরা কিস্তির প্রদানের মেয়াদও নিজেরা বেছে নিতে পারবেন। যা মূলত ১০ বছর ১৬ বছরের মধ্যে হতে পারে।
এলআইসি জীবন লাভ প্ল্যানে বিনিয়োগের ন্যূনতম বয়স আট বছর এবং সর্বোচ্চ বয়স ৫৯ বছর। এই ক্ষেত্রে বিমা সংস্থা বিনিয়োগকারীদের মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মার্ষিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতে নিয়মিত ভাবে প্রিমিয়াম প্রদানের সুযোগ দিয়ে থাকে।
পলিসি চলাকালীন এলআইসি জীবন লাভ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা কোনও বিনিয়োগকারীর অকালমৃত্যু হলে নমিনিকে বিমার অর্থ প্রদান করা হবে। আর পলিসির মেয়াদপূর্তিতে বিনিয়োগকারী ব্যক্তি জীবিত থাকলে এক সঙ্গে মোট টাকা পাবেন তিনি।
এই বিমা থেকে কোনও বিনিয়োগকারী মোটা টাকা পেতে পারেন। অঙ্কের হিসেবে যদি কোনও বিনিয়োগকারী এলআইসি-র জীবন লাভ পলিসিতে ২০ বছর বয়স থেকে বিনিয়োগ করা শুরু করেন এবং তার পরে আগামী ১৬ বছর ধরে তিনি যদি প্রতি দিন ২৫১.৭০ টাকা দেন, তা হলে ২৫ বছর পরে পলিসির মেয়াদপূর্তির সময়ে ওই বিনিয়োগকারী এক সঙ্গে ২০ লক্ষ টাকা পাবেন।
জীবন লাভ পলিসি থেকে ঋণ নেওয়ার সুবিধাও রয়েছে। পলিসি শুরু হওয়ার প্রথম তিন বছর পর থেকে বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্টে জমা অর্থের ওপর ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী। এ ছাড়া বিমার কিস্তির উপরে রয়েছে আয়কর ছাড়। কোনও কারণে পলিসি হোল্ডারের মৃত্যু হলে নমিনি পাবেন বিমার নিশ্চিত অর্থ ও বোনাস।
এই জীবন লাভ পলিসিতে বিনিয়োগকারী যে সুযোগ সুবিধাগুলি পেতে পারেন সেগুলি হল, ডেথ বেনিফিট, ম্যাচুরিটি বেনিফিট, ট্যাক্স বেনিফিট, লোন, রিবেট, লাভের অংশ অর্থাৎ সারেন্ডার ভ্যালু।
এলআইসি জীবন লাভ প্ল্যানে মোট দুই ধরনের রাইডার অফার থাকে। একটি হল এলআইসি অ্যাক্সিডেনটাল ডেথ অ্যান্ড ডিজেবিলিটি রাইডার। যেটি নেওয়ার জন্য বিনিয়োগকারীকে সাধারণ প্রিমিয়ামের থেকে সামান্য কিছু অতিরিক্ত টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে দিতে হবে। এই রাইডার ১৮ বছর বয়স থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত জন্য নেওয়া যাবে। এটি পলিসি কভারেজের সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর পরিবারকে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করে। শারীরিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে, ১০ বছরের মধ্যে সমান ১০টি কিস্তিতে অ্যাক্সিডেন্ট বেনিফিট প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয়টি হল এলআইসি টার্ম রাইডার। এ ক্ষেত্রে পলিসি হোল্ডার বা বিনিয়োগকারী ব্যক্তির যদি অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যু হয় তা হলে নমিনিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়। মনে রাখবেন, পলিসি শুরুর সময়েই কোনও বিনিয়োগকারীকে এই রাইডার বেছে নিতে হবে। অবশ্যই সামান্য কিছু অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে।