Income tax department

Income tax department: সাবধান! বড় অঙ্কের লেনদেনে নোটিস পাঠাতে পারে আয়কর দফতর

বড় অঙ্কের লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বদাই সেই হিসেব আয়কর দফতরকে জানানো উচিত। কারণ আয়কর দফতরগুলির সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি এজেন্সিগুলির নিয়মিত যোগাযোগ থাকে।

Advertisement

তন্ময় দাস

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৪৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

অনেকে মজা করে বলেন, অর্থ বড় বালাই! যে ব্যক্তি এই পার্থিব বস্তুর মোহে আবদ্ধ হয়েছেন, খানিক ভুল করলে তাঁর যেমন নিস্তার নেই, ঠিক তেমনই যে ব্যক্তির কোনও মোহ নেই এই পার্থিব জগতে তাঁরও নিস্তার নেই। সারা বছর কোনও ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে কত টাকা লেনদেন হচ্ছে, তার উপরে নজর রাখে আয়কর দফতর। কোনও রকম গলদ দেখলেই আধিকারিকরা সোজা হানা দিতে পারেন আপনার ঘরে।
তাই বড় অঙ্কের লেনদেনের ক্ষেত্রে সর্বদাই সেই হিসেব আয়কর দফতরকে জানানো উচিত। কারণ আয়কর দফতরগুলির সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি এজেন্সিগুলির নিয়মিত যোগাযোগ থাকে। ফলে লেনদেনের খবর সহজেই পৌঁছে যায় আয়কর আধিকারিকদের কাছে। তাই বড় অঙ্কের টাকার লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চলা আবশ্যক।

Advertisement

স্থায়ী আমানতে বড় অঙ্কের টাকার বিনিয়োগ

প্রথম প্রশ্ন হল বড় অঙ্কের সঠিক পরিমাণ ঠিক কত? নিয়ম অনুযায়ী কোনও একক ব্যক্তি তাঁর স্থায়ী আমানতে এক সঙ্গে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। প্রতিটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বা বিনিয়োগ কর্তার কাছে নির্দেশ দেওয়া থাকে যে, তিনি যেন কোনও ভাবেই কোনও একক ব্যক্তিকে স্থায়ী আমনতে এক সঙ্গে ১০ লক্ষের থেকে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে না দেন। সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি)-র ঘোষণা অনুযায়ী, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের এই সর্বোচ্চ মাত্রা যদি কোনও ব্যক্তিবিশেষ ছাড়িয়ে যান, তবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তা যেন সত্ত্বর প্রকাশ করেন।

Advertisement

ব্যাঙ্কে সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ

একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ বিনিয়োগের মাত্রা ১০ লক্ষ টাকা। ব্যাঙ্কে সঞ্চয় অ্যাকাউন্টধারী একক কোনও ব্যক্তি যদি অর্থবর্ষ চলাকালীন ১০ লক্ষ টাকার বেশি নগদ বিনিয়োগ করেন, তবে তাঁর আয়কর দফতরের থেকে নোটিস পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
আবার কোনও গ্রাহক যদি নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে থেকে বছরে ১০ লক্ষের বেশি নগদ তোলেন, তা হলে সেই বিষয়টিও আয়কর দফতরের কাছে প্রকাশ করা অতি আবশ্যক। কোনও চলতি অ্যাকাউন্টে এই সর্বোচ্চ মাত্রা ৫০ লক্ষ টাকা।

প্রতীকী ছবি।

ক্রেডিট কার্ডের বিল পেমেন্টের ক্ষেত্রে

সিবিডিটি-র নিয়মানুসারে ক্রেডিট কার্ডের বিলে এক লক্ষের বেশি অঙ্কের অর্থ নগদে মেটানোর কথা আয়কর দফতরকে জানানো আবশ্যিক। এ ছাড়াও এক অর্থবর্ষে কোনও একক ব্যক্তির ১০ লক্ষ টাকার বেশি ক্রেডিট কার্ডে বিল মেটানোর কথাও আয়কর দফতরকে অবশ্যই জানাতে হবে। এবং যে কথাটি অবশ্যই মনে রাখা দরকার, যে কোনও ভাবেই যেন কোনও ব্যক্তি ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ মাত্রা ছাড়িয়ে না যান। আয়কর দফতরের কর্তারা ক্রেডিট কার্ডের বিনিময়গুলির দিকে যথেষ্ট নজর রাখেন। যে হেতু, ক্রেডিট কার্ড, প্যান কার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেই কারণে খুব সহজেই সরকারের দ্বারা অনলাইনে এই ধরনের বিনিময়গুলি সহজেই ধরা পড়ে যায়। বছর শেষে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এই ধরনের বিনিময় অবশ্যই প্রকাশ করা উচিত।

স্থায়ী সম্পত্তির ক্রয় ও বিক্রয়

সম্পত্তির নিবন্ধীকরণে যে কোনও মূল্যের স্থায়ী সম্পত্তি বিক্রি বা ক্রয়ের ক্ষেত্রে তা আয়কর রিটার্ন ফাইল করার সময় অবশ্যই প্রকাশ করা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে আয়কর দফতরের বিশেষ নিয়মও রয়েছে। ক্রয় ও বিক্রয়কারী উভয় ব্যক্তিই তার আয়কর দাখিলের সময় তাঁর আয়ের সঠিক বিবরণ দিয়েছেন কি না তা কঠোর ভাবে পরীক্ষা করতে পারে আয়কর দফতর।

শেয়ার, যৌথ পুঁজি, ঋণপত্র এবং বন্ড সম্পর্কিত নগদ বিনিময়

শেয়ার, যৌথ পুঁজি, ঋণপত্র এবং বন্ড সম্পর্কিত বিনিময়গুলির ক্ষেত্রে নগদ টাকার লেনদেন কোনও ভাবেই ১০ লক্ষ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আয়কর বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত বার্ষিক তথ্য দাখিলে আয়কর প্রদানকারী ব্যক্তিদের বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেনের বিষয়ে তথ্যাদি বর্তমান থাকে। আয়কর দফতরের কর্তারা নির্দিষ্ট অর্থবর্ষের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিময়ের তথ্য একত্রিত করেন। করদাতাদের এই বিপুল অঙ্কের লেনদেনগুলি নজর রাখার জন্য আয়কর দফতরের অ্যানুয়াল ইনফরমেশন রিটার্ন স্টেটমেন্ট তৈরি করেছে। যদি কোনও খরচ বা বিনিময় বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেনের তালিকায় তালিকাভুক্ত হয়, তবে এআইআর-এর ২৬এএস ফর্মের পার্ট ই-এর জায়গাটি দেখতে হবে।

বিদেশি মুদ্রার বিক্রয় এবং লেনদেন

একটি অর্থবর্ষ চলাকালীন কোনও একক ব্যক্তি যদি ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১০ লক্ষের বেশি অঙ্কের অর্থ বিদেশি মুদ্রার বিনিয়োগ বা লেনদেনে ব্যয় করে থাকেন কিংবা বৈদেশিক ভ্রমণে দু’লক্ষ টাকার উপর খরচ হয় অথবা অর্থের সঙ্গে জড়িত অন্য কোনও জিনিস ব্যবহৃত হয়, তবে তা আয়কর দফতরকে আয়কর রিটার্ন এর মাধ্যমে জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না হলে নোটিস আসার আশঙ্কা থাকে।
মনে রাখবেন, আয়কর দফতরের নোটিস মানেই যে কপালে চিন্তার ভাঁজ, তা কিন্তু নয়। সঠিক ভাবে নিয়ম মেনে এবং যথযথ আয়কর রিটার্ন জমা দিলে এই বিষয় সংক্রান্ত কোনও সমস্যাতেই পড়ার কথা নয়। মূলত বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিয়োগ বা লেনদেনের ক্ষেত্রে আয়করের এই বিষয়গুলি জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement