মূলধনী লাভ শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর শব্দার্থ। কোনও মূলধনী সম্পদের বিক্রয় থেকে সঞ্চিত লাভ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে এটিকে। সহজ করে বললে এই ধরনের লাভ বিনিয়োগ বা রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে।
সময়কালের ওপর নির্ভর করে মূলধন লাভ স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। যে হেতু যে কোনও মুনাফাকেই ‘আয়’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তাই যে কোনও মুনাফাই কর আরোপের জন্য দায়ী। বিনিয়োগের পরিভাষায় এই করকেই মূলধনী লাভ কর বলা হয়।
এখন প্রশ্ন হল যে মুনাফা হলেই কি কর দেওয়া আবশ্যিক? উত্তরে বলা যায় কিছু ক্ষেত্রে তো অবশ্যই হ্যাঁ। যখন একটি সম্পদ এক জন মালিকের হাত থেকে অন্য এক জনের কাছে হস্তান্তরিত করা হয়, তখন এই ধরনের কর আরোপ হয়। যদিও সমস্ত মূলধন লাভ ট্যাক্সের জন্য দায়বদ্ধ নয়। দীর্ঘমেয়াদী লাভের জন্য কর প্রদানের পদ্ধতি স্বল্পমেয়াদী লাভের থেকে অনেকটাই আলাদা। করদাতা ব্যক্তিরা তাদের মূলধন লাভ করের বোঝা কমাতে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।
ক্যাপিটাল গেইন হিসেবে চিহ্নিত করা করের ধরনের হিসেবে দেখতে গেলে মূলধনী লাভ মূলত দুই প্রকারের হয়। প্রথমত, স্বল্পমেয়াদী মূলধনী লাভ কর। ৩৬ মাসেরও কম সময় ধরে রাখা যে কোনও সম্পদকে স্বল্পমেয়াদী সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে এই সময়কাল ২৪ মাস। এই ধরনের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তা স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সেই ওই লাভের উপরে কর আরোপ করা হয়।
দ্বিতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভ কর। ৩৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে রাখা যে কোনও সম্পদকে দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই ধরনের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে যে মুনাফা পাওয়া যায় তা দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং সেই অনুযায়ী কর ওই মুনাফার উপরে কর আরোপ করা হয়।
তবে অগ্রাধিকার শেয়ার, ইক্যুইটি, ইউটিসি ইউনিট, সিকিউরিটিজ, ইক্যুইটি-ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড এবং জিরো-কূপন বন্ডের মতো বিনিয়োগগুলিকেও দীর্ঘমেয়াদী মূলধন সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি কোনও বিনিয়োগকারী সেগুলিকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে থাকেন।
স্বল্পমেয়াদী লাভ এবং দীর্ঘমেয়াদী লাভ ট্যাক্সেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান রয়েছে। আয়কর আইনের ধারা ৮০সি-এর অধীনে, বিনিয়োগকারী এক বছরের মধ্যে তার সম্পত্তি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে, স্বল্পমেয়াদী মূলধন লাভের উপর ১৫ শতাংশ হারে কর ধার্য হবে। আবার দীর্ঘমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকার ইক্যুইটি-ভিত্তিক তহবিল ও শেয়ারের ওপর কর ধার্য করা হবে ১০ শতাংশ।
ভারতে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্সে কিন্তু সহজেই ছাড় পাওয়া যেতে পারে। ভারতীয় আয়কর আইন দ্বারা প্রদত্ত কর সুবিধা গুলি গ্রহণ করে মানুষ এই ধরনের করের বোঝা কমাতে পারেন। এই ধরনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে যখন একটি সম্পদের বিক্রয় থেকে আয় অন্য সম্পদে পুনর্বিনিয়োগ করা হয়।
ধারা ৫৪ অনুসারে, একটি বিদ্যমান আবাসিক সম্পত্তি বিক্রয় এবং অন্য আবাসিক সম্পত্তি কেনার জন্য অর্থ পুনঃবিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রাপ্ত লাভের উপর কর ছাড় পাওয়া যায়। ২০১৯ সালের বাজেট অনুসারে, দেশের কোনও নাগরিক তার আবাসিক সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা তাদের দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভের ওপর একটি ছাড় পেতে সক্ষম হবে। তারা সর্বোচ্চ দু’টি আবাসিক সম্পত্তিতে এই বিনিয়োগ করলে ছাড় পেতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে পুঁজিগত লাভ ২ কোটি টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
নতুন সম্পত্তির দাম, বিক্রি হওয়া ইউনিটের চেয়ে কম হলে, ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী কোনও বিনিয়োগকারীকে ওই বাকি অর্থের উপরে কর দিতে হবে। যদিও এক জন কর প্রদানকারী ব্যক্তি শুধুমাত্র এক বারই এই ধরনের ছাড় পেতে পারেন।
আয়কর অইনের ধারা ৫৪ এফ অনুযায়ী, আবাসিক সম্পত্তি ছাড়াও যে কোনও সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত লাভের ওপর ছাড় পেতে পারেন। আবাসিক সম্পত্তি নয় এমন দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে মূলধনী লাভ করা হলে এই সুবিধা পাওয়া যায়। এই ধরনের ছাড় পেতে, সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে একটি নতুন সম্পত্তি কেনার জন্য পুনরায় বিনিয়োগ করতে হবে। এই ধরনের একটি ক্রয়, বিক্রয়ের ১২ মাস আগে বা কমপক্ষে ২৪ মাস পরে করা উচিত।
আয়কর অইনের ধারা ৫৪ সি অনুযায়ী বিদ্যমান আবাসিক সম্পত্তি বিক্রয় এবং নির্দিষ্ট বন্ডে এর অর্থ পুনঃবিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রাপ্ত লাভের ওপর ছাড় পাওয়া যায়। কোনও বিনিয়োগকারী প্রথম সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থকে ছয’মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট বন্ডে পুনর্বিনিয়োগ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উল্লিখিত ধারার অধীনে ছাড় পেতে পারেন। এই ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ করা তহবিলগুলিতে ৬০ মাস পরেই আবেদন করা যায়।
কৃষি উদ্দেশ্যে জমি হস্তান্তরের মাধ্যমে গৃহীত মূলধনী লাভের ওপর কর ছাড় পাওয়া যায়। কোনও ব্যক্তি কৃষিজমি হস্তান্তরের মাধ্যমে সংগৃহীত স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভের ওপর উল্লিখিত ধারার অধীনে ছাড় পেতে পারেন। তবে উল্লিখিত সম্পদ বিক্রির ২৪ মাস আগে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে। এই ধরনের স্থানান্তরের তারিখ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে একটি নতুন সম্পদ কেনার জন্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত পরিমাণ পুনর্বিনিয়োগ করতে হবে। মনে রাখবেন, ৬০ বছরের বেশি বয়সী কোনও ব্যক্তি, যাঁদের নূন্যতম বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকা, তাঁরা দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভ কর থেকে অব্যাহতি পাবেন।
যে কারণে প্রত্যেক কর-প্রদানকারী ব্যক্তি মূলধনী লাভ করের বোঝা কমাতে চান, তা হল যে এটি তাঁদের মূলধনী উপার্জনের একটি বড় অংশ নষ্ট করে দেয়। তবে বেশ কয়েকটি সহজ কৌশল অবলম্বন করে এই করের বোঝা কমানো যায়। যেমন কোনও সম্পদকে বেশি সময় ধরে রাখা, মুনাফা থেকে প্রাপ্ত অর্থকে পুনর্বিনিয়োগ ইত্যাদি।
পাশাপাশি, ক্যাপিটাল গেইন অ্যাকাউন্ট স্কিমে বিনিয়োগ করেও কর বাঁচানো যেতে পারে। ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স কমানোর কৌশলগত পদক্ষেপ হিসাবে, কোনও বিনিয়োগকারী তাঁদের উপার্জনকৃত একটি মূলধনী লাভ অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারেন। এই কৌশলটি এমন সময়ে গ্রহণ করা যেতে পারে যখন তারা তাদের ট্যাক্স বাঁচাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি নতুন আবাসিক সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।