প্রতীকী ছবি।
শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করলে কিন্তু কর দিতে হতে পারে। এই কর নির্ভর করে কেনার কত দিন পরে আপনি তা বিক্রি করছেন। যদি ৩৬ মাস বা তিন বছর বাদে তা বিক্রি করেন তাহলে আপনি লঙ টার্ম ক্যাপিটাল গেন বা দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভ করের আওতায় পড়বেন। আর যদি কেনার ৩৬ মাসের মধ্যে বিক্রি করেন তা হলে আপনাকে স্বল্প মেয়াদী মূলধনী লাভ কর দিতে হতে পারে।
স্বল্প মেয়াদী মূলধনী লাভের অঙ্কটা সোজা। আপনি বিক্রি করার পর যে টাকা পেলেন তার থেকে কেনার খরচ বাদ দিন। ওটাই আপনার লাভ। এ বার সেই লাভের অঙ্ক সোজা যোগ করুন আপনার আয়ের সঙ্গে। আপনার গোটা আয় ধরে যেমন সাধারণ ভাবে আয়করের হিসাব করেন সেই ভাবেই এগোন।
কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভ করের হিসাবটা একটু ঝামেলার। কারণ এই লাভের অঙ্ক করতে লাগে মুদ্রাস্ফীতি সূচক। এটা লাগে এই কারণে যে দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভের হিসাবে দেখা হয় আপনি যে দামে সম্পত্তি, এ ক্ষেত্রে ঋণপত্র বা শেয়ার কিনেছিলেন সেই সময়ের টাকার দাম যা ছিল আজও যদি তা থাকত তাহলে আপনার আয় কত হত তা দেখতেই। মাথায় রাখতে হবে, মুদ্রাস্ফীতি আপনার ক্রয়ক্ষমতা কমায়। তাই এখানে যুক্তিটা হল সম্পদ বেচে প্রকৃত আয়ের অঙ্কটা কষা।
এত গেল যুক্তির কথা। এ বার আসুন দেখে নেওয়া যাক, অঙ্কটা কষতে গেলে আপনার কী কী লাগবে। পরের ধাপে যাওয়ার আগে আরেকটা কথা। শেয়ার বেচে আপনার যদি দীর্ঘমেয়াদী মূলধনী লাভ হয় তা হলে কিন্তু আপনার মুদ্রাস্ফীতির এই সুযোগ মিলবে না। আপনাকে কিন্তু সরকারের নির্ধারিত হারে কর দিতে হবে। এই সুযোগ শুধু পাওয়া যাবে ঋণপত্রের ক্ষেত্রে।
অঙ্কটার জন্য আপনার লাগবে এই তথ্যগুলি:
ক) যে দামে কিনেছিলেন এবং কবে কিনেছিলেন তার তারিখ
খ) যে ঋণপত্র বিক্রি করছেন তাতে কত টাকা লগ্নি করেছিলেন
গ) সংশ্লিষ্ট বছরের সরকার ঘোষিত ‘কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স‘
ঘ) যে বছর বিক্রি করলেন সেই বছরের সরকার ঘোষিত ‘কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স‘
ঙ) এবং অবশ্যই বিক্রির দাম এবং বিক্রি থেকে প্রাপ্ত টাকা
এ বার অঙ্ক করুন।
ক) প্রথমে আয়কর দফতর প্রকাশিত ‘কস্ট ইনফ্লেশন ইনডেক্স’ (সূচক) নিন কেনার বছরের এবং বিক্রি করার বছরের।
খ) এ বার বিক্রি করার বছরের সূচককে কেনার বছরের সূচক দিয়ে ভাগ করুন।
গ) এই ভাগফলকে ঋণপত্র কেনার খরচ দিয়ে গুণ করুন। যে সংখ্যাটি পেলেন তা হল আপনি তিন বছর আগে ঋণপত্রটি না কিনে আজ কিনলে মুদ্রাস্ফীতির কারণে কত টাকা খরচ করতে হত তা।
ঘ) এ বার (গ) থেকে যে দাম পেলেন তা হল আপনার ঋণপত্র কেনার ইনডেক্সড প্রাইস বা সূচক সূচিত দাম। তা আপনার আজ বিক্রি করা ঋণপত্রের দাম থেকে বাদ দিন।
ঞ) এ বার আপনার হাতে যে সংখাটি রইল সেটাই আপনার সূচক সূচিত মূলধনী লাভ। তা যদি শূন্য হয় তাহলে আপনার লাভের অঙ্কও শূন্য। ঋণাত্মক হলে আপনার ক্ষতি। এই দুটি ক্ষেত্রেই তাই আপনি করের আওতার বাইরে। কিন্তু যদি তা না হয় তাহলে ওই লাভের উপর আপনাকে কিন্তু সরকার নির্ধারিত হারে আয়কর দিতে হবে।
সব শেষে বলি, আপনার আয়কর উপদেষ্টার সঙ্গে এ নিয়ে কথা না বলে কর দিতে বা না-দিতে এগিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। তাই নিজে একটা ধারণা করে নিন। আপনার করের বহর কত হতে পারে। তারপর উপদেষ্টার পরামর্শ মেনে এগোন।