জীবনে চলার পথে হঠাৎ তৈরি হওয়া সমস্যা এড়ানোর সবচেয়ে ভাল বিকল্প হল জরুরি বা আপৎকালীন তহবিল। প্রতীকী ছবি।
আমাদের প্রত্যেকের রোজকার জীবনে একটি বিষয় পরিষ্কার। তা হল বিপদ কখনও জানিয়ে আসে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা প্রত্যেকেই যেন এক অদৃশ্য বাঁধনের মধ্যে দিন কাটাই। আমাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকলে কিংবা মন ভাল থাকলেও এ অনিশ্চয়তা আদতে কাটার নয়। চিকিৎসা হোক কিংবা অন্য কোনও প্রয়োজন, হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া সমস্যার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা যোগাড় করা যেন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখা সঞ্চয় ব্যবহার করে সাময়িক সমস্যার সমাধান হয়ে গেলেও সমস্যা দেখা দেয় অন্য জায়গায়। পরিস্থিতি হঠাৎ করে জটিল হয়ে উঠলে অর্থ জলের মতো খরচ হতে থাকে। এক সময় আগামী দিনের জন্য হাতে কিছুই পড়ে থাকে না। আসলে যে উদ্দেশ্যে অর্থ সঞ্চয় করা হয়েছিল, তা অপূর্ণ থেকে যায়।
জীবনে চলার পথে হঠাৎ তৈরি হওয়া এই সমস্যা এড়ানোর সবচেয়ে ভাল বিকল্প হল জরুরি বা আপৎকালীন তহবিল। বিনিয়োগের পরিভাষায় যাকে বলে এমার্জেন্সি ফান্ড। এই ফান্ডগুলি জরুরি সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ও ধরে রাখে। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই ভবিষ্যতের আর্থিক টানাপড়েনের সমস্যা মেটাতে আপৎকালীন তহবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পূর্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে এই তহবিল জমিয়ে রাখতে পারলে যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য হাতে যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়। তা ছাড়া, আপৎকালীন তহবিলকে এক ধরনের বিনিয়োগ হিসেবেও ধরা যেতে পারে। এই কারণেই আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয় অনুযায়ী সকলরেই একটি আপৎকালীন তহবিল তৈরি করে রাখা উচিত।
মনে রাখবেন, আমরা প্রত্যেকেই আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কম-বেশি ওয়াকিবহাল। প্রত্যেক মানুষই নিজের মাসিক আয়ের থেকে সংসার বাবদ খরচ সরিয়ে রেখে তার থেকে কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করে। সেই বিনিয়োগ ও খরচ ব্যতিরেকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার তালিকায় আপৎকালীন তহবিলকেও রাখা উচিত
কী ভাবে তৈরি করবেন আপৎকালীন তহবিল?
এই তহবিল তৈরি করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এই তহবিলের টাকা জরুরি বা আপৎকালীন অবস্থা ছাড়া অন্য কোনও কারণে কিন্তু খরচ করা যাবে না। এমনকি একে সঞ্চয়ের খাতাতেও না ধরাই ভাল। এই দু’টি মূল বিষয় খেয়াল রেখে, নিখুঁত অঙ্ক কষে ফান্ডটি তৈরি করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও সমস্যাই ছ’মাসের বেশি স্থায়ী হয় না। এই সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিপদ কেটে যায় বা আমরা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বার করে ফেলি।
আপাতকালীন ফান্ডের মূল নিয়ম হল, আপনার মাসিক আয়ের ছ’গুণ টাকা এই তহবিলে জমা রাখতে হবে। এই জরুরি তহবিলে কমপক্ষে ছ’মাস সংসার চালানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করা উচিত। অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তির মাসিক খরচ ৫০ হাজার টাকা হলে জরুরি তহবিলে তাঁকে তিন লক্ষ টাকা রাখতে হবে। আপৎকালীন তহবিল থাকলে তা স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যপূরণেও সাহায্য করবে। এই সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসার খরচ বা আর্থিক টানাপড়েনের সমস্যা মেটানো যাবে।
জরুরি তহবিলের অর্থকে এমন জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে যেখান থেকে খুব সহজেই টাকা তোলা যাবে। নগদ হিসেবে সাধারণ সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা যেতে পারে যেখান থেকে যে কোনও সময় কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে টাকা তোলা যাবে। এটিকে লিকুইড মিউচুয়াল ফান্ড হিসেবেও বিনিয়োগ করা যেতে পারে। কারণ এই তহবিলের টাকা শুধুমাত্র মানি মার্কেট সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হয়। এই কারণেই এই লগ্নিতে ঝুঁকি খুবই কম থাকে। পাশাপাশি ফিক্সড ডিপোজিট বা রেকারিং ডিপোজিটের রূপেও জরুরি তহবিল জমানো যেতে পারে।
অন্য ফান্ডের মতো জরুরি এই ফান্ডকেও তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়— স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি এবং মধ্যমেয়াদি। কোনও এক জন বিনিয়োগকারী বাজার বিশ্লেষণ করে এই সমস্ত আলাদা আলাদা ফান্ডে লগ্নি করতে পারেন। মনে রাখবেন, বিপদ হঠাৎ করেই আসে। সেই কারণে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত তৈরি থাকা। অন্তত আর্থিক দিক থেকে তো বটেই।