প্রতীকী চিত্র
আয় করতে শুরু করে, আমরা অনেকেই প্রথম দিন থেকেই শখ মেটানোর রাস্তায় হাঁটি। ভাবতেই চাই না যে অবসরের পরে খাব কী। আমরা ভুলে যাই যে বার্ধক্যের গোড়ায়, ৫৮ বা ৬০ বছর বয়সে যখন হাতে ফুলের গোছা আর সহকর্মীদের নিয়ে শেষ বারের মতো অফিস থেকে রাস্তায় পা রাখি, তার পরে কিন্তু সুদই আমাদের জীবনের অন্যতম ভরসা। জানেন কি, ভারতে প্রায় ৭০ শতাংশ বয়স্ক মানুষ যাঁরা আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত তাঁরা প্রায় সবাই মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের? এজওয়েল সংস্থার সমীক্ষা বলছে, এঁদের মধ্যে ৮৫ শতাংশকেই জীবনের শেষ দিনগুলো সন্তানদের উপর আর্থিক ভাবে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে কাটাতে হয়।
বিভিন্ন সমীক্ষা যে যে কারণগুলোকে এর জন্য দায়ী করেছে তা এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক।
১. অবসর নিয়ে প্রথম থেকেই না ভেবে দেরিতে গিয়ে ভাবা
বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, অবসরের আর্থিক সমস্যার মূলে রয়েছে চাকরি জীবনের প্রথম থেকেই অবসর নিয়ে না ভাবা। আমাদের সাধারণ প্রবণতাই হল, জীবনের শুরুতেই সঞ্চয়ের পথে না চলে, শখ মেটাতে খরচের রাস্তায় হাঁটা। এমনকী ঋণের পথে পা বাড়িয়ে শখ পূরণ করাও খুবই সাধারণ প্রবণতা। এর ফল কিন্তু ভুগতে হয় জীবনের উপান্তে। এমন একটা সময় যখন আপনি অশক্ত। চাইলেও আপনার শরীর সায় দেবে না আয়ের জন্য খাটুনি করতে। আর শরীর দিলেও বাজার চাইবে না আপনাকে দিয়ে কাজ করাতে। তাই প্রথম মাইনে হাতে পেয়েই শুরু করুন অবসরের পরিকল্পনা।
২. আয়ের থেকে অবসরের জন্য যথেষ্ট টাকা না সরানো
আমরা সাধারণত আজকের খরচ এবং হাত বাড়ানো দূরত্বের ভবিষ্যত্ নিয়েই ভাবি। আর সঞ্চয়ের জোরও থাকে ওই নিকট ভবিষ্যতের ভাবনা ঘিরেই। তাই খরচের উপরেই প্রাধান্য দিয়ে ভুলে থাকি অবসরের কথা। খরচের চাপ এলে অন্য কোনও ভাবে অবস্থাটা না সামলিয়ে প্রথমেই কোপ পড়ে অবসরের জন্য জমাতে থাকা সঞ্চয়ের উপর। ভাবনাটা হল, আজকের চাহিদা সামলে নিই। অবসরের তো এখনও অনেক দেরি আছে। আগামীতে পুষিয়ে দেব। কিন্তু, বিশ্বাস করুন, বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে এই আগামী আর আসে না। তাই এখন থেকেই অবসরের আয়ের উপর জোর দিয়ে সঞ্চয় করুন।
৩. ভবিষ্যতের আয় বাড়াতে ফাটকা খেলবেন না
চট জলদি আয় বাড়াতে অনেকেই শেয়ার বাজারে ফাটকার নেশাই মশগুল হয়ে যান। শেয়ারে টাকা রাখতেই হবে। কারণ, দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে আপনার সঞ্চয় বাড়ানোর রাস্তা হিসাবে ভাল সংস্থার শেয়ারে নিয়মিত টাকা রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন উপদেষ্টারা। কিন্তু তা যেন ফাটকা না হয়ে দাঁড়ায়। শেয়ার হোক আপনার সঞ্চয়ের একাধিক পথের একটি। এবং তা হোক দীর্ঘকালীন সঞ্চয়ের পথ। ঝুঁকি কমাতে বন্ড, পিএফ, ফিক্সড ডিপোজিট, এমন নানান পথে ঝুঁকির আনুপাতিক বিভাজন করে সঞ্চয় বাড়ান। সুরক্ষা হোক আপনার সঞ্চয়ের প্রথম কবজ, তার পর আয় এবং চট জলদি ভাঙানোর সুযোগ। ভাবুন এই ভাবে। ফাটকা একেবারেই নয়।
৪. অবসরের আয়ের পথ কিন্তু বিমা নয়
অবসরের আয়ের ঝুলিতে বিমা রাখবেন না। বিমা কিন্তু আপনার জীবনের ঝুঁকির ছাতা। তাকে অবসরের আয়ের রাস্তা হিসাবে ভাবলে ভুল করবেন। বিমার পথে সঞ্চয়ের রাস্তায় হাঁটলে আপনি কিন্তু আখেরে পস্তাবেন। কারণ বিমায় সঞ্চয় বাবদ যে টাকা ফেরত পাবেন তা অন্য জায়গায় বিনিয়োগ করে পাওয়া ফেরতের তুলনায় অনেক কম।
৫. সঞ্চয়ের ঝুলি নিয়মিত খতিয়ে দেখুন
আপনি অবসরের জন্য সঞ্চয় করছেন। দীর্ঘ এই রাস্তায় বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ বদলাতেই থাকবে। তাই নিয়মিত নজর রাখুন বাজারে আসা নতুন সব প্রকল্পের দিকে। ঝুঁকির অঙ্ক কমিয়ে বা এক রেখে আয় বাড়ানোর সুযোগ তাই হাত ছাড়া করা উচিত নয়। তাই নিয়মিত নজর রাখুন আপনার সঞ্চয়ের ঝুলি আর বাজারে আসা নতুন সঞ্চয়ের সুযোগ বা বাজারে বদলানো পরিস্থিতির উপর। আর নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন।
৬. স্বাস্থ্য বিমা যেন সহায় থাকে
সঞ্চয়ের ঝোঁকে স্বাস্থ্য বিমাকে অবহেলা করবেন না। বিমা ছাড়া অসুস্থ হলে কিন্তু ঘটি-বাটিও বেচে দিতে হতে পারে। তাই যতই কষ্ট হোক না কেন, স্বাস্থ্য বিমা যেন চালু থাকে।
৭. দেখুন অবসরের দিনই যেন সব সঞ্চয় প্রকল্প গুটিয়ে না যায়
অনেকেই এমন ভাবে অবসরের আয়ের জন্য সঞ্চয় করেন যাতে অবসরের বয়সে পৌঁছেই সব প্রকল্প ম্যাচিওর করে যায়। তা করবেন না। অবসরের পর পরও আপনি কিছু কিছু টাকা জমাতে পারবেন। মাথায় রাখবেন। নতুন আয়ের পথ অবসরের পর প্রায় শুকিয়েই যায়। একই সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে। চিকিৎসার খরচ বাড়ে। তাই সঞ্চয় প্রকল্পগুলো এমন ভাবে বাছুন যাতে অবসরের পরেও নিয়মিত কিছু প্রকল্প ম্যাচিওর করে। একই সঙ্ঘে পিপিএফ-এর মতো প্রকল্পগুলো চালু রাখুন, যাতে আপনি টাকা রাখতেও পারবেন, বাজারের চলতি হারের থেকে বেশি সুদও পাবেন, আবার সময় সময় তা থেকে টাকাও তুলতে পারবেন।