বন্ড! নাম শুনলেই কেঁপে যান অনেকে। তবে এই বন্ড প্রবল প্রতাপশালী জেমস বন্ড নন। ‘কেঁপে যাওয়া’দের তালিকায় এ ক্ষেত্রে রয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। অনেকেই ভাবেন, ব্যাঙ্কের স্থায়ী আমানতই ভাল। কে যাবে ওই সব বন্ড বা সরকারি ঋণপত্রের ঝামেলায়! এই তো ব্যাঙ্ক থেকে আমি বেশ ৬ শতাংশ কাছাকাছি হারে সুদ পাচ্ছি। তা হলে বন্ডের ‘কঠিন পথে’ হাঁটব কেন?
এক দিক থেকে অবশ্য এই ধারণা খুব ভুল নয়। বন্ডে বিনিয়োগ করবেন না স্থায়ী আমানত, তা কিন্তু নির্ভর করে আপনার লক্ষ্যের উপর। যদি কেউ বলেন, শুধু ঋণপত্রেই টাকা রাখা উচিত, তা হলে তিনি বোধহয় ঠিক বলছেন না।
স্থায়ী আমানত বা প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্প বা অন্য কোনও আমানত প্রকল্পের যেমন কিছু সুবিধা আছে, তেমনই কিছু অসুবিধাও আছে। একই কথা কিন্তু ঋণপত্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ব্যাঙ্কের আমানত প্রকল্প বা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুবিধা হল, এগুলি চট করে করানো যায়। স্থায়ী আমানতের মতো অনেক প্রকল্প কিন্তু প্রয়োজন হলে ভাঙিয়েও নেওয়া যায়। ঋণপত্রের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য হলেও এগুলি বিক্রি করতে হলে আপনাকে ঋণপত্রের বাজারেই বিক্রি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
স্থায়ী আমানত ছাড়া প্রবীণদের জন্য সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে কিন্তু ঊর্ধ্বসীমা আছে। যেমন, স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ ভাবে বিনিয়োগ করলে প্রবীণ নাগরিক সঞ্চয় প্রকল্পের ঊর্ধ্বসীমা ১৫ লক্ষ টাকা। সেই সীমা পেরিয়ে গেলে মাসিক আয়ের জন্য বাকিটা কোথায় রাখবেন সেই হিসাব কষার সময় অবশ্য ঋণপত্রের কথা ভাবা যেতেই পারে।
সঞ্চয় প্রকল্পগুলি থেকে প্রাপ্ত সুদ বাবদ আয়ের উপর আয়কর দিতে হয়। ঋণপত্রের উপর কিন্তু কর ছাড়ের বহু সুবিধা পাওয়া যায়। এই সুবিধার কথা মাথায় রেখে আয়ের লক্ষ্যে বিনিয়োগের নির্দিষ্ট পথ বাছতে হবে।
নতুন সরকারি ১০ বছরের ঋণপত্রে ৬.৩৮ শতাংশ কুপন। স্থায়ী আমানতের চলতি হার ৫.৫ থেকে ৬.৩ শতাংশ। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের হারে তারতম্য আছে। তাই এই অঙ্কটিও মাথায় রাখতে হবে।
ঝুঁকির অঙ্কে সরকারি ঋণপত্র এবং ব্যাঙ্কের আমানতে খুব একটা ফারাক নেই। তবে সরকারি ঋণপত্রে বহু দিন ধরে একই হারে আয়ের সুবিধা আছে। কিন্তু আমানত প্রকল্পগুলিতে পাঁচ বছরের মধ্যেই আবার নবীকরণ করতে হয়। আর তার পর সুদের হারও বদলায়। কমতেও পারে, বাড়তেও পারে।
তা হলে? উপায় একটাই। বিনিয়োগের লক্ষ্য স্থির করুন। আর তার পর ঝুঁকির মাপে বিনিয়োগের ঝুলি ভরুন। ঋণপত্র আর ব্যাঙ্কের আমানতই কিন্তু তুলনামূলক ভাবে কম ঝুঁকির বিনিয়োগ। ঝুঁকি আর আয়ের মধ্যে কী ভাবে সামঞ্জস্য রাখবেন সেটা কিন্তু আপনার উপরই নির্ভর করবে।
তহবিলের পরিসর, আয়ের প্রয়োজন এবং ঝুঁকির খিদের উপরই আপনার বিনিয়োগের চরিত্র নির্ভর করবে। তবে একটা বয়সের পরে, ঝুঁকি কমিয়ে বিনিয়োগের রাস্তা খোঁজাই বোধহয় ভাল।