প্রতীকী চিত্র
মার্কিন বাজারে ঋণপত্রে সুদ বাড়ল আর শেয়ার বাজারে মুখ থুবড়ে পড়ল সূচক। কেন? না। আপনার আমার লগ্নির টাকার প্রত্যক্ষ অভিঘাত এটা নয়। কিন্তু হ্যাঁ, আমার আপনার সম্মিলিত বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের ফল হিসাবেও ভাবতে পারেন সূচকের পতনকে।
ধাঁধা? না। ভারতের শেয়ার বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল সূচককে উপরে ধরে রাখার জন্য অন্যতম চালিকা শক্তি। এই বিদেশি বিনিয়োগ আসত বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার হাত ধরে। আর এই আর্থিক সংস্থাগুলির টাকার সূত্র হচ্ছে সাধারণের বিনিয়োগ। তাই এই সংস্থাগুলি তাদের গ্রাহকদের লগ্নি বাড়াতে বিশ্ব জুড়ে খুঁজে বেড়ায় লাভের বাজার।
ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বিএসইআর নিফটি প্রায় তিন শতাংশ পড়ে যায়। যার কারণ হিসাবে বিশ্ববাজারে দুর্বলতাকেই অন্যতম দায়ী হিসাবে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, ঋণপত্রের বাজারে সুদের হারও চড়েছে। তাই বিনিয়োগকারীরা খুঁজছেন কম ঝুঁকিতে বেশি আয়ের লগ্নির সুযোগ।
মাথায় রাখতে হবে লগ্নির মূল সূত্রটাই হল ঝুঁকির সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য রাখা। মার্কিন সরকারের ১০ বছরের ঋণপত্রের উপর সুদ অতিমারির সময় পড়ে গিয়েছিল ৫.৬ শতাংশে। তা এখন বেড়ে ৬.১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ঋণপত্রে এই আয়ের সুযোগ নিতেই আর্থিক সংস্থাগুলি শেয়ার বাজার থেকে টাকা তুলে ঋণপত্রের বাজারে লাগাতে চাইছে। শেয়ার বাজারে বর্তমান ঝুঁকির তুলনায় আয় যা তাতে ঋণপত্রের বাজারে প্রায় ঝুঁকিহীন ৬.১৮ শতাংশ আয়কে লোভনীয় বলেই মনে করছে বাজার।
পাশাপাশি, বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। তাতে মূল্য-সূচক বাড়বে। আর মূল্য-সূচক বাড়লে সুদের হারও বাড়বে। তাই বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক ভাবে কম ঝুঁকির ঋণপত্রের বাজারের দিকেই ঝুঁকছেন। আর বিশ্বজুড়েই অতিমারির কারণে সরকারী কোষাগারগুলোতে চলছে টানাটানি। তাই প্রায় সব দেশের সরকারই এখন ঋণ করেই কোষাগার চালু রাখার রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। আর যেহেতু ঋণের বাজারে চাহিদা বাড়ছে তাই সুদের হারের উপরও চাপ বাড়ছে। মাথায় রাখতে হবে ঋণের মূল্য সুদ। বাজারে যে ঋণ করতে আসে সেটা তার চাহিদা। আর আপনি যখন ঋণপত্র কেনেন তখন আপনি ঋণের জোগানদার। তাই বাজারে ঋণপত্রের ভিড় মানেই চাহিদার চাপ আর সুদ চড়ার প্রবণতা বাড়া। এটাই তো চাহিদা জোগানের সোজা অঙ্ক।
বাজার এখন যা এবং অঙ্ক যা দাঁড়িয়েছে তাতে আপনি তাই ঋণপত্রে বিনিয়োগের কথা ভাবতে পারেন। কারণ, দেশের বাজারেও কিন্তু বিশ্ব বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটছে ঋণপত্রের বাজার।