প্রতীকী ছবি
সঞ্চয়ের ঝুলি তো ভরে চলেছেন। কিন্তু তা ভরতে কি নজরে রেখেছেন তার বৈচিত্র, বৃদ্ধি এবং তা আপনাকে সেই লগ্নি নিয়মিত ঠিক ঠাক রিটার্ন দিচ্ছে তো? এ বার ভাবুন তো এই তিনটের জন্য নানান ভাবে লগ্নি না করে যদি তা একটা লগ্নিতেই পাওয়া যায়? তাহলে শুধু ঝামেলাই কমে তাই নয়, নিশ্চিন্তও থাকা যায় অনেকটাই। আর এখানেই বাজিমাত ডেট ফান্ড বা ঋণপত্র নির্ভর তহবিলের। আর আপনার সঞ্চয়ের ঝুলিকেও সামলাতে বিরাট সাহায্য করে এই জাতীয় ফান্ড।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কেন:
যে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির ব্যাপারে রক্ষণশীল এবং অ্যাসেট অ্যালোকেশন অর্থাৎ সম্পদ বরাদ্দ –এর উপর নির্ভরশীল তাঁদের জন্য ঋণ তহবিল একটি আদর্শ বিনিয়োগের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। ঋণ তহবিলের মূল কৌশল হল স্থির আয়ের সিকিউরিটিগুলিতে বিনিয়োগ করা যেমন কর্পোরেট বন্ড, সরকারি সিকিউরিটিজ, ব্যাঙ্ক সিডি অর্থাৎ সার্টিফিকেট ডিপোজিট এবং আরও অন্যান্য। ঋণ তহবিল আপনার পোর্টফোলিওতে স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে। তবে ঋণ তহবিলে বিনিয়োগের আগে এর গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি অবশ্যই জেনে রাখা দরকার।
মেয়াদ ও ক্রেডিটের প্রেক্ষিতে ঋণ তহবিলের নানা প্রকারভেদ রয়েছে। একদিনের জন্য বিনিয়োগের তহবিল, লিকুইড অর্থাৎ চটজলদি ভাঙানো যায় এমন তহবিল, অতি-স্বল্প মেয়াদী তহবিল, মানি-মার্কেট তহবিল, স্বল্প মেয়াদী তহবিল, মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদী তহবিল। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের যে কোনও ধরনের প্রয়োজন মেটাতে পারে ডেট ফান্ড।
যে সব বিনিয়োগকারীরা ব্যাঙ্কে সঞ্চয় করেন তাঁদের কাছে ঋণ তহবিল একেবারে উপযুক্ত কারণ তুলনামূলক ভাবে উচ্চ রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ঋণ তহবিলে। ইক্যুইটি তহবিলের তুলনায় ঋণ তহবিল কিন্তু কম ঝুঁকিপূর্ণ। আর এর নেপথ্যে রয়েছে কৌশলগত বরাদ্দ। ঋণ তহবিলেরতিনটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এক দিকে যে রকম কম খরচে বিনিয়োগ ও কর সাশ্রয়ী ঠিকতেমনই অন্যদিকে সহজেই ভাঙিয়ে নেওয়া যায়।
ডেট ফান্ডে বিনিয়োগের এবিসি:
১। ইক্যুইটি বিনিয়োগ যেমন দীর্ঘ মেয়াদের, ডেট ফান্ডের ক্ষেত্রে যে কোনও মেয়াদে বিনিয়োগেরসুযোগ রয়েছে।
২। ডেট মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ ঠিক অঙ্কের মতো। কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললে ভুলহওয়ার সম্ভাবনা কম। সুদের হার যদি বেশি ওঠা-নামা না করে, তা হলে এমন তহবিলে বিনিয়োগ করা উচিত যার মেয়াদ বিনিয়োগের সময়কাল থেকে সামান্য কম। সুদের হার যখনপড়ছে তখন দীর্ঘমেয়াদি তহবিল উচ্চ রিটার্ন দেয়। আবার সুদের হার যখন ক্রমবর্ধমান তখনস্বল্প মেয়াদের বিনিয়োগ করুন।
৩। গত দুই বছরে সুদের হার খুব কম থাকায় আয় কম হয়েছে। ২০২২ এর এপ্রিল থেকেআরবিআই হার বেড়ে যাওয়ার ফলে রিটার্ন আরও প্রভাবিত হয়েছে। আগামী এক বা দুইচতুর্থাংশের মধ্যে আরবিআই –এর হার বৃদ্ধির চক্র শীর্ষে উঠতে পারে। বর্তমানে ডেট ফান্ডপোর্টফোলিও ৭.২৫ থেকে ৭.৫০ শতাংশ লাভ করছে। এবং আরবিআই একবার সহজ করতে শুরুকরলে ডেট ফান্ড দ্বিগুণ রিটার্ন দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
৪। স্কিম শ্রেণীকরণ আসার পর নিয়ন্ত্রক এই বিষয়টিকে আরও সহজ করে তুলেছে।
৫। কর: স্বল্প মেয়াদী ক্যাপিটাল গেইনের (ইউনিটগুলি যদি তিন বছরের আগে বিক্রি করাহয়) ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর প্রযোজ্য করের হার অনুযায়ী কর দেওয়া হয়। অতএব, আপনারকরের হার যদি ৩০ শতাংশ হয় তা হলে ঋণ তহবিলে স্বল্প মেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন অর্থাৎমূলধন লাভ কর ৩০ শতাংশ + ৪ শতাংশ সেস। ঋণ তহবিলের দীর্ঘমেয়াদী মূলধন লাভ সূচকসুবিধাসহ ২০ শতাংশ হারে কর দেওয়া হয়।
ডেট ফান্ডে বিনিয়োগের ক্ষতির তুলনায় সুবিধার দিকই বেশি। আদর্শ পোর্টফোলিওর ক্ষেত্রেসতর্কভাবে বাছাই করা ঋণ তহবিলের সঙ্গে তার ঝুঁকির ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত।সাধারণত, কর্পোরেট এবং সুপার এইচএনআই ক্লায়েন্টদের মধ্যে ঋণ তহবিলে বিনিয়োগ বেশিজনপ্রিয় কারণ উচ্চ পোস্ট ট্যাক্স রিটার্ন পাওয়া যায় এতে। যাইহোক, ট্যাক্স এর সুবিধাটি ছাড়াওঋণ তহবিল প্রত্যেকের পোর্টফোলিওর অংশ হওয়া উচিত। বিনিয়োগকারীদের জন্য একাধিকসুবিধা নিয়ে আসে ডেট ফান্ড।
প্রতিবেদক চিফ বিজনেস অফিসার, ট্রাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড। বক্তব্য নিজস্ব।
বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.in এই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতে ভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।