1. কর্পোরেট চাকুরিজীবী হোক বা পাড়ার মোড়ের পুরনো মুদি দোকানের মালিক, বাজেট আসলে প্রত্যেকেরই নজর থাকে সরকার প্রদত্ত কর ছাড়ের উপরে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি রোজগার করলেই কর বাবদ বেশ ভাল টাকা গুণতে হবে। কোনও বার সেই সংখ্যাটা বাড়ে, কোনও বছর কমে বা একই থাকে। অঙ্কের হিসেবে প্রত্যেক বছরেই বহু টাকা কর বাবদ পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। আর সেই কারণেই বাজারে কর বাঁচাতে রয়েছে বহু প্রকল্প।
বর্তমানে কর সাশ্রয়ের জন্য সরকারি বা বেসরকারি যে প্রকল্পগুলি রয়েছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম ইএলএসএস বা ইকুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম। বলা যেতে পারে বাজারচলতি আর পাঁচটা সাধারণ মিউচুয়াল ফান্ডের মতোই এই স্কিম। তবে কর ছাড়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে ইএলএসএস-এ।
মনে রাখবেন, অন্যান্য মিউচুয়াল ফান্ডের মতো ইএলএসএস প্রকল্পেও কমবেশি ঝুঁকি রয়েছে। অবশ্য রিটার্নও কিন্তু খারাপ নয়। বাজারের সূচক ঊর্ধ্বগামী না থাকলেও, মোটামুটি হারে পয়সা ফেরত পাওয়া যায়। যদিও এই রিটার্ন সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে বাজারের অবস্থা ও যে ফান্ডে টাকা ঢালছেন তার উপরে।
অতীতে দেখা গিয়েছে যে, পড়তি বাজারেও ছয় শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে এই ধরনের ফান্ড। যা বাজারের অন্যান্য সেভিংস প্রকল্পের চেয়ে ঢের বেশি। আবার তিন বছরে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি রিটার্নও দিয়েছে বেশ কিছু সংস্থা। তবে আবারও মনে রাখবেন যে, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে যে লাভ হয়, তা কিন্তু কখনই ধারাবাহিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে।
ইএলএসএস-এ বিনিয়োগ পদ্ধতিও কিন্তু সাধারণ মিউচুয়াল ফান্ডের মতো। মাসিক কিস্তি বা এসআইপি-তে এবং একসঙ্গে বড় অঙ্কের বা লাম্পসাম। এ ছাড়াও নিজে সরাসরি বা এজেন্টের মাধ্যমে এই ফান্ডে বিনিয়োগ করা যায়। তবে সরাসরি সংস্থায় গিয়ে বিনিয়োগ করলে ন্যাভ ইউনিট ০.৫ শতাংশ বেশি পাওয়া যায়।
ইএলএসএস ফান্ডে ন্যূনতম বিনিয়োগের অঙ্ক ৫০০ টাকা। এর পরে বছরে যে কোনও অঙ্ক রাখা যেতে পারে। তবে বছরে সর্বোচ্চ দেড় লাখ লাখ টাকা পর্যন্তই কর ছাড়ের সুবিধা দাবি করা সম্ভব।
ইএলএস ফান্ডে তিন বছরের লক-ইন পিরিয়ড রয়েছে। অর্থাৎ এক বার এই ফান্ডে বিনিয়োগ করলে তিন বছরের আগে সেই টাকা তোলা যায় না। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই বিনিয়োগকারীরা তাঁদের কেনা ন্যাভ ইউনিটগুলি বিক্রি করতে পারবেন।
যে হেতু বেশ ভাল কর ছাড় পাওয়া যায়, সে হেতু বিগত কয়েক বছরে এই ফান্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। ৮০সি ধারায় ইএলএসএস-এ বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থের উপরেই কর ছাড় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর বাবদ সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করা যেতে পারে।
তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ইএলএসএস থেকে পাওয়া লভ্যাংশের উপরে কর দিতে হয়। যদি দীর্ঘমেয়াদি মূলধনী লাভ বছরে এক লক্ষ টাকা বা তার বেশি হয়, তা হলে সেই বাড়তি লাভ বা মুনাফার উপরে বিনিয়োগকারীকে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। তবে, ইএলএসএস অ্যাকাউন্ট থেকে বার্ষিক লাভ এক লক্ষ টাকার কম হলে কোনও কর লাগবে না।
যে হেতু ঝুঁকি তুলনামূলক কম সে হেতু এই ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে আর্থিক সুরক্ষা আরও মজবুত করা সম্ভব। সদ্য চাকরিতে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে ইএলএসএস বেশ ভাল হতে পারে।