যে আমারে চায়

জয় গোস্বামী ও রাহুল মিত্রের যুগ্ম অনুষ্ঠানটি শুনলেন বারীন মজুমদার।যে আমারে চায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা নিবেদন করলেন রাহুল মিত্র ও জয় গোস্বামী। গান ছাড়াও রাহুলের সকল অনুষ্ঠানে তাঁর নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন থাকে। যা গভীর ও মনোগ্রাহী। রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতাকে নানা ভাবে, নানা আলোতে দেখার এক সুচারু প্রচেষ্টা তাঁর নিবেদনে ধরা পড়ে। প্রায়শই এই দেখাটি ধরা পড়ে অনুষ্ঠানের মুখবন্ধে। এ বার সেই মুখবন্ধটি একটি দীর্ঘ কবিতার রূপ নিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৪
Share:

যে আমারে চায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতা নিবেদন করলেন রাহুল মিত্র ও জয় গোস্বামী। গান ছাড়াও রাহুলের সকল অনুষ্ঠানে তাঁর নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন থাকে। যা গভীর ও মনোগ্রাহী। রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতাকে নানা ভাবে, নানা আলোতে দেখার এক সুচারু প্রচেষ্টা তাঁর নিবেদনে ধরা পড়ে। প্রায়শই এই দেখাটি ধরা পড়ে অনুষ্ঠানের মুখবন্ধে। এ বার সেই মুখবন্ধটি একটি দীর্ঘ কবিতার রূপ নিয়েছে। উল্লেখ্য, এই কবিতাটিই অনুষ্ঠানে গীত সব ক’টি গানকে একটি সূত্রে গেঁথেছে। গানগুলির বাণী নিয়েই একটি নিবেদন থেকে অন্য নিবেদনের দিকে সেই মালা গেঁথে চলা। যা দীর্ঘ হলেও নিবেদনের নৈপুণ্যে শ্লথগতি হয়নি। দুই পর্বের শুরুতে এই অংশটিতে রাহুলের সঙ্গে নবীন কণ্ঠ চন্দ্রমৌলি ত্রুটিমুক্ত না হলেও আশার সঞ্চার করেন।

Advertisement

শুরুতে জয় গোস্বামী এক গভীর জীবনবোধে ‘নিভৃত প্রাণের দেবতা’, ‘প্রভু তোমা লাগি’ দিয়ে যখন প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন, রাহুল গভীর কণ্ঠে ‘জীবনসখা’কে ডেকে ওঠেন গানে গানে। ‘হেরি অহরহ’, ‘আজি নাহি নাহি’, ‘ডাকে বার বার’ আর ‘ঘোর রজনী’। জয় বৈরাগ্যে জেগে ওঠেন ‘সংসারে মন দিয়েছিনু’ কি ‘জানি হে যবে’। উদাসীনের প্রার্থনায় ভেসে ওঠে ‘নয়ান ভাসিল জলে’, ‘তোমার নয়ন আমায়’। দৃপ্ত ‘আমার প্রাণে গভীর গোপন’ (অন্য এক অর্থ খুঁজে নিয়ে এল এই গান)

জয় গোস্বামীর কণ্ঠে ‘ওগো আমার এই জীবনের’ কবিতাটি জন্ম নিল গান হয়ে। এর পর ‘দুখের বেশে’, ‘শ্রাবণের ধারার মতো’, ‘আমি মারের সাগর’, ‘আরও আঘাত সইবে’ (ঐকান্তিক ও মর্মস্পর্শী নিবেদন)।

Advertisement

রাহুল টপ্পাঙ্গ গানে সিদ্ধ। তাঁর কণ্ঠে ‘যা হবার তা হবে’ শুনতে পাওয়া বিরল অভিজ্ঞতা। ‘সফল জনম ভরে’ তপ-কীর্তনের যে রূপ তিনি তুলে ধরেন তা প্রশংসনীয়। জয় তাই নিখুঁত অনুভবে বলে ওঠেন ‘আঁধার আসিতে’, রাহুল গাইলেন ‘দিন যায় রে’। বহু দিন এই গানটি এমন গভীর ভাবে শোনা হয়নি।

জয় গোস্বামীর কণ্ঠে ‘আর নাইরে বেলা’ দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ‘প্রেম’ পর্যায়ের শুরু। সেই আবহে ‘ফিরবে না তা জানি’, ‘তোমার গীতি জাগালো স্মৃতি’, ‘মম রুদ্ধ মুকুল’, ‘ফিরে এসো বঁধূ হে’ গানগুলির কথা শ্রোতার স্মরণে থাকলে অনুধাবন করবেন কোন আকুতি দিয়ে এই নিবেদন।

কবিতার পারে এসে জয় ডাকলেন ‘এসো হে সজলঘন’, ‘আমি যে তোমায় জানি’। অনিবার্যভাবে এর পর রাহুলের কণ্ঠে জাগল পর পর চারটি সজল ঘন গান ‘আজি শ্রাবণ’ (পাখোয়াজ সঙ্গতে অনবদ্য স্মৃতি), ‘আমারে যদি জাগালে’ ও ‘আজি ঝড়ের রাতে’। বহু অশ্রুত ও স্বল্প প্রচলিত গানের পর মাঝে মধ্যেই রাহুলের প্রচলিত গানগুলি নতুন মাত্রা যোগ করে।

‘এক রজনীর বরষণে’ কী ‘প্রাণের সাধন যবে’ কবিতা দিয়ে জয় রাহুলের গলায় আনলেন ‘মম দুঃখের সাধন’, ‘দীপ নিভে গেছে’ ও ‘আমার সকল নিয়ে’। এই পর্বে রাহুল আরও একটি ব্যতিক্রমী কাজ করেছেন। সাধারণত মুক্তছন্দে গীত ‘ও চাঁদ চোখের জলে’ গানটির তালবদ্ধ রূপ শোনালেন। মধ্য বিলম্বিতে গীত গানটির শ্রুতিসুখ ভোলা অসাধ্য। অমোঘ রূপ নিয়ে তখন জয়ের কণ্ঠে কবিতা ‘ওগো মোর নাহি যে বাণী’, ‘আমি এখন সময় করেছি’। আর রাহুলের গলায় ‘বাণী মোর নাহি’, ‘বাজিল কাহার’ রাহুল ও জয়ের নির্ভুল বোঝাপড়ার ও অন্তর্মগ্নতাও অনুষ্ঠানের মাত্রা বাড়িয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষ গান ‘কী রাগিণী’ তে রাহুল নিজে গান হয়ে ওঠেন, অন্য জগতে নিয়ে যান শ্রোতারা।

শিল্পীদের সহযোগিতা করেন অম্লান হালদার, গৌতম চৌধুরী ও গৌতম হালদার।

পাঁচ শিল্পী, অনেক গান

রবীন্দ্রতীর্থ আয়োজন করেছিল পুরনো দিনের চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত জনপ্রিয় বাংলা গান। এ দিন অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, শম্পা কুণ্ডু এবং সুধীন সরকার। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় গাইলেন ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’। শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন ‘এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়’। মনোময় ভট্টাচার্য ও শম্পা কুণ্ডু দ্বৈত কণ্ঠে শোনালেন ‘চম্পা চামেলী গোলাপের বাগে’। প্রবীণ শিল্পী সুধীন সরকার শোনালেন ‘আমায় ডুবাইলি রে’, তাঁর নিজের গাওয়া ‘পাইনের ছায়া মাখা’। বিভিন্ন যন্ত্রে সহযোগিতায় ছিলেন দীপঙ্কর আচার্য, রানা সরকার, সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সায়ন গুহ। তবে দীপঙ্কর আচার্যের বাদ্য এ দিনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।

কর্ণ দ্রৌপদী

সুলগ্না বসু

সম্প্রতি ‘আবৃত্তিক’-এর ‘পায়ে পায়ে ৩১’ আবৃত্তিসন্ধ্যায় ছিলেন নূপুর বসু, রবীন মজুমদার, তন্দ্রা বিশ্বাস, ডালিয়া বসু সাহা, সুকুমার ঘোষ, সৌমিত্র মিত্র প্রমুখ। রবীন মজুমদারের কণ্ঠে শোনা গেল কবিতা কোলাজ ‘ভালবাসা ও ভালবাসা’। তাঁর নির্বাচনে ছিল শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী, পূর্ণেন্দু পত্রী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের কবিতা। ভাল লেগেছে তন্ত্রা বিশ্বাসের ‘ভরা বর্ষা’, ডালিয়া বসু সাহার ‘সকল কাঁটা’। সুকুমার ঘোষের এবং সৌমিত্র মিত্রের এ দিনের কবিতা আসরকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। শেষে ছিল রবীন মজুমদার ও সোহিনী অধিকারীর ‘কর্ণ দ্রৌপদী’। ধ্রুপদী আঙ্গিকে দুই নর-নারীর মানবিক দিক তাঁরা তাঁদের চর্চিত স্বরক্ষেপণে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ভোলেনি তিনকন্যা

শিখা বসু

আদ্যন্ত সঙ্গীতপ্রেমী মানুষ সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে মনে রেখেই রূপরেখা চট্টোপাধ্যায়, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় অনুষ্ঠান করলেন রবীন্দ্রসদনে। শক্তিব্রত দাস গাইলেন ‘বসে আছি পথ চেয়ে’। পরে রূপরেখা ও রাজ্যশ্রী। রূপরেখা ‘দূরে দূরে কাছে কাছে’ ও পরে ‘থুইলাম রে মন’। অপূর্ব গান। রূপরেখার গলায় মাদকতা আছে। রাজ্যশ্রীরও তাই। শেষে গাইলেন মনোজ-মনীষা মুরলী নায়ার। শুরু করলেন ‘বুঝি এল ওরে প্রাণ’ গানটি দিয়ে। মনীষা গাইলেন ‘উতলধারা বাদল ঝরে’। পরে যুগ্ম নিবেদন ‘পাগলা হাওয়া’। অনুষ্ঠানের সংযোজনায় মধুমিতা বসু। শেষে ছিল সায়ক নাট্যদলের নাটক ‘শ্যামা কালী’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement