বড় একা লাগে…

তাঁর লেখা গানটির মতোই আজ তিনি নিঃসঙ্গ। এ মাসে আশিতে। গীতিকার মিল্টু ঘোষকে দেখতে তাঁর বরাহনগরের বাড়িতে কৃশানু ভট্টাচার্যবিবর্ণ, অক্ষরহীন। তবু সাঁটা আছে নেমপ্লেটটা। বরাহনগরের মতিলাল মল্লিক লেনের পুরনো দোতলা বাড়ি। তারই সদর দরজায়। পাল্টাননি আর! ‘‘পাল্টেই বা কী আর হবে? কে আর মনে রেখেছে আমায়!’’ ম্লান হাসি বাড়ির কর্তার ঠোঁটে! তিনি মিল্টু ঘোষ। ষাটের দশকের বহু স্মরণীয় গানের কথাকার! শরীরের একটি কণাতেও প্রাচীন গরিমার লেশমাত্র নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৩
Share:

তখন এখন

বিবর্ণ, অক্ষরহীন।
তবু সাঁটা আছে নেমপ্লেটটা।
বরাহনগরের মতিলাল মল্লিক লেনের পুরনো দোতলা বাড়ি। তারই সদর দরজায়।
পাল্টাননি আর!
‘‘পাল্টেই বা কী আর হবে? কে আর মনে রেখেছে আমায়!’’
ম্লান হাসি বাড়ির কর্তার ঠোঁটে!
তিনি মিল্টু ঘোষ। ষাটের দশকের বহু স্মরণীয় গানের কথাকার!
শরীরের একটি কণাতেও প্রাচীন গরিমার লেশমাত্র নেই। অথচ এই মানুষটিই কিনা একদিন বাঙালি শ্রোতার হৃদয়ে নতুন করে সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল বুনে দিয়েছিলেন!
ঘরে বসে সে কথা তুলতেই প্রবীণ যেন হঠাৎই চনমনে!—
‘‘১৯৬৯-এ পুজোর আগে একটা দুর্দান্ত রোম্যান্টিক গান লেখার বায়না ধরল পিন্টু ভট্টাচার্য। ওই বছরেই বিয়ে করেছি। আমার মনে হল, তাজমহল তো ভালবাসা আর প্রেমের প্রতীক। তা হলে শাহজাহানের অমর কীর্তিকে নিয়ে একটি গান লিখলে কেমন হয়?’’
‘এক তাজমহল গোড়ো/ হৃদয়ে তোমার আমি হারিয়ে গেলে’— এই গানটিই রাতারাতি পিন্টু ভট্টাচার্যকে পৌঁছে দিয়েছিল জনপ্রিয়তার শিখরে।
পিন্টুর প্রথম রেকর্ডে দু’টি গানও লিখেছিলেন তিনিই। সুরকার শৈলেন মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

•••

Advertisement

ষাটের দশক।

‘চৌরঙ্গী’ ছবির গান তৈরি চলছে। হঠাৎ বিপত্তি।

পরিচালকের কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না মিল্টুর লেখা গান।

তার পর?

‘‘ছবির দু’টি গান আমায় লিখতে বলেছিলেন সুরকার অসীমা ভট্টাচার্য।’’

সেই প্রথম মান্না দে-র জন্য গান লেখা মিল্টুবাবুর। ‘বড় একা লাগে এই আঁধারে’ আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্য ‘জানি কোনও দিন হবে না সুদূর, কাছে রবে, কাছে রবে’।

‘‘আমার তো আনন্দের শেষ নেই। দু’টি গানই যে নায়ক উত্তমকুমারের ‘লিপ’-এ! এর আগে কোনও দিন মহানায়কের জন্য গান লেখার সৌভাগ্য হয়নি।’’

স্মৃতিচারণে মগ্ন প্রবীণ।—

‘‘গান নিয়ে আলোচনা করতে আমাকে ডেকে পাঠালেন অসীমা ভট্টাচার্য তাঁর বাড়িতে।’’

পৌঁছে দেখেন, পরিচালক পিনাকী মুখোপাধ্যায়ও হাজির। আর ঘর জুড়ে বসে আছেন স্বয়ং মহানায়ক।

বিপত্তির আঁচ একচু বাদেই, যখন বুঝলেন, ‘বড় একা লাগে’-র কথা পছন্দ হয়নি পরিচালকের।—

‘‘আমাকে প্রায় হুকুম করলেন, নতুন করে গান লিখতে হবে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

পিনাকীবাবুর ধারণা, সিচ্যুয়েশন অনুযায়ী ও-গান কখনওই যায় না। অথচ মিল্টু বুঝতেই পারছেন না, কেন যায় না! ফলে, চলল টানাপড়েন।

‘‘এমন অবস্থায় কোনও দিনই পড়িনি। তা-ও আবার স্বয়ং উত্তমকুমারের সামনে। তখন আমার গলদঘর্ম দশা।’’

পুরো ঘটনাটি মন দিয়ে লক্ষ করছিলেন উত্তমকুমার। শেষে রায় দিলেন তিনিই।

বললেন, ‘‘মিল্টুর গান এক্কেবারে ঠিক আছে পিনাকী, আমি তো পাল্টানোর কোনও প্রয়োজনই দেখছি না।’’

এই এক কথাতেই কাজ হল!

পিনাকীবাবু আর উচ্চবাচ্য করার সুযোগই পেলেন না।

এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা।

দু’টি গানই সুপারডুপার হিট। এমনকী গানপ্রেমীদের কাছে আজও তাদের সমান জনপ্রিয়তা।

•••

শুধু ‘চৌরঙ্গী’ নয়, ষাটের দশকে বাংলা গানের সেরা গীতিকারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনে রাখার মতো গান কম লেখেননি মিল্টুবাবু।

এক বারের কথা।

পুজোর আগে এইচএমভি-র নলিনী সরকার স্ট্রিটের অফিসে আড্ডা জমে উঠেছে। আছেন সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। হঠাৎ সেখানে হাজির তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘‘বললেন, এ বার পুজোয় একটা তোলপাড় করা গান চাই, বুঝলি মিল্টু। লিখে ফেল তো।’’

সে-রাতেই বাড়ি ফিরে গান লিখতে বসলেন মিল্টু— ‘‘লিখছি আর ছিঁড়ে ফেলছি। কোথায় সেই তোলপাড় করা গান! কিছুই মাথাতে আসছে না! হঠাৎ কী যেন একটা ঘটে গেল! ঝরঝর করে লিখে ফেললাম, ‘তোলপাড় তোলপাড় মনের কথা/ খুঁজে পাই না তারে আমি বলব যারে’। অভিজিতের সুরে আর তরুণদার থ্রোয়িংয়ে সেই গান সুপারহিট হয়ে গেল।’’

•••

ওঁর খ্যাতি তখন এমনই, এক বার স্বয়ং পঙ্কজ মল্লিকও মুগ্ধ হলেন।

সবে তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানটি বেরিয়েছে। ‘দোল দোল চতুর্দোলায় চড়ে আহা রূপবতী চলেছে ওই, দু’চোখে নতুন মনে ঘর বাঁধবার স্বপ্ন ঝরে’। কথা মিল্টু ঘোষের।

‘‘এইচএমভি-র কর্ণধার তখন পবিত্র মিত্র। আমাকে তাঁর ঘরে ডেকে এক দিন বললেন, আরে গানটা শুনে তো পঙ্কজবাবু খুব খুশি। বললেন, গীতিকারের সঙ্গে দেখা হলে বলবেন, গানের কথা আমার খুব ভাল লেগেছে।’’

নিজের কানে শুনেও যেন এ কথা বিশ্বাসই হচ্ছিল না মিল্টুবাবুর।— ‘‘আমি ভাবতেই পারিনি, পঙ্কজবাবুর মতো এমন নামীদামি গায়ক আমার লেখা গানের প্রশংসা করেছেন।’’

পুজোয় সুপারডুপার হিট হয়েছিল ওই গান।— ‘‘গানে গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ের পরে কী কী জিনিস ফেলে চলে যেতে হয়, তারই বর্ণনা ছিল। তরুণদা এত দরদ নিয়ে গেয়েছিলেন, আজও শুনলে মনে হয় ছবি এঁকেছিলেন যেন!’’

•••

চার দশকের গানজীবন শেষ। এখন তিনি স্বেচ্ছানির্বাসনে।

তবু একতলার ছিমছাম বসার ঘরে কেবলই যেন ঘোরেফেরে ষাটের দশকের মৌনমুখর ছবি।

এককোণে লাল শালুর আবরণে মোড়া তানপুরা। আলমারিতে সাজানো নানা ফলক। দেওয়ালে ঝুলছে সাদা-কালোয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ছবি। সেই পরিচিত ভঙ্গি। গম্ভীর, অভিজাত।

তারই দু’ পাশে টাঙানো মিল্টু ঘোষের দু’টি ছবি। ব্যাকব্রাশ করা চুল। ঈষৎ ঘাড় হেলানো যুবক।

যে দিন গিয়েছে চলে!

দেখতে দেখতে কেমন ঘোর লাগে!

ওই তরুণ গীতিকারই এক দিন লিখেছিলেন, ‘ও আকাশ সোনা সোনা/এ মাটি সবুজ সবুজ’, ‘ওগো বন্ধু আমার, আঁধার রাতেই যদি এলে’… !

আজ শুধু ওঁর হয়ে ছবিই কথা বলে!

•••

বিরলকেশ। ক্ষীণকায়। হাঁটাচলায় মন্থর। অক্টোবরের পয়লা আশি ছুঁয়েছেন। তবু স্মৃতি যেন কিছুতেই ঘোলাটে হওয়ার নয়!

একটু শুধু মুখড়া করে দিলেই চলে। বিস্তারে আজও সঙ্গ দিতে লাগে না কারও। পাশে বসে ছেচল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনের স্ত্রী শুভ্রা।

এক সময় লিখেছিলেন, ‘জীবনের অনেকটা পথ একলা চলে এসেছি’। গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। আজ সেই গীতিকারও পেরিয়ে এসেছেন কত কত পথ!

ষাটের দশকে তাঁর দৌড় যে সোজা ছিল না, তা কে না জানেন! গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল গুপ্তর মতো গীতিকাররা তখন জ্বলজ্বলে তারার চেয়েও বেশি আলো ছড়াচ্ছেন।

তা সত্ত্বেও তাঁদের পেরিয়ে মিল্টু এক-এক বার চলে যেতেন সবার আগে ফিনিশিং পয়েন্টে!

‘রবীন্দ্র সদন’-এর উদ্বোধনী উৎসবে যেমন। সমবেত সঙ্গীতের গীতিকার হয়ে গেলেন মিল্টু ঘোষ!

চিন-ভারত যুদ্ধের পরে ফৌজের জন্য টাকা তোলা হবে। ইডেন গার্ডেন্সে ক্রিকেট ম্যাচ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একাদশ বনাম কানন দেবী একাদশ। সেখানেও মিল্টু ঘোষ! তা’ও আবার বিচিত্র এক ভূমিকায়!—

‘‘রেডিয়োয় অদ্ভুত কায়দায় ধারাবিবরণীর ব্যবস্থা করা হল। ম্যাচ চলার সময় ধারাবিবরণী গানের মতো করে লিখে যাচ্ছিলাম আমি। ভি বালসারা সমানে তাতে সুর বসিয়ে যাচ্ছিলেন। কোরাসে সেই গান প্রচারিত হয়ে যাচ্ছিল রেডিয়োয়,’’ পুরনো কথা মনে আসতে হাসেন মিল্টুবাবু।

ওই ইডেন গার্ডেন্সেই ‘যুব উৎসব’-এর উদ্বোধনী। গান গাইবেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়-সহ নামীদামি গায়কেরা। তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে প্রায় হাজার কণ্ঠে যে গান শোনানো হয়েছিল, সেই গানের গীতিকারের নামও মিল্টু ঘোষ! সুরকার সেই ভি বালসারা।

•••

গীতিকার যে হবেন, এমন ভাবনা কিন্তু স্বপ্নেও ছিল না তাঁর!

স্কুল-কলেজে চুটিয়ে ফুটবল খেলতেন। নিয়মিত কবিতা লিখতেন।

‘‘গানের এক প্রতিযোগিতায় আলাপ হয়ে গেল বিচারক সুধীন দাশগুপ্তের সঙ্গে। যত দূর মনে হয় ১৯৫৬ হবে সেটা। কয়েকটা গান লিখে তাঁর সিঁথির বাড়িতে পৌঁছে দিতে বললেন। চারটে গান লিখে দিয়ে এলাম।’’

তার মধ্যে সুধীনবাবুর পছন্দ হয়ে গেল, ‘কাজল কাজল কুমকুম শিউলি ঝরে’।

মিল্টুবাবুর লেখা সেই গান গাইলেন স্বয়ং গীতা দত্ত।

‘‘সেই শুরু।’’

কিছু দিন পরেই যোগাযোগ গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে।

এর পর কার কার জন্য না গান লিখেছেন তিনি!

বড় হওয়া যৌথ পরিবারে। থাকতেন বেলেঘাটায়। চার ভাই আর ছ’বোন।— ‘‘বড় দুই ভাই পল্টু, টিট্টুর সঙ্গে মিলিয়ে আমার নাম রেখেছিলেন বাবা।’’

বঙ্গবাসী কলেজ থেকে পাশ করার পরে চাকরি রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরে। কিন্তু গান লেখা তখন তাঁর প্রায় নেশার পর্যায়ে।

প্রায়ই যেতেন অপরেশ লাহিড়ীর বাঁশদ্রোণীর বড়িতে। সেখানে গুণীদের আড্ডা বসত।— ‘‘গান নিয়ে নানা আলোচনার ফাঁকে উঠে আসত নতুন নতুন আইডিয়া। ওই আড্ডা যে আমায় কত কিছু শিখিয়েছে! আর শিখেছি হেমন্তদার কাছে। সঙ্গীতজ্ঞানে, অভিজ্ঞতায়, প্রভাবে, প্রতিপত্তিতে তাঁর মতো ফিগার সেই সময়ে বাংলায় কেউ ছিলেন না।’’

হেমন্তবাবুর সুরে অনেক গানই লিখেছেন মিল্টুবাবু। কিন্তু ‘অজানা শপথ’ ছবির দু’টি গানের কথা এখনও তাঁর মনে টাটকা হাওয়ার মতো আবেশ ধরায়, ‘‘যেন মনে হয় এই সে দিনের কথা। হেমন্তদার ব্যারিটোন ভয়েসে ‘ও আকাশ সোনা সোনা’ আর ‘ওগো বন্ধু আমার’। শুনলে মন যে কোথায় ভেসে যায়! যেমন ‘ওগো বন্ধু আমার, আঁধার রাতেই যদি এলে’ গানটা আমার মনে হয় আরতির অন্যতম সেরা গান।’’

বলছিলেন, মান্না দে-র জন্য ‘তুই কি আমার সেই পুতুল পুতুল মেয়ে’ লিখে খুব শান্তি পেয়েছিলেন। ‘‘মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। বাবার মনে মেয়ের শৈশবের নানা স্মৃতি। কী অনবদ্য গেয়েছিলেন মান্নাদা!’’

কিছুতেই ভুলতে পারেন না মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়কেও! ভুলবেন কী করে! ওঁকে বাজি রেখেই তো মানবেন্দ্র অদ্ভুত এক ফাটকা খেলেছিলেন পুজোর গানে।

‘‘১৯৬৪-৬৫ সাল। পুজোয় সে বার শ্যামল গুপ্ত বা গৌরীদা নয়, আমি গান লিখলাম ওঁর। এক পিঠে ছিল ‘যদি আমাকে দেখো তুমি উদাসী,’ অন্য পিঠে আমার লেখা ‘সেই চোখ কোথায় তোমার, যে চোখ দিয়ে তুমি আমায় প্রথম দেখেছিলে’। আজও শুনি। গায়ে কাঁটা দেয়! কোথায় আর সেই সব গান!’’

•••

ইদানীং ঝাপসা দেখেন বাঁ চোখে। মাইল্ড-স্ট্রোকে কখন যে এমনটা হয়েছে, জানতেও পারেননি! ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়েই চেয়ে ছিলেন দেওয়ালে টাঙানো ছবির দিকে।

হঠাৎ ঠোঁটে এক টুকরো হাসির রেখা! তার পরই বললেন, ‘‘কী যে সব দিন ছিল! চার ধারে সব দিকপাল সুরকার-গীতিকার। তাঁদের গান-আলাপের যেন শেষ কথা বলে কিছু নেই। অভিজিতের সুর শুনে সুধীনদা কিংবা রতু মুখোপাধ্যায় সাজেশন দিচ্ছেন… ‘এইখানে সুরটাকে একটু অন্য রকম করে দাও অভিজিৎ।’ আবার তাঁদের সুর শুনে সাজেশন দিচ্ছেন অভিজিৎও।’ এ সব আজ ভাবা যায়!’’

•••

দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামব-নামব করছে। তবু প্রবীণের যেন ক্লান্তি নেই। কথার বাঁকে দাঁড়িয়ে কেবলই মনে হচ্ছে, এই প্রান্ত দিনেও গানই যেন তাঁর সঞ্জীবনী সুধা।

‘‘চুনী গোস্বামীকে আমি কখনও ভুলতে পারব না। না, না, আমি ফুটবলের কথা বলছি না।’’

বেসিক গান লেখার পরে সেই প্রথম বাংলা ছবির জন্য গান লেখার ডাক পেলেন মিল্টুবাবু।

‘‘ছবির নাম ‘প্রথম প্রেম’। এই ছবিতেই অভিনয় করেছিলেন যে চুনী গোস্বামী!

এক সময় বন্ধু ছিলেন অভিনেতা বিশ্বজিৎও। তাঁর ‘রেঞ্জার সাহেব’ ছবির গানও তাঁর লেখা। বিশ্বজিতের প্রথম বেসিক গান ‘তোমার ওই হরিণ চোখে পলক চাওয়া’। লেখার ভার পড়েছিল মিল্টুবাবুর উপরেই। ‘শোরগোল’ ছবিতে তাঁর লেখা গান ছিল টুনটুনের গলায়।

স্মৃতি এখনও ভিড় করে নামে!

‘‘তবে বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা কমতে কমতে এখন একেবারে তলানিতে। গান লেখা ছেড়ে দেওয়ার পরে আর তেমন কেউ আসে না আমার কাছে।’’

সারাটা দিনে তবে কী করেন?

‘‘ভোর পাঁচটায় উঠি। ঘরের মধ্যেই পায়চারি করি। বেলার দিকে কোনও কোনও দিন বেরিয়ে পড়ি। সামনের রাস্তাটায়। বাড়ি ফিরে স্নান, খাওয়া। দুপুরবেলাটা যেন কাটতে চায় না। তখন গান শুনি। নিজের লেখা গান শুনতে বেশ ভাল লাগে। বিকেল হলে একটু হাঁটতে বেরোই। এই… আর কী!’’

•••

নির্ঝঞ্ঝাট সংসার। ছেলে শঙ্খ চাকুরে। নাতি গুগুল। অর্থনীতিতে এমএসসি মেয়ে মোনালিসা বিয়ের পর এখন স্বামীর সঙ্গে আমেরিকায় প্রবাসে।

নিজের থেকে হঠাৎই বললেন, ‘‘গীতিকার হিসেবে এক জীবনে যা পেলাম, ক’জন তা পায়? কত গুণী মানুষের সঙ্গ পেয়েছি। শ্রোতাদের আনন্দ দিয়েছি। আর কী চাই?’’

এই মানুষটিই না কিছুক্ষণ আগে বলছিলেন, আজ আর কেউ আসে না, কে আর মনে রেখেছে আমায়!

ধন্দ লাগে কথায়!
ঘরের মধ্যে কমে আসা আলোয় প্রবীণের মুখটাও স্পষ্ট ধরা পড়ে না! ধোঁয়াশাটুকু থেকেই যায়!

সাক্ষাৎকার শেষ।

বাড়ির সামনের শুনশান রাস্তায় সোনা রোদে তখন টান পড়েছে।

ম্লান আলোটুকু নিভে আসবে একটু পরেই।

বাড়ি ছেড়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেন মিল্টু ঘোষ।

দু’আঙুলের ফাঁকে ধরা জ্বলন্ত সিগারেট।

বাতাসের গায়ে তখন কে যেন কথা বসিয়ে চলেছে, একান্তে, আনমনে—

‘মেঘের খেলা আকাশে পারে…।’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement