গানে-নৃত্যে ‘হে নটরাজ’

মনোজ ও মধুবনীর যৌথ নিবেদনে। লিখছেন বারীন মজুমদারমধুসূদন মঞ্চে মনোজ মুরলী নায়ার ও মধুবনী চট্টোপাধ্যায় সঙ্গীত ও নৃত্যের যুগ্ম অনুষ্ঠান করলেন ডাকঘর-এর প্রযোজনায় ‘হে নটরাজ’। কেবলমাত্র গান ও নাচের সমাহারে বিষয়বস্তুর সুন্দর উপস্থাপন করা হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share:

মধুসূদন মঞ্চে মনোজ মুরলী নায়ার ও মধুবনী চট্টোপাধ্যায় সঙ্গীত ও নৃত্যের যুগ্ম অনুষ্ঠান করলেন ডাকঘর-এর প্রযোজনায় ‘হে নটরাজ’। কেবলমাত্র গান ও নাচের সমাহারে বিষয়বস্তুর সুন্দর উপস্থাপন করা হয়েছে।

Advertisement

পূজা ও প্রার্থনা পর্যায়ের ব্রক্ষ্মসঙ্গীত ‘মহাবিশ্বে মহাকাশে’ গানটি দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। এর পরেই মনোজ গাইলেন ‘জয় হোক নব অরুণোদয়’ যার সঙ্গে নাচ সংযুক্ত হয়নি। মধুবনী ভরতনাট্যমের শিল্পী। গীতবিতানের বিচিত্র পর্যায়ের গান ‘নৃত্যের তালে তালে’তে মধুবনী দেখালেন নটরাজের নৃত্যভঙ্গিগুলির যে ঋজুতা, পৌরুষের দৃপ্ততা আবার একই সঙ্গে স্নিগ্ধতাও কী অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। সঙ্গে মনোজের গানটিও ছিল সঠিক মাত্রায় বাঁধা। শিল্পীর মেজাজ ফুটল ‘অসীম কালসাগরে’ গানটিতে। তালবাদ্যে বিপ্লব মন্ডল ছিলেন বলেই এদিন তিনি অন্য মেজাজে। তাই গানগুলিকে এক গভীরতায় ধরেছেন। মধুবনী নৃত্যরচনার বিভিন্ন প্রকরণকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে করে তুলেছেন আরও নান্দনিক। চমৎকার নৃত্য। প্রত্যেকটি যুগ্ম নিবেদনই নিখুঁত। তবুও উল্লেখ করতে হয় ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে’ গানটি। সরোদে ছিলেন সুনন্দ মুখোপাধ্যায়। পারকাশনে সঞ্জীবন আচার্য। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে তরুণ চিত্রশিল্পী অসিত মন্ডলের সদ্য প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করা হয়।

Advertisement

সত্তরেও তরতাজা
আশিস ভট্টাচার্যের একক গানে

সম্প্রতি ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে ‘দক্ষিণ কলকাতা নান্দনিকী’ এক আনন্দসন্ধ্যা উপহার দিলেন তাদেরই একমাত্র সঙ্গীতশিক্ষাগুরু আশিস ভট্টাচার্যের সত্তরতম জন্মদিন উপলক্ষে। প্রথমার্ধে ছিল শিক্ষার্থীদের গাওয়া সমবেত রবীন্দ্রসঙ্গীত, যা পাঠের সূত্রে নির্বাচিত। সমবেত গানগুলি সুগীত।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথমেই অধ্যাপক পিনাকী ভাদুড়িকে সম্মাননা জানানো হল, এই অনুষ্ঠানের ভাষ্য-নির্মাতা হিসেবে। তারপরই শিক্ষক আশিস ভট্টাচার্যকে বরণ করে মানপত্র প্রদান করলেন এই শিক্ষাগোষ্ঠীর সদস্যেরা। মানপত্রটি রবীন্দ্রভাবনা জারিত ভূমিকা সহ আন্তরিক লাবণ্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ কন্ঠে, উচ্চারণে পাঠ করে শোনালেন মনীষা বসু।

এর পরই ছিল আশিস ভট্টাচার্যের একক গানের অনুষ্ঠান। আচার্য শৈলজারঞ্জনের সঙ্গে এই প্রজন্মের পরিচয় সেভাবে না থাকলেও তাঁর উপযুক্ত ছাত্র হিসেবে আরও কয়েকজন নামী সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আশিসবাবুর নাম অগ্রগণ্য। এ দিন প্রথমেই তিনি গাইলেন ‘আমারে করো জীবনদান’। অতি চমৎকার নির্বাচন। পরপর ষোলোটি গান তাঁর অনায়াস গায়কিতে পরিবেশন করলেন সেদিন, যা একটা অভিজ্ঞতার সংযোজন। স্বল্পশ্রুত গানগুলি শোনার অবকাশ বরাবরই শিল্পী করে দেন। যেমন- ‘অমৃতের সাগরে’, ‘শান্তি করো বরিষণ’, ‘তোমায় যতনে রাখিব হে’, ‘যারা কথা দিয়ে’, ‘কেন ধরে রাখা’ ও ‘যে যাবে চলে’ ইত্যাদি।

তরতাজা গানে
‘ব্রতী’র প্রযোজনায়। লিখছেন বারীন মজুমদার

ব্রতী’র প্রযোজনায় রবীন্দ্রসদনে অপালা বসু (সেন)র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হল ‘বৃষ্টি নেশা ভরা’। অনেক সুন্দর নবীন কণ্ঠ। সঞ্চালনায় ছিলেন রাজা ও মধুমিতা বসু।

ইমন চক্রবর্তী ও সম্মেলক কণ্ঠে ‘ওই আসে’ দিয়ে সূচনা ও ‘শ্রাবন তুমি’ গানে অনুষ্ঠানের শেষ। পঁয়ত্রিশটি গানের অধিকাংশই ছিল একক কন্ঠে, কিছু যুগ্ম কন্ঠে। যাঁরা একক করেছেন তাদের মধ্যে প্রথমেই নামোল্লেখ করতে হয় বিনম্র পাত্রর। গাইলেন ‘এসেছিলে তবু’। তরতাজা সজীব কন্ঠ। সুন্দর গেয়েছেন ইমন চক্রবর্তী ‘এমন দিনে’। শিঞ্জিনী চক্রবর্তীর ‘পিনাকেতে লাগে’ অপূর্ব। সোমা রায়ের ‘যখন গহন রাত্রি’ তেমন ব্যাপ্তি পায়নি। যেমন পায়নি অর্ণব দাশের ‘জানি তুমি’। কন্ঠের তীক্ষ্ণতাটুকু বাদ দিলে প্রিয়াঙ্গী লাহিড়ীর ‘কোথা যে উধাও হল’ ভালই। অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাকরণগত দিক দিয়ে দক্ষ হলেও পরিবেশনায় আরও ধীর স্থির হতে হবে। নির্মাল্য ভট্টাচার্য-র ‘কৃষ্ণকলি’, অরূপ সমাদ্দারের ‘বর্ষণ মন্দ্রিত’, কস্তুরী দত্ত-র ‘আজ শ্রাবণের’, অনুরাগ দত্ত-র ‘আজি ঝড়ে’ মানিয়েছে গায়কির গুণে। বাকিরা তেমনভাবে মন কাড়েন না। শেষে সংযত, সুরঋদ্ধ ও মুক্তকণ্ঠে অপালা বসু (সেন) শোনালেন ‘বন্ধু রহো রহো সাথে’ যার রেশ প্রেক্ষাগৃহের কোণে কোণে ছড়িয়ে পড়ল।

তাল ও ছন্দের মেলবন্ধন

রবীন্দ্র পরিষদ আয়েজিত অনুষ্ঠানে গানে ছিলেন সুনন্দা ঘোষ ও পাঠে অমলেন্দু ভট্টাচার্য। সুনন্দার প্রথম গান ভৈরবী রাগে ত্রিতানে ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’। উপস্থাপনা ও গান নির্বাচন যথাযথ।

ভৈরবী রাগের উপর তেওড়া তালে ‘ধ্বনিল আহ্বান মধুর গম্ভীর’ ধ্রুপদাঙ্গের গানটিও শিল্পী দক্ষতার সঙ্গে পরিবেশন করেন। ঝাঁপতালে ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’, ‘অন্ধকারের উৎস হতে’ ভৈরবী রাগে বেশ আবেগঘন পরিবেশ তৈরি করে। ‘বিশ্বসাথে যোগে’ কাহারবা তালের এই গানটিতেও শিল্পী তাল ও ছন্দের সুন্দর মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। সবশেষে গাইলেন ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’। সবশেষে প্রশংসা করতে হয় অমলেন্দু ভট্টাচার্যের পাঠের অংশ।

প্রাণ ভরিয়ে
শিখা বসু

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ যোধপুর পার্ক গীতিকা কালচারাল সোসাইটির আয়োজনে শচীদুলাল দাসের রচনায় নিবেদিত হল রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ও নাটকের নির্বাচিত গান। আবৃত্তিতে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও বরুণ চন্দ। সঙ্গীত পরিচালনায় চন্দ্রাবলী রুদ্রদত্ত। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর উপস্থাপনা ছিল আন্তরিক। হাসি কান্না ভালবাসা স্বরলাবণ্য-সবকিছু শুধু তাঁর বাচিকে নয়, অভিব্যক্তিতেও। বরুণ চন্দও সমান আন্তরিক।

গানে ছিলেন চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, প্রদীপ দত্ত ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়। চন্দ্রাবলীর ‘আমি চিত্রাঙ্গদা’, সুব্রত-চন্দ্রাবলীর দ্বৈত ‘কেটেছে একেলা’ অপূর্ব। প্রদীপ গাইলেন ‘এলেম নতুন দেশে’। প্রদীপ ও সুব্রত গাইলেন ‘ন্যায় অন্যায় জানিনে’। নবীনা দীপাবলী গাইলেন ‘বলো সখী বলো’ পরিণত শিল্পীর দক্ষতায়। নাচে অভিরূপ সেনগুপ্ত ভাল, বিশেষ করে প্রদীপের গাওয়া ‘গহন ঘন ছাইল’ গানটির সঙ্গে।

শুধু ভক্তিতে

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ শোনা গেল মঞ্জুষা চক্রবর্তীর একক ভক্তিমূলক গান। সংস্কৃত মঙ্গলাচরণ স্তোত্রের পর শিল্পী গাইলেন ‘প্রভু আমার’। তুলসীদাসের ভজন, নজরুলের কীর্তন, গিরিশ ঘোষ ও দাশরথি রায় রচিত পুরাতনী গানও শোনালেন তিনি। ভাষ্যপাঠে দেবাশিস বসু। স্বামী দেবানন্দ ব্রক্ষ্মচারী ও রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী পূর্ণাত্মানন্দের ধর্মালোচনা এদিনের অন্যতম প্রাপ্তি।

সুকান্তের কবিতায়

সম্প্রতি জীবনানন্দ সভাঘরে আবির্ভাব আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাপস নাগ উদাত্ত কণ্ঠে ও সুস্পষ্ট উচ্চারণে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘জাগবার দিন আজ’ কবিতাটি শোনালেন। অপূর্ব উপস্থাপনা। এছাড়া রবীন্দ্র-গৌতমের কণ্ঠে ‘নাসিক হইতে খুড়ার পত্র’ কবিতার আবৃত্তি মনোগ্রাহী। সংস্থার শিল্পীদের মধ্যে মিতা ঘোষের ‘পূর্ব-পশ্চিম’ এবং দেবাঞ্জন রায়চৌধুরীর ‘প্রশ্ন’ কবিতাটি বেশ উপভোগ্য। নীহারেন্দু ভট্টাচার্যের আবৃত্তি অন্য মাত্রা এনে দেয়।

চোখের বালি

শিশির মঞ্চে ছন্দকের শ্রুতিনাটক ‘চোখের বালি’র পরিচালনায় ছিলেন স্বপন গঙ্গোপাধ্যায়। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, পাপিয়া চক্রবর্তী, কাকলি ঘোষাল, শিখা বিশ্বাস, সোমা সাহা ও শঙ্কর রায়চৌধুরির অভিনয় অনবদ্য। নাটকের আবহে ছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement