কাজ থাকুক কিন্তু ব্যথা নয়

কর্পোরেট দুনিয়ায় দম ফেলার সময় নেই। কিন্তু শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে তো! জীবক মুখোপাধ্যায়ের মুখোমুখি রুমি গঙ্গোপাধ্যায়কর্পোরেট দুনিয়ায় দম ফেলার সময় নেই। কিন্তু শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে তো! জীবক মুখোপাধ্যায়ের মুখোমুখি রুমি গঙ্গোপাধ্যায়

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০০:০৪
Share:

প্র: কর্পোরেট অফিসে চাকরি। বাড়িতে ছেলের সঙ্গে খেলতে গিয়ে বিপদ। কোমরে হ্যাঁচকা টান, ব্যথা। উপায় কী?

Advertisement

উ: বিশ্রাম নিন। বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। ব্যথার জায়গায় শুকনো সেঁক দিন।

প্র: একটুতেই এমন বেহাল দশা...

Advertisement

উ: শরীরকে ঠিক রাখতে নিয়মিত স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করুন। খাওয়াদাওয়া সময় মতো সারুন। আর ঠিক পশ্চারে বসা অভ্যাস করুন। তাতেই ভাল থাকবেন।

প্র: নিয়মিত এক্সারসাইজের সময় নেই। কোনও দিন লেট নাইট পার্টি অথবা কোনও দিন কাজ মিটতে মাঝরাত। সকালে উঠেও বাড়ি থেকেই অফিসের কাজ শুরু।

উ: ঘড়ি ধরেই রোজ এক্সারসাইজ করতে হবে, তা কিন্তু একেবারেই নয়।

প্র: এক্সারসাইজ নিয়মিত করব না?

উ: সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন করলেই হবে। নিয়মিত করতে হলে ব্যাপারটা যেন জোর করে চাপানো হয়ে যায়। আর জোর করে ডিপ্রেসড মুডে এক্সারসাইজ তেমন ফলপ্রসূ হয় না। ব্যাপরাটা এনজয় করলে তবেই কাজ হবে।

প্র: ডিপ্রেসড বলতে?

উ: অনেকে বলেন, এক্সারসাইজ করেননি বলে সে দিন শরীর ম্যাজম্যাজ করছে, মুড ভাল নেই, বা রাতে ঘুম হল না। এমনটা হলেও এক্সারসাইজ ভাল কাজ দেবে না।

প্র: সকালে রোজ ট্রেডমিলে ছুটতেও ভাল লাগে না...

উ: ট্রেডমিল বা ক্রসট্রেনার ব্যবহার না করাই ভাল।

প্র: ট্রেডমিল কী দোষ করল? ওজন কমানোর জন্যই তো ট্রেডমিল?

উ: বেশি ওজন নিয়ে ট্রেডমিলে দৌড়লে পরে হাঁটুর অসুবিধে হতে পারে।

প্র: তবে? ওজন কমাবো কী করে?

উ: ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করবেন। ব্রিজ ওয়াকিং আর সুইমিং ভাল। অ্যারোবিক ডান্সও ভাল কাজ দেয়। তবে খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও খুব জরুরি। কারণ শুধু এক্সারসাইজ করলেই যে আপনার ওজন কমবে, তা কিন্তু নয়। অনেককেই দেখবেন নিয়মিত ঘাম ঝরাচ্ছে, কিন্তু ওজন কমাতে পারছেন না। ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া আর প্রফুল্ল মনে শরীরচর্চা- দুটো এক সঙ্গে করতে পারলে তবেই কাজ হবে।

প্র: যাঁদের হিল্লি-দিল্লি ঘুরে বেড়াতে হয় বা বিদেশ যেতে হয় তাদের ক্ষেত্রে?

উ: যখন সময় পাবেন তখন হালকা কিছু ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করবেন। হালকা খাবার খাবেন। সেই জায়গার আবহওয়া অনুযায়ী পোশাক পরবেন। একাকীত্ম আর ডিপ্রেশন এড়াতে রাতে ঘুমোনোর আগে মিনিট দশেক মেডিটেশন করবেন।

প্র: এর পরও যদি ব্যথা শুরু হয়ে যায়?

উ: যদি দেখেন আগে ব্যথা হলেও বিশ্রাম নিলে সেটা কমে যেত, কিন্তু এখন আর বিশ্রাম নিলেও কমছে না, তবে অবশ্যই ফিজিয়োথেরাপি শুরু করে দিতে হবে। সব সময় চেষ্টা করবেন সঠিক পশ্চারে ঠিক জায়গা মতো বসতে। নইলে ব্যথা আপনাকে ছাড়বে না।

প্র: ঠিক জায়গা মতো বলতে?

উ: নিচু জায়গায় বসবেন না। বসার সময় শিরদাঁড়া সোজা রাখবেন। অফিসে কাঠের চার পা যুক্ত চেয়ারে বসতে পারলে ভাল হয়। কোমরে ব্যাক রেস্ট রাখবেন। কখনই পা মুড়ে বসবেন না।

প্র: অফিসে নয় কিন্তু বাড়িতে তো পা মুড়ে বসতেই বেশি আরাম...

উ: ঘন ঘন হাঁটু বা পা মুড়ে বসলে জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।

প্র: তা বলে মাটিতে বসে আড্ডা নয়?

উ: সে এক আধবার বসলে কিছু হবে না। দিনের পর দিন এ ভাবে বসা অভ্যাস হলে কিন্তু মুশকিল। নিচু জায়গায় বসলেও ওঠার সময় কিছুর সাপোর্ট নেবেন।

প্র: অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিটিং চলে। প্রেজেন্টেশনও থাকে। তখন তো দাঁড়িয়ে থেকে কোমর ধরে যায়। সেখানে এত সব নিয়মটিয়ম মাথায় থাকে?

উ: শরীরকে সুস্থ রাখতে করতে হবে। নিয়মিত দাঁড়িয়ে কাজ করলে শুধু কোমর কেন হাঁটু আর পায়ের পাতারও বারোটা বাজবে।

প্র: তবে?

উ: সে রকম হলে পায়ের কাছে একটা ফুট রেস্ট রাখবেন। নিদেনপক্ষে একটা ছোট টুল। মাঝে মাঝে তার ওপর একটা পা তুলে দেবেন। সামনে ডায়াস বা উঁচু প্ল্যাটফর্ম থাকলে তার ওপর পা তুলে রাখলেন। তাতে সমস্যা মিটবে।

প্র: প্রেজেন্টেশনের সময় এ রকম পা তুলে দাঁড়ানো যায় না কী?

উ: এটা না পারলে ওয়াশরুমে গিয়ে কিছু ক্ষণ ফুট-অ্যাঙ্কল এক্সারসাইজ করবেন।

প্র: সেটা কী?

উ: আঙুলের ওপর আর পেছনের হিলের ওপর ভর দিয়ে মিনিট দুই-তিন হাঁটবেন। মানে হিল ওয়াক আর টো ওয়াক। অফিসে কোনও উঁচু জায়গায় বসে দুই পা খানিক দুলিয়ে নেবেন। এতে হাঁটুর ওপর চাপ কম পড়বে। তাতেই কাজ হবে।

প্র: বলছেন কী! অফিসে এ সব সম্ভব?

উ: ইচ্ছে থাকলেই সম্ভব। দুই-তিন ঘণ্টা অন্তর দুই মিনিট এমন কিছু নয়। কাজ শুরুর আগে মিনিট পাঁচেক একটু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ।

প্র: এমনটা করতে পারলে ভবিষ্যতে ব্যথার সমস্যা এড়ানো যাবে বলছেন?

উ: অনেকটা।

প্র: হাঁটুর ব্যথাও?

উ: হাঁটুর ব্যথার জন্য ফিজিয়োথেরাপিস্টের পরামর্শ মতো ওয়েট কাফ বেঁধে পা’কে পঞ্চাশ বার মতো দোলাতে হবে। ৩০-এর পর থেকে এমনটা করতে পারলে ভবিষ্যতে অস্টিয়োআর্থারাইটিসের সম্ভাবনা কমবে। পাশাপাশি নিজের ওজনও যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

প্র: কিন্তু সমস্যা না হলেও এ সব করব?

উ: সমস্যা যাতে না হয় তার জন্যই তো এ সব করা। কর্পোরেটে যাঁরা একটানা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন, তাঁরা তো করবেনই। আগে বুঝতে হবে শরীরের কোন অংশের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এ জন্য ছোটখাট কিছু ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে ব্যথা-ট্যাথা অনেক কম হবে।

প্র: কী রকম?

উ: খুব বেশি ল্যাপটপ ব্যবহার করলে আলাদা করে মাউস ব্যবহার করবেন। নইলে স্বল্প পরিসরে বার বার কাজ করতে করতে আঙুল আর কবজির অবস্থা খারাপ হবে। কম্পিউটারের স্ক্রিন যেন চোখের লেভেলে থাকে। এক পাশে কম্পিউটার রেখে ঘাড় বেঁকিয়ে স্ক্রিন দেখবেন না। আর আগে ভাগেই নানা রকম এক্সারসাইজ করে মাসলকে শক্তপোক্ত করে রাখতে হবে। দরকারে ফিজিয়োথেরাপিস্টের কাছে যাবেন। একটা ঘটনা আজকাল প্রায়ই ঘটে। ধরুন এমনিতে কেউ ফিট। স্কুল কলেজে খেলাধুলো ভালই করতেন। তিনিই অনেক দিন পর কর্পোরেটের স্পোটর্স-এ খেলতে গিয়ে এমন আঘাত পেলেন যে ঘাড় আর নাড়াতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে আগেই ফিজিয়োথেরাপিস্টের কাছে গেলে জানতে পারবেন আপনি খেলার জন্য ফিট কি না।

প্র: একটানা ড্রাইভিং-এ আঙুলে ব্যথা হয়। ঘুম থেকে উঠে পা ঝিনঝিন করে।

উ: এমন জুতো পরবেন যা পা’কে আরাম দেয়। চলাফেরার সময় বেশ বাউন্সি লাগে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন বাড়ি ফিরে গরম জলে কিছু ক্ষণ পা ডুবিয়ে রাখবেন।

প্র: তবে ভাল থাকার উপায়?

উ: কাজে ঢোকার আগে মিনিট পাঁচেক স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করবেন। কাজের মাঝে পাঁচ মিনিটের জন্য আবার। অফিস খুব ঠান্ডা হলে হালকা জ্যাকেট রাখুন। স্কিন টাইট নয়।

যোগাযোগ- ৯৮৩০০৫৩৬০৫

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement