রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পরম স্নেহের পাত্রী। ইন্দিরা যিনি সকলের কাছে ‘বিবিদি’রূপে পরিচিত ছিলেন তিনিই ছিলেন তাঁর প্রথম যুগের গানের ভাণ্ডারী। তাঁর রচনা থেকে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁদের পরিবারের নানা তথ্য যেমন জানা যায়। তেমনই জানা যায়, তাঁর নপিসিমা স্বর্ণকুমারী দেবীর কন্যা সরলা দেবীর সঙ্গে তাঁর হরিহর-আত্মা সম্পর্কের কথা। এই স্মৃতিকথন ও আরও কিছু চিঠিপত্রের উপর ভিত্তি করেই হয়তো রচিত হয়েছে ‘দেন সিঙস্ মাই সোল- রিফ্লেকশন অন মেমোরিজ ফ্রম ইন্দিরা দেবী ও সরলা দেবী। সম্প্রতি আইসিসিআর প্রেক্ষাগৃহে এই ‘ভবানীপুর বৈকালী’র সহযোগিতায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক আসরের শিল্পী ছিলেন ইংল্যান্ড নিবাসী যুবক ঋষি বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি নিজেই এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পক। আলেখ্যটির ভাষ্য রচনা এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন প্রমিতা মল্লিক।
চমৎকার কণ্ঠ তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব। কেবলমাত্র কণ্ঠে একটু মডিউলেশনের প্রয়োজন যা হয়তো ক্রমশ চর্চার সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যাবে। তাঁর গান শুনলে বোঝা যায় পাশ্চাত্য-ধ্রুপদী সঙ্গীতের চর্চা তাঁর সম্পূর্ণ আয়ত্তে। তিনি এদিন গান শুরু করলেন ‘বিশ্ববীণা রবে’ বসন্তের অংশ দিয়ে। পরে গাইলেন ‘গুড বাই’! ক্রমশ এল ‘আজি শুভদিনে’, ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’। এরই মধ্যে প্রমিতা একটু অংশ শোনালেন ‘আয়লো সজনি সবে মিলে যে’ গানটি রবীন্দ্রনাথ কালমৃগয়া গীতিনাট্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন ‘আজু সুরল মন মোরে’র অনুকরণে। টুকরো টুকরো গানের সঙ্গে প্রমিতার পাঠও ছিল সমান আকর্ষণীয়। ‘আনন্দলোকে’ গানটি মূলত সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া হয়। ‘বড় বেদনার মতো’ গানটিতে প্রিলিউড ও ইন্টারলুডে বাঁশির (সৌম্যজ্যোতি ঘোষ) ব্যবহার অন্য আবহ তৈরি করে দেয়। তবে ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ’ বা ‘কে গো অন্তরতর সে’ তেমন ভাবে মনে রেখাপাত করে না যতটা করে ‘লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ বা ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’।
কবিতা যখন প্রতিবাদে
অমিত-শ্রুতি-র পরিচালনায় বাংলা আকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল কবিতা পাঠ ও শ্রুতি নাটকের অনুষ্ঠান। শুরুতেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন আদ্রিতা মুন্সী। ভাল লাগে ছোটদের শ্রুতিনাটক ‘মাষ্টার মশাই’। এ দিনের মূল অনুষ্ঠান ছিল ‘দোঁহারে দেখেছি দোঁহে’। পরিবেশনায় ছিলেন দেবাংশু মুন্সী এবং মমতা মুন্সী। প্রথম পর্যায়ের নিবেদনে ছিল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং জীবনানন্দের নির্বাচিত কবিতা পাঠ। এর পরে ‘কবিতা যখন প্রতিবাদে প্রতিরোধে’। ‘দেশকে ছুঁয়েছি পাথরে’ কবিতা কোলাজের পর্বটি বিশেষভাবে ছুঁয়ে যায় দর্শক মন। যেখানে উঠে আসে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ এবং স্বাধীনতার অপ্রাপ্তির কথা। শেষে পরিবেশন করলেন শ্রুতিনাটক ‘আজ আমরা একা’। সৃজিতা মুন্সী পাঠ করলেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা। সঞ্চালনায় স্বর্ণাভ রায়।
পিয়ালী দাস
কথার শব্দনীড়
শব্দনীড় আয়োজিত ‘শুধু কবিতার জন্য’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি শুধু সু-পরিকল্পিত নয়, কবি ও কবিতা নির্বাচনেও প্রশংসা পাবেন মানসী বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন প্রণতি ঠাকুর, কাজল সুর, দেবেশ ঠাকুর, দেবব্রত দত্ত, রবীন ভট্টাচার্য, নন্দন সিংহ, কৃষ্ণপদ দাস, মানসী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। এ ছাড়াও বেশ কয়েকজন নবীন শিল্পী তাঁদের দক্ষতা দেখাতে পেরেছেন নিঃসন্দেহে। সঞ্চালনায় ছিলেন চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাশ্বতী গুহ। পাঠে নজর কেড়েছেন মানসী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অন্য ছবি অন্য রকম’, ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’, ‘দীপ’ তাঁর কণ্ঠে অন্য মাত্রা পায়।
এক সুরের..
সম্প্রতি ইন্দুমতী সভাগৃহে অনুষ্ঠিত হল ‘এক সুরের সন্ধ্যা’। শোনা গেল রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে দ্বিজেন্দ্রগীতি। বাউল, ভাওয়াইয়া, লালন থেকে সুবীর সেন, মান্না দে’র গান। প্রথমেই সমবেত গান শোনালেন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা’ ও ‘আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা’। এর পর চিন্ময় আদক পরিবেশন করলেন ‘আল্লা ম্যাঘ দে’, ‘নাও ছাড়িয়া দে’, ‘বেঁধেছি এমনই ঘর’, ‘সাগর কূলের নাইয়া’ প্রভৃতি গানগুলি। কণ্ঠ মাধুর্যে এবং গায়কির গুণে গানগুলি শ্রোতাদের মন জয় করে নেয়। সব শেষে সৌরভ চাকী পরিবেশন করলেন ‘মন মাতাল সাঁঝ সকাল’, ‘পাগল হাওয়া’। আয়োজক ‘সৃষ্টিধর স্মৃতি সংগীত শিক্ষা নিকেতন’।
প্রেমের পদাবলী
বৈষ্ণব পদাবলীতে প্রকৃত প্রেমের সকল বিভাব, অনুভাব ও লীলা বৈচিত্র্য অপ্রাকৃত বর্ণে অভিরঞ্জিত হয়ে আছে। গভীর প্রেমের মধুর ব্যঞ্জনাই বৈষ্ণব পদাবলীর প্রাণ। বাংলার বৈষ্ণব পদাবলীর ছন্দমূর্ছনা ও ধ্বনিলাবণ্য এবং ব্রজবুলি ভাষায় রচিত পদগুলি রবীন্দ্রনাথকেও প্রাণীত করেছিল। তারই উৎকৃষ্ট সৃজন ‘ভানুসিংহের পদাবলী’। বিরহাতুর রাধা। মিলনোৎসবে উদগ্রীব, বেদনায় মথিত হয়ে অবশেষে মাধবকে পাওয়া— এই দুইয়ের সমন্বয়ে রচিত আলেখ্য মৈতালিকের ‘অভিসার’। সম্প্রতি ত্রিগুণা সেন মঞ্চে। পাঠে ছিলেন ফুল্লরা মুখোপাধ্যায়, জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমল বন্দ্যোপাধ্যায়। গানে চন্দ্রাবলী রুদ্রদত্ত, তৃষিত চৌধুরী। নৃত্য পরিচালনায় সুস্মিতা দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠানটির পরিচালনায় রবীন মুখোপাধ্যায়।
প্রভু আমার
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ‘রূপমঞ্জরী’র চল্লিশতম বার্ষিক অনুষ্ঠানে শোনা গেল বিভিন্ন শিল্পীর গান ও পাঠ। শ্রাবণী সেনের রাগভিত্তিক রবীন্দ্রগান ‘গোধূলি গগনে মেঘে’, ‘আজি এ আনন্দ সন্ধ্যায়’ ও ‘প্রভু আমার প্রিয় আমার’। পরে ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তীর বাদনশৈলীতে সুরবাহার ও সেতার শোনালেন পূরবী, ছায়ানট, কেদার ও মালকোষ রাগে। তবলায় ছিলেন উজ্জ্বল ভারতী।
এ ছাড়াও ছিল ‘প্রেমে অপ্রেমে নজরুল’ শীর্ষক গীতি-আলেখ্য। গাইলেন মনোময় ভট্টাচার্য। পাঠে অনিন্দিতা কাজী ও রাজর্ষি রায়। পরে ছিল মঞ্জুশ্রী চক্রবর্তীর নজরুলগীতি। গানগুলি সুগীত।
শুধু গান নয়
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে কাব্যলোক আয়োজিত ‘চৈতালী সন্ধ্যা’য় গান গাইলেন ইরাবতী বসু, শিখা চৌধুরী, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায়, সন্ধ্যাশ্রী দত্ত, অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায়, গীতা বিশ্বাস, সুস্মিতা দত্ত প্রমুখ শিল্পীরা। আবৃত্তিতে ছিলেন সুজিত দত্ত, মহুয়া দাস, অমর ঘোষ এবং মানসী ভট্টাচার্য।
শুরুতেই ইরাবতী বসু গাইলেন, ‘চলে যায় বসন্তের দিন’। শিখা চৌধুরীর ‘একটুকু ছোঁওয়া লাগে’ মন্দ নয়। শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, গীতা বিশ্বাস শোনালেন দ্বিজেন্দ্রগীতি, অতুলপ্রসাদ ও রজনীকান্তের গান। গানগুলি সুগীত কিন্তু আবেগ কমাতে হবে। পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেন সুস্মিতা দত্ত ‘রোদন ভরা এ বসন্ত’। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল সুজিত দত্তের পাঠ ‘আজিকার দিন-না ফুরাতে’। চর্চায় কোনও ত্রুটি ছিল না বোঝা যায়।
নবীনে প্রবীণে
সম্প্রতি মিনার্ভা থিয়েটারে রবীন্দ্রগানের আসরে প্রবীণ ও নবীন মিলিয়ে প্রায় তিরিশ জন শিল্পী অংশ নিয়েছিলেন। গানের সঙ্গে ছিল পাঠ, নৃত্যনাট্য ও শ্রুতিনাটক। অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গানে মন ভরে যায় শ্রোতাদের। তিনি দুটি গান গাইলেন। দেবারতি সোমও তাঁর দুটি গানেই নিজের সুনাম ধরে রাখতে পেরেছেন।
এ ছাড়াও গান গাইলেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে তন্ময় মুখোপাধ্যায় মুক্তকণ্ঠে গান শুনিয়ে নজর কাড়লেন শ্রোতাদের। উল্লেখযোগ্য গান ‘আমি যখন তার দুয়ারে ভিক্ষা নিতে যাই’।
নীলাঞ্জন ছায়া
সম্প্রতি সৃজা বন্দ্যোপাধ্যায় ৬টি রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন যার শিরোনাম ছিল ‘রেন-ড্রপস’। সুর ও স্বরলিপিকে অক্ষুন্ন রেখে শিল্পী শুরুতেই গাইলেন ‘আজি ঝড়ের রাতে’ গানটি। শিল্পীর নিজস্ব ভাব প্রকাশের সঙ্গে নির্বাচিত গানগুলি যেন অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। যেমন ‘আবার এসেছে আষাঢ়’, ‘শ্রাবণের ধারার মতো’ গান দুটিতে বর্ষার রূপ ধরা দেয় বারবার। এখানেই শিল্পীর সার্থকতা।
এ ছাড়াও গাইলেন টপ্পাঙ্গের গান ‘নীলাঞ্জন ছায়া’। পরের গান ‘ঝরো ঝরো বরিষে’।
তুমি নব রূপে
সম্প্রতি জ্ঞানমঞ্চে পৌষালি পাইন শোনালেন বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। গানে চর্চা আছে। গান নির্বাচনেও শিল্পী নিজের রুচির পরিচয় দিয়েছেন। মুক্তকণ্ঠে ‘তুমি নব নব রূপে’ এবং ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর’ গান দুটি প্রশংসিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সম্মেলক সঙ্গীত বেশ মন কাড়ে।