অনুষ্কা শর্মা। ফাইল চিত্র।
অতিমারির বছরেই সেলেব্রিটি থেকে শুরু করে অনেকেই ফ্যামিলি প্ল্যানিং করছেন। করোনা আবহে যে সন্তানরা গর্ভে এসেছে, তাদের বলা হবে ‘করোনিয়াল জেনারেশন’। হবু মায়েদের এ বছর মন খারাপ বাড়বে বই কমবে না! এমনিতেই মেটারনিটি পর্বে মহিলাদের ‘মুড সুয়িংস’ হয়েই থাকে। সঙ্গে দোসর করোনাভাইরাস।
সময়ের সঙ্গে বদলাতে থাকে ভাবী মায়েদের চেহারা, শরীরের আকৃতি। মন ও মেজাজে ছড়ি ঘোরায় হরমোনের ওঠা-নামা। ওয়ার্ড্রোবের পছন্দের পোশাকগুলি কোনও ভাবেই আর ফিট করে না। মন খারাপের সেই শুরু... মেটারনিটি ফ্যাশনের তাই গোড়ার কথা, মন ভাল রাখা ও কমফর্ট। সেলেব্রিটিরা গর্ভাবস্থায় স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করছেন। সাধারণ মহিলারাও এই ন’টি মাস নতুন স্টাইল করতে পারেন। তার কিছুটা আন্দাজ পাবেন সেলেব ফ্যাশন ফলো করে, বাকিটা আপনার ইচ্ছে ও রুচি মিলিয়ে।
করোনিয়াল জেনারেশনের দুই নজরকাড়া সন্তানসম্ভবা অভিনেত্রী করিনা কপূর খান এবং অনুষ্কা শর্মা। ইনস্টাগ্রামে কার পোশাকে কত লাইক, তা নিয়ে চলছে রীতিমতো চর্চা। তবে দুই ফ্যাশনিস্তাই স্বকীয়তা বজায় রাখছেন নিজেদের স্টাইলে।
করিনা কপূর খান
ভারতীয় ও ওয়েস্টার্ন পোশাকের মধ্যে এখনও অবধি ব্যালান্স বজায় রেখেছেন করিনা। গত কয়েক মাসে আনারকলি, কাফতান, সালোয়ার-কামিজ়, ঢিলেঢালা কুর্তা-পালাজ়োয় প্রায়ই দেখা গিয়েছে তাঁকে। আবার প্রয়োজনে ট্রাউজ়ার্স-টপ, জগার্স প্যান্টস, ডেনিমেও ধরা দিয়েছেন কপূর-দুহিতা। নজর কাড়তে কখনও তিনি পরেছেন কালার কো-অর্ডিনেটেড সুট, পালাজ়ো, কখনও বা প্রিন্ট কো-অর্ডিনেটেড টু-পার্টস। শরীর ভারী হয়ে যাওয়ায়, ওয়েস্টার্ন পোশাক পরতে এ সময়ে অনেক মহিলাই সঙ্কোচ করেন। করিনা কিন্তু সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছেন।
আদর্শ ওয়েস্টার্ন পোশাক
ডিজ়াইনার অভিষেক দত্তের মতে, মেটারনিটি পোশাক বলতে ম্যাক্সি ড্রেস, স্ট্র্যাপি ড্রেস, এ লাইন ড্রেস মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয়। কারণ এই পোশাকগুলিতে কমফর্ট বেশি। পেটও সহজে আড়াল করা যায় এই ধরনের পোশাকে। ডিজ়াইনার পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘গর্ভধারণের আগে যে সাইজ় পরতেন, এ সময়ে তার চেয়ে এক সাইজ় বড় পরলেই স্টাইল ও কমফর্ট দুটোই বজায় রাখা যায়।’’ ট্রাউজ়ার্সের পাশাপাশি কিউলোটস, জাম্পসুটও হবু মায়েদের খুব পছন্দের।
অনুষ্কা শর্মা
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম বার প্রেগন্যান্সির খবর প্রকাশ্যে আনার পোস্টে অনুষ্কাকে দেখা গিয়েছে ক্লাসিক পোলকা ডটেড রাফলড ব্ল্যাক ড্রেসে। সম্প্রতি আইপিএলের স্টেডিয়ামে তাঁর নি-লেংথ রেড ড্রেসও চর্চার কেন্দ্রে ছিল। এখনও অবধি ওয়েস্টার্ন পোশাকে তাঁকে বেশি দেখা গিয়েছে। তবে করিনার চেয়ে কোনও অংশে পিছিয়ে নন অভিনেত্রী। তাঁর ব্ল্যাক মেটারনিটি সুইমসুট একটি দৃষ্টান্ত। কারণ এই পর্বে এতটা খোলামেলা পোশাক পরতেও স্বচ্ছন্দ থাকেন না বেশির ভাগ মহিলাই। করিনা যদি জাম্পসুট বেছে নেন, তবে অনুষ্কা ফিরিয়ে আনছেন ডাংরি। স্থান-কালভেদে দুই অভিনেত্রীর পোশাকে রঙের নির্বাচনও নজরকাড়া।
অনুষ্ঠানবাড়ির জন্য
পারমিতার কথায়, ‘‘মেটারনিটি পর্বেও শাড়ির চেয়ে গর্জাস কিছু হয় না। কারণ শাড়ির ড্রেপিং যেমন খুশি করা যায়। প্রয়োজনে আঁচল বড় করা হল বা কুচিটা আলগা রাখা হল। সঙ্গে থাকুক কুর্তা-ব্লাউজ় বা ব্লাউজ়-টপ। তা হলে পেটও আড়াল করা যাবে।’’ অভিষেক বললেন, ‘‘শর্ট লেংথ ড্রেস এই অবস্থায় পরলে অস্বস্তি হতে পারে। তবে এটি ব্যক্তিবিশেষের উপরে নির্ভর করছে। সিকুইন বা ব্লিং জাতীয় ড্রেস চলতেই পারে পার্টির জন্য।’’ রঙের পাশাপাশি কোয়ার্কি প্রিন্ট, পপ আর্ট প্রিন্ট ও স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করার জন্য জুতসই।
ওয়ার্ড্রোবে কী চাই, কী চাই না
• অনেক মহিলাই এ সময়ে নতুন নতুন পোশাক কিনে ফেলেন। কিন্তু পরে তা কোনও ভাবেই ব্যবহার করা যায় না। তাই এক সাইজ় বড় পোশাক কিনুন, যা পরে অল্টার করে আপনার স্বাভাবিক সাইজ় অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবেন।
• আঁটসাঁট পোশাক না পরাই ভাল।
• লুজ় ফিটের পোশাক ভাল দেখানোর জন্য বেল্ট ব্যবহার করা যায়। তবে তা যেন পেটে চাপ না ফেলে, সে দিকে নজর রাখতে হবে।
• ব্রাইট প্যাস্টেল শেড মেটারনিটি পিরিয়ডের জন্য আদর্শ। হোয়াইট, অফ-হোয়াইট, পিঙ্ক পরলে বেশ ভাল লাগে। কারণ এই পর্বে মহিলাদের ত্বকের স্বাভাবিক জেল্লা বাড়ে। এই রংগুলির খোলতাই ভাল হয়।
• ক্যাজ়ুয়াল পোশাকের মধ্যে টি-শার্ট মেটিরিয়ালের প্যান্ট, টপ আরামদায়ক ও স্টাইলিশ।
• ট্র্যাকসুটেও স্টাইল হতে পারে। গ্রাফিটি প্রিন্টের টপ বা সাধারণ টপের সঙ্গে ডেনিম জ্যাকেট চলতে পারে।
• দড়ি লাগানো প্যান্টস পরলে দরকারমতো আলগা করে দিতে পারবেন।
• জুতোর ক্ষেত্রেও কমফর্ট প্রাধান্য পাবে। হিলের বদলে লোফার্স, স্নিকার্স, মিউল, ফ্ল্যাট ব্যালেরিনা, ওয়াকিং শু বেছে নিতে পারেন।
গর্ভধারণের পরের ন’মাস প্রতিটি নারীর জীবনে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তাই এই পর্বেও সাজ-সৌন্দর্যে আপস নয়।