বাবাকে আমি ডাকতাম বাবন। আমার দেখাদেখি পাড়ায় আমার বন্ধুরা, এমনকী দাদার বন্ধুরাও ডাকত ‘বাবন’।
বাবন মানেই গান। সিনেমা। আড্ডা। ছবির মতো গল্প বলা। ফ্যাশনেবল জামাকাপড়। নামী ব্র্যান্ডের সিগারেট। স্কচটা বিলিতি।
দুর্দান্ত ব্যাডমিন্টন খেলত বাবন। ফুটবলটাও খেলত বেশ। খেলা নিয়ে কত যে খবর রাখত! ভালবাসত প্রচণ্ড মজা করে বাঁচতে।
মাঝেমধ্যেই ছুটিছাটার দিনে লং ড্রাইভে বাবন আমাদের নৈহাটিতে দেশের বাড়ি নিয়ে যেত। তখন শ্যামবাজারে দ্বারিকের দোকানে থামাটা ছিলটা ‘মাস্ট’। ওখানে কিছু না কিছু খেয়ে আবার স্টার্ট। বি.টি. রোড ধরে সোজা। সে রাস্তা তখন খানাখন্দে ভরা। প্রায় নাচতে নাচতে গাড়ি এগোত বলে, বি.টি. রোডকে বাবা বলত ‘উদয়শঙ্কর সরণি’।
নৈহাটি স্টেশন থেকে বাঁ ধারে যে রাস্তাটা সোজা গঙ্গার দিকে চলে গেছে, সেই দিকে প্রথমে পড়ে মিত্র পাড়া, তার পরই ব্যানার্জিপাড়া। আমাদের বাড়ি।
রেললাইনের ও পারে থাকতেন সমরেশ বসু। সাহিত্যিকের চেয়েও তখন আমার কাছে সমরেশকাকুর পরিচয়, বাবনের বন্ধু। একবার বাবনের খুব ঝোঁক চেপেছিল, ওঁর ‘বিবর’ নিয়ে ছবি বানাবে। নায়ক করবে উত্তমকাকুকে। তখনই ‘বিবর’ নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
‘ব্যান’ যখন উঠল, আমি বললাম, ‘এখন তো করতে পারো।’ তত দিনে উত্তমকাকু চলে গিয়েছেন। ওঁকে ছাড়া কিছুতেই ছবিটা করতে রাজি হয়নি বাবন।
সঙ্গতে উত্তমকুমার।ছবি: সুবিনয় দাস
নৈহাটির বাড়িটা বিশাল। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এক সময় যখন ব্রিটিশ পুলিশের গ্রেফতারি, গুলিগোলা লেগেই ছিল, বাবন তখন আইপিটিএ-তে। বাড়িতে প্রায়ই ২৫/৩০ জন এসে পড়ত, হঠাৎ হঠাৎ। একসঙ্গে খেয়েদেয়ে রাতে ঘুমোতও তারা। সেই দলে সলিল চৌধুরীও ছিলেন। তেমনই সময় গভীর রাতে একবার সলিলজেঠু বাবাকে ডেকে তুলে বলেছিলেন, ‘‘একটা গানের ছোট্ট অংশ সুর করে ফেলেছি, শুনবি?’’ বলে শুনিয়েছিলেন, ‘গাঁয়ের বঁধূ’র ‘ডাকিনী যোগিনী এল শত নাগিনী’-র জায়গাটা। তখন কে জানত, এই সলিলজেঠুই বাবনকে মুম্বই নিয়ে যাবেন, বাবনও পর পর ছবিতে কাজ করবে ওখানে!
নৈহাটির বাড়িতে বিধান রায়ও গিয়েছেন। আমার ঠাকুর্দা ছিলেন নামী ডাক্তার, বিধান রায়ের ছাত্র। এস্রাজ বাজাতেন, বাবনের কাকা, তিনিও আমাদের দাদু, ছিলেন ধ্রুপদ গাইয়ে। কিন্তু গায়ক হতে গিয়েই ঠাকুর্দার কোপে পড়ে বাবন! শেষে বাড়িছাড়াও হতে হয়। বাবনের ‘নাম’ হতে অবশ্য ঠাকুর্দার রাগ পড়েছিল। সে অনেক পরে।
হুগলি মহসিন কলেজে পড়ার সময় বাবনের খুব বন্ধু ছিলেন সতীনাথকাকু (মুখোপাধ্যায়)। এক বছরের সিনিয়র। সম্ভবত সতীনাথকাকুই বাবনকে বলেন, ‘‘এখানে পড়ে থাকলে গানটা হবে না, কলকাতা চ’।’’
ফলে নৈহাটি ছে়ড়ে চক্রবেড়িয়া রোডে পিসির বাড়ি। উল্টো দিকে গিরিশ মুখার্জি রোড। সেখানে থাকতেন উত্তমকুমার। উত্তমকাকু তখন চাকুরে। নাটক করেন। সিনেমায় ঢোকার চেষ্টা করছেন।
চক্রবেড়িয়া থেকে বাবন চলে যায় লেক মার্কেটের মেসে। মেসে উঠে আসার অন্যতম কারণ সুধীরলাল চক্রবর্তী। তত দিনে ওঁর গান শুনে বাবনের পাগল-পাগল দশা। ওঁর কাছেই শিখতে হবে। নইলে জীবন বৃথা! ফলে উজিয়ে চলে গিয়েছিলেন ৫ নম্বর জনক রোডে, সুধীরলালের বাড়ি।
সুধীরলালেরও ভাল লেগেছিল বাবনকে। শুরু হল গান শেখা। বাবন ওঁকে যে কী শ্রদ্ধা করত! আমাদের বাড়ির বাইরের দরজার ঠিক পাশে সুধীরলালের একটা ব্লো-আপ টাঙানো ছিল, বাবন রোজ বেরোবার সময় ছবিটায় প্রণাম করে বেরোত। ১৯৫২ সালে সুধীরলালের যখন অকালপ্রয়াণ হয়, সে বছর পুজোয় ওঁকে মনে রেখেই বাবন গান রেকর্ড করে ‘স্মৃতি তুমি বেদনার’ আর ‘আশা বাঁধে ঘর’।
কিশোরকুমার ও আরতি মুখোপাধ্যায়ের মাঝে।ছবি: অর্ধেন্দু রায়
বাবনের গুরুভক্তি ঠিক কী পর্যায়ের ছিল, শুনুন। প্রথম প্লে-ব্যাক। ‘সুনন্দার বিয়ে’ ছবিতে। সুপ্রীতিপিসির (ঘোষ) সঙ্গে। সুপ্রীতিপিসিই বলেছিলেন, ‘‘রিহার্সালে দেখেছি ভদ্রসভ্য। রেকর্ডিং-এর দিনে মনে হল, মুখে যেন মদের গন্ধ! জিজ্ঞেস করতে বলল, ‘কী করব, গুরু যে বললেন, দু’ঢোঁক খেয়ে যা, ভাল গান হবে’!’’
বাবনের মেসবাড়ির উল্টো দিকে ছিল মায়ের পিসির বাড়ি। পিসির রান্নার হাত ভাল। মায়ের মামারা ও-বাড়ি আসতেন ওই রান্নার লোভেই। ওঁদের আবার বন্ধু ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবার সঙ্গে ভানুকাকুর আলাপ ওখানেই। মায়ের সঙ্গেও তাই। বাবনকে প্রথম প্রথম মা ‘মামা’ ডাকত। মামার বন্ধু যে!
আমার বড় হওয়া ওয়েডার বার্ন রোডে। বাবন থাকলে সে-বাড়ির দরজা খোলাই থাকত। আমার যখন তিন-চার বছর বয়স, প্রায়ই দেখতাম, একটা লম্বা করে লোক হুটহাট চলে আসেন। ঢোলা পাজামা। কোঁচকানো পাঞ্জাবি। চোখে চশমা। এলোমেলো চুল। বাবন কীসব বোঝায় তাঁকে। তার পর হাতে কিছু টাকা দিলে উনি চলে যান। অনেক পরে জেনেছিলাম ওঁর নাম— ঋত্বিক ঘটক!
‘রাজকন্যা’র স্ক্রিপ্ট করতে বাবা ওঁকেই ডেকেছিল। এ দিকে স্ক্রিপ্ট আর দেন না। কেবলই ঘোরান। একদিন নাছোড় হয়ে পাকড়াও করতেই বললেন, ‘‘হয়েই গেছে প্রায়। শোনাচ্ছি।’’ হাতে একতাড়া কাগজ নিয়ে বসলেন। মিড শট, লং শট বলে বলে গড়গড় করে পড়তেও লাগলেন। খানিক পর বললেন, ‘‘বাথরুম থেকে ঘুরে আসছি।’’
উনি চলে যেতে বাবন উঠে কাগজের তাড়াটা হাতে নিয়ে দেখতে গেছে, কতটা হয়েছে! দেখে, কোথায় স্ক্রিপ্ট! এ তো হিজিবিজি কাটা, ‘‘তার মানে, এতক্ষণ মন থেকে বলে যাচ্ছিল ঋত্বিক!’’
বাবনের চেয়ে উত্তমকাকু ছিলেন বছর তিনেকের বড়। কিন্তু সম্পর্কটা ছিল তুই-তোকারির। উত্তমকাকু এক রকম জোর করে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এ বাবনকে দিয়ে অভিনয় করান। সেই বিখ্যাত গানের দৃশ্য— ‘আমার এ যৌবন’। প্রচণ্ড নাকি রিহার্সাল হত। কিন্তু বাবন বলেছিল, ‘‘কখন যে টেক হত, কিচ্ছু বুঝতে পারতাম না। রিহার্সাল হতে হতেই ‘টেক’ হয়ে গেছে, এমনও হয়েছে।’’
বাবন আর উত্তমকাকুর কমন ফ্রেন্ড ছিলেন ‘ম্যাক’ বলে একজন। ওঁর আলিপুরের ফ্ল্যাটে একবারের পার্টির কথা মনে পড়ে। আমিও ছিলাম সেখানে। তখন বাবনদের পার্টিতে যে যাই করুক, শেষে গান গাওয়া ছিল বাঁধা। সে বার অনেক রাত হয়েছে, তবু আমি ঘুমোচ্ছি না। বেণু আন্টিও কত বলছে, তবু না। আসলে আমি বসে ছিলাম গান শোনার লোভে। সে দিনের পার্টিতে গায়ক-নায়ক রবীন মজুমদারও ছিলেন। কী কারণে পাশের ঘরে গেছি। হঠাৎ শুনি চিৎকার করে গান, রবীন মজুমদারেরই, ‘আমার আঁধার ঘরের প্রদীপ’। ছুট্টে গেলাম। দেখি, সবার অবস্থা তূরীয়! কে কত চড়ায় যেতে পারে তার কম্পিটিশন চলছে! সে কী তারস্বরে গান!
উত্তমকাকুর ওপরে একবার বেজায় চটে গিয়েছিল বাবন। কাকুর ব্যক্তিজীবনে তখন বিরাট বাঁক এল। এ দিকে ‘দেয়ানেয়া’র শ্যুটিং চলছে। বাবন সরাসরি বলেছিল, ‘‘এটা কী করলি তুই? ছবিতে কাজ করতে হলে, আগে বাড়ির ব্যাপারটা ঠিক কর।’’ শ্যুটিং বন্ধ করে দিয়েছিল এক মাস। কিছুই ঠিক হয়নি, তবে ঘটনাটা ভুলতে পারিনি আজও।
কী সব সময়, কী সব সম্পর্ক ছিল তখন! সন্ধ্যাপিসির (মুখোপাধ্যায়) কথা বলি। ১৪ জানুয়ারি যে বাবনের জন্মদিন, বাবনেরই মনে থাকত না, পিসির কিন্তু কোনও দিন ভুল হয়নি। ঠিক ফুলমিষ্টি নিয়ে চলে আসবেনই।
মান্নাজেঠুকে দেখতাম, রেকর্ডিং-এর জন্য গান তুলতে এসেছেন। শেখা হল। ব্যস, তার পর হারমোনিয়ামটা বাগিয়ে নিয়ে শুরু হল মন খুলে গান, আড্ডা। সময়সীমা বলে কোনও কিছু নেই।
দমদম এয়ারপোর্ট। আমি আর বাবন গিয়েছি। হঠাৎ মান্নাজেঠুর সঙ্গে দেখা। তার ঠিক আগের দিন বাবনের গলায় সুধীরলাল চক্রবর্তীর একটা গান শুনেছেন মান্নাজেঠু, রেডিয়োতে। ‘শেষ কথা আজ বলে যাও ওগো’!
প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে লাউঞ্জে দাঁড়িয়েই মান্নাকাকু বলতে লাগলেন, ‘‘ওফ্, কী করে গাইলেন বলুন তো!’’ বাবন বিনয়ী গলায় ম্লান মুখে শুধু বলল, ‘‘কী যে বলেন!’’
এই মান্নাজেঠুর সঙ্গে কিন্তু একবার ফাটাফাটি লেগে গিয়েছিল বাবনের। গান নিয়েই। গানটা ছিল ‘এ তো পুতুলখেলা নয়’। ‘রাজবংশ’ ছবির। বাবনের সুর। গানের স্কেলটা কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না মান্নাজেঠুর। বাবনও ছাড়বে না। শেষে তক্ক। রাগারাগি। বাবন বলল, ‘‘যা বলছি তাই হবে। এ ভাবে যদি না করেন, ছেড়ে দিন। গাইতে হবে না।’’
কী আশ্চর্য, এর পর কিন্তু মান্নাজেঠু একটা কথাও বললেন না। ইগো দেখালেন না। এ ঘটনা যদি এখন ঘটত, কী না কী হত!
কিশোরকুমার। দাদরার ওপরে বাবনের বেশি ঝোঁক ছিল বলে বাবানকে উনি ডাকতেন ‘দাদরাবাবু’।
ছবির নাম ‘অমানুষ’। গান, ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর’। গাইবেন কিশোরকুমার। গান শুনে প্রথমে বেঁকে বসলেন তিনি। বললেন, ‘‘এ আমার দ্বারা হবে না। তা ছাড়া এই গানটা আপনি রেডিয়োতে বহুবার গেয়েছেন।’’ অনেক জোর করায় এক মাস সময় নিলেন শিখতে। তার পরের ঘটনা তো আজ ইতিহাস!
গৌরীকাকুর (গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার) সঙ্গে বাবার সম্পর্টা যে কী ছিল! গান তৈরিতে বসে কত যে ম্যাজিক করত দু’জনে! দুটো গান মনে পড়ে। ‘ঝিরি ঝিরি বাতাস কাঁদে’ আর ‘‘তোমার ওই ধূপছায়া রং শাড়ির পাড়ে’। গৌরীকাকু মুখড়া লিখছেন, স্বভাবমতো কাগজটা ছুড়ে দিচ্ছেন বাবনকে। বাবন সুর করছে। গৌরীকাকু অন্তরা লিখছেন। আবার দিচ্ছেন ওই একইভাবে। সুরও হচ্ছে। এ ভাবে মাত্র কুড়ি মিনিটে লিজেন্ডারি দুটো গান তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
একটা সময়ে খুব মদ্যপান বাড়িয়ে দিয়েছিল বাবন। শেষমেশ কাল হল সেটাই। উত্তমকাকুর চলে যাওয়ার দিনটা মনে পড়ে। রাতে খবর এল। পরদিন সকালে ‘কলঙ্কিনী’ ছবির গানের রেকর্ডিং। ‘যেতে পারব না’ জানিয়ে দিয়ে সকাল থেকে মদ নিয়ে বসে পড়ল। আশাজি (ভোঁসলে) জোরজার করে নিয়ে গিয়েছিল রেকর্ডিং-এ।
গাড়ির দুর্ঘটনাটাও ওই মদ্যপানের কারণেই। রোড-রোলারে ধাক্কা মেরে বাবন সে দিন মারাই যেতে পারত! দু’মাসের ওপর শিশুমঙ্গল হাসপাতালে থেকে ফিরল বটে, কিন্তু জখম এতটা বীভৎস যে, বাড়িতে এক্কেবারে বিশ্রাম। তখন খুব ভেঙে পড়েছিল। অবসাদে ভুগত। এক সময় ভেবেছিল, গানেই আর ফিরতে পারবে না। ওই সময়ই বিশু আঙ্কলকে (বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়) দেখেছি, ‘নিশিপদ্ম’-র ‘রাজার পঙ্খী উইড়্যা গেলে’ গানের রেকর্ডিং-এর দিন। বাবনকে পাঁজাকোলা করে রেকর্ডিং করতে নিয়ে গেল আঙ্কল।
কত যে ফ্যান-মেল আসত তখন! সবাইকে তো উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তাই সুস্থ হয়ে যখন গানে ফিরতে পারল বাবন, গৌরীকাকুকে বলে একটা ফরমায়েশি গান লিখিয়েছিল ওঁর ভক্তকুলের জন্য, ‘তোমাদের ভালবাসা মরণের পার থেকে ফিরায়ে এনেছে মোরে’।
ফিরল বটে। কিন্তু মাঝে মাঝেই শরীর দিত না। অনুষ্ঠান করতে গেলে আমায় নিয়ে যেত। আমায় এগিয়ে দিত গাইতে। সেই প্রথম আমার পাবলিক প্রোগ্রামে গাইতে ওঠা। এমনও হয়েছে, গাইতে গিয়ে গাড়িতে বাবন শুয়ে আছে অসুস্থ হয়ে। আমি উঠেছি স্টেজে একা।
শেষ দিকে, দাঁত দিয়ে খুব রক্ত পড়ত। ভাবত, বুঝি ফল্স দাঁতের সেটিংটা গোলমাল করছে। ভাবতেই পারেনি, ভেতরে ভেতরে লিভারটা তখন বিদ্রোহ করতে শুরু করেছে। রক্তটা তারই।
১৯৮৭ সাল। বাবনকে হাসপাতালে দিতে হল। খুব আশঙ্কার মধ্য দিয়ে কাটতে কাটতে একদিন হঠাৎই যেন একটু হলেও ভাল হল।
তার ঠিক পরদিন। নভেম্বরের ১৫। চিরকালের জন্য চলে গেল বাবন।
অনুলিখন: দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়