বিশ্বায়নের যুগেও ভুখা পেটে মরতে হয় মানুষকে। অন্নদাতারাই আজ অন্নহারা। সংবাদপত্রে প্রায়ই উঠে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনাহারে কৃষকদের আত্মহত্যার সংবাদ। সময়ের কাছে হার মেনে যাওয়া এমনই এক কৃষক সুখিয়া। যার মৃত্যুতে নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় খুন বা ধর্ষণে ততটা লজ্জা নেই, যতটা লজ্জা না খেতে পেয়ে মরায়। কারণ যেখানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে অনেক প্রকল্প রয়েছে গরিবদের জন্য। অতএব গণতন্ত্রের শ্লীলতা রক্ষায় কোমর বেঁধে নেমে পড়া। এতে সামিল প্রশাসনের নীচ থেকে ওপর মহলের কর্তারা। এমনই বিষয় নিয়ে রেঁনেসা-র প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল নাটক (‘সুখিয়া মর্ গয়া ভুখ্ সে’ অবলম্বনে) ‘খাইসে! সুখিয়া মরসে!’ নির্দেশনায় অলোক চক্রবর্তী।
চণ্ডীপুর গ্রামের এক কাকতাড়ুয়াই এই নাটকের কথক। যার বয়ানে উঠে আসে সমস্ত ঘটনাটি। প্রতি দৃশ্যের শুরুতে এবং শেষে আগমন ঘটে এই কাকতাড়ুয়া এবং বাদক দলের। কথায় সুরে ছন্দে গান গেয়ে যারা বর্ণনা করে ঘটনার।
অনেক কঠিন কথাই কমেডির মোড়কে সহজেই বলে দেওয়া যায়। এ নাটকও সে পথই অনুসরণ করেছে। তবে প্রহসনের শর্ত মেনে নাটক এগোলেও কখনওই চাপা পড়ে যায়নি নাটকের মূল বিষয় কিংবা প্রকৃত সত্য।
চণ্ডীপুরের কৃষক সুখিয়া মরতেই শুরু হয় আসল নাটক। মৃত্যুর পরে তার দেহ জুড়ে পরিবার বর্গের আছাড়ি পাছাড়ি খাওয়া কান্নায় সুখিয়া যতটা না অবাক হয়, তার চেয়েও বেশি অবাক হয় প্রশাসনের দৌড় দেখে। তার আত্মা সজাগ দৃষ্টিতে দেখতে থাকে এই ঘটমান বর্তমান এবং তার পরিণতিকে।
চাপ এসেছে একদম ওপর মহল থেকে। তাই ভয়ে কাঁপতে থাকেন ডিএম থেকে এসডিও, দারোগা সকলে। প্রমাণ করার চেষ্টা চলে— সুখিয়া অনাহারে মরেনি, মরেছে বেশি খেয়ে। এর পর চলতে থাকে মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি। রাতের অন্ধকারে সকলের অগোচরে শুরু হয় সে প্রক্রিয়া। মিথ্যেকে সত্যে পরিণত করার কঠিন পণ। সুখিয়ার প্রাণহীন নিথর দেহকে ফোলানোর চেষ্টা চলতে থাকে। আর তা নিয়েই ঘটতে থাকে একের পর এক বিচিত্র ও মজাদার সব ঘটনা। প্রতিটি দৃশ্যে অপেক্ষা করে থাকে অনেক চমক এবং কৌতুক। টেনশনে ডিএম সাহেবের (কমল মিশ্র) টাওয়েল খুলে যাওয়ার দৃশ্য, সুখিয়ার বাড়িতে সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে ভয়ে দারোগার (সমরেন্দ্র ভৌমিক) চোখ কপালে তুলে উলটে পড়া কিংবা এসডিও (আশিস জয়সওয়াল) সাহেবের গলদঘর্ম হওয়ার দৃশ্যগুলি উল্লেখের দাবি রাখে। এ সব চরিত্রে অভিনেতারা অনবদ্য। এছাড়াও নজর কাড়েন সুখিয়া দেবাশীষ চট্টোপাধ্যায়, কাকতাড়ুয়া ব্রেয়ন রায়, যমরাজ প্রবীণ শর্মা, সুখিয়ার বৌ সঞ্জু ওঁরাও, প্রধান রোহিত তিওয়ারী প্রমুখ।