মঞ্চে শিল্পীরা
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশনসের সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে মিত্রায়ন-এর আয়োজনে ‘রুদ্রমোহন’ নৃত্যানুষ্ঠানটি মঞ্চস্থ করা হয়েছিল। গৌড়ীয় নৃত্যের আঙ্গিকে সমগ্র অনুষ্ঠানটির নির্মাণ। নটরাজ ও নটবর— হর ও হরির নৃত্য মাধ্যমে এই দুই দেবতার কথাই বর্ণিত হয়েছে অনুষ্ঠানে।
শুরুতে শিশুশিল্পীরা উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করে ‘আঙ্গিকম’। সঙ্গে নান্দিকেশ্বরের ‘অভিনয় দর্পণ’ থেকে চয়িত সঙ্গীতের দায়িত্বে ছিলেন অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। সে দিনের অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন এক মাত্র কণ্ঠশিল্পী। শাস্ত্রীয় নৃত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে তিনি মন্ত্র এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
পরবর্তী পর্যায়ে ‘মঙ্গলাচরণ’। এতে গিরিশচন্দ্র ঘোষ রচিত একটি সঙ্গীতের মাধ্যমে মোহনবংশীধারী শ্রীকৃষ্ণের বন্দনানৃত্য পরিবেশিত হয়। পর্যায়ক্রমে আলাপচারী নৃত্য (ব্রহ্ম তাল ও গৌর রাগে নিবদ্ধ সঙ্গীত সহযোগে), মহাজনপদ নৃত্য (মিশ্র রাগ ও তালে নিবদ্ধ সঙ্গীত সহযোগে শ্রীরামচন্দ্রের বিবাহকাহিনি বর্ণনা), অষ্টপদী নৃত্য (দাসপাহাড়ি তালে নিবদ্ধ সঙ্গীত সহযোগে শিবাষ্টকম) এবং শেষে হরিহর পালানৃত্য (সমুদ্র মন্থনের কাহিনি) পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানটি পরিকল্পনা করেছিলেন দেবযানী চক্রবর্তী। নৃত্য পরিকল্পনায় মহুয়া মুখোপাধ্যায় এবং দেবযানী চক্রবর্তী।
এই উদ্যোগের পশ্চাৎ-কাহিনিটি হল, প্রায় দু’দশক আগে গৌড়ীয় নৃত্যকলা নিয়ে একটি সর্বভারতীয় আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয় মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে। এর পর থেকে তাঁর গবেষণার সুফল হিসেবেই গৌড়ীয় নৃত্য আজ দেশ জুড়েই ‘প্রাচীন ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্যধারা’ রূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রসঙ্গত মহুয়ার ছাত্রছাত্রী ও উত্তরসূরি অনেকেই আজ গৌড়ীয় নৃত্যের অতি প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ও বৃত্তিপ্রাপ্ত গবেষক।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
যদিও দুঃখের বিষয় হল, মিত্রায়ন পরিবেশিত সে দিনের অনুষ্ঠানটি বাংলার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত একটি শাস্ত্রীয় নৃত্যধারাকে রীতিমতো শাস্ত্র মেনেই উপস্থাপিত করেছিল, কিন্তু দর্শকদের তেমন আকৃষ্ট করতে পারেনি। আসলে এই অনুষ্ঠানে প্রতিটি গানের প্রতিটি পঙ্ক্তি দু’বার করে উচ্চারিত। অথচ দ্বিতীয় বারের নৃত্যভঙ্গিমায় কোনও পরিবর্তনই ছিল না। ফলে যথারীতি একঘেয়ে লেগেছে। আশা করি, এই নৃত্যধারার উপস্থাপনকালে শিল্পীরা ভবিষ্যতে আরও বেশি মনোযোগী হবেন।
অনুষ্ঠানে যন্ত্র সহযোগিতায় ছিলেন জয় দালাল (পাখোয়াজ), হরেকৃষ্ণ হালদার (শ্রীখোল), শুভদীপ চক্রবর্তী (বেহালা), অয়ন মুখোপাধ্যায় (একযোগে বাঁশি ও সেতার) এবং শান্তনু চক্রবর্তী (অন্যান্য সব যন্ত্র)।