উত্তম মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল ‘বিরহ কোয়েষ্ট ফর লাভ’। গান কবিতা নাচ নিয়ে নানা মুহূর্তের বিরহকে টুকরো টুকরো ভাবে ধরার চেষ্টা হয়েছে—কিন্তু সেই চেষ্টার বাঁধুনিটি তত মজবুত হয়নি। পাঁচজন শিল্পী ছিলেন। গজল গানে প্রতীক চৌধুরী, আবৃত্তিতে সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা গানে প্রবাল মল্লিক, নাচে দেবলীনা কুমার ও সঞ্চালনায় স্বাগতা মুখোপাধ্যায়। সুতপা ইতিমধ্যেই আবৃত্তিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এ দিনের নিবেদনে তিনি দোটানায় ছিলেন- সেটা মাঝে মাঝেই বোঝা গেছে। জয় গোস্বামীর ‘মেঘবালিকা’ প্রথম যে দিন মঞ্চে পড়া হয় তারপর অদ্যাবধি যাঁরাই কবিতা পড়েন কেউ আর নতুন করে পড়বার কথা ভাবেন না। সেই ছন্দতেই বাঁধা পড়ে রয়েছেন সকলে। স্বাগতার সঞ্চালনা ভালই। তবে অতিনাটকীয়তা এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যায়নি। বিশেষ করে এক জায়গায় তিনি যেভাবে ‘মা মা’ বলে মঞ্চে প্রবেশ করেন তা শুনে দর্শকদের মধ্যে হাস্যরোল ওঠে। দেবলীনা কুমারের নৃত্যছন্দ ভাল, তবে মুদ্রা ও শারীরিক সঞ্চালনে পুনরাবৃত্তি বর্জন করতে হবে।
এ দিনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি প্রতীক চৌধুরীর গজলগুলি। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও কয়েকটি বাংলা গান শুনিয়েছেন প্রবাল মল্লিক। যা ভাল লাগে।
মন্দ হতে চাই
আইসিসিআর-এ অনুষ্ঠানের শুরু শিশুশিল্পীদের ‘জননী জন্মভূমি’ শীর্ষক কবিতা ও গানের কোলাজ দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বের শিল্পীরা ছিলেন শোভনসুন্দর বসু, মৌনিতা চট্টোপাধ্যায় ও রাজকুমার রায়। পর্বটি শুরু করেন মৌনিতা। বীথি চট্টোপাধ্যায়, অরুণ মিত্র, মল্লিকা সেনগুপ্ত, ব্রত চক্রবর্তী ও শ্যামল ভট্টাচার্যের কবিতা সম্বলিত একটি মলিন স্মৃতিখণ্ড যেন। একটি মেয়ের দৈনন্দিন জীবন যাপন, হতাশা, রাগ, দুঃখ, বঞ্চনা অভিমান অতিক্রমের নির্মাণ ‘মন্দ হতে চাই’। স্পষ্ট উচ্চারণ। ‘প্রেয়র টু লাভ’ ছিল অনুষ্ঠানের শেষ নিবেদন। বিষয়বস্তু ছিল শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ থেকে বিচ্ছেদ এবং আত্মা ও পরমাত্মার মিলন। শোভনসুন্দরের কণ্ঠে লিপিকার রচনা দিয়ে শুরু এই পর্ব। রাজকুমার রায় শোনালেন বেশ কিছু পরিচিত লোকসঙ্গীত। মৌনিতার কণ্ঠে এই পর্বে ভাল লাগে কৃষ্ণা বসুর রাধিকা সংবাদ। শোভনসুন্দরের ‘মরণ’ কবিতায় রাধাকে আহ্বান মন আকুল করে দেয়। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা ‘কিষ্ট যদি জন্ম লিথ’ কবিতায় কথ্যভাষার উচ্চারণও চমকপ্রদ। মৌনিতা ও শোভনসুন্দরকে রবীন্দ্রনাথের ‘নির্ভয়’ কবিতার যৌথ উপস্থাপনা।
জ্ঞান মঞ্চে একক গানে
ফিরে আসব আবার
গৌতম ঘোষাল
অনেক জনপ্রিয় শিল্পী তাঁর গান গেয়েছেন। দুটি জনপ্রিয় বাংলা ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালকও তিনি। এ বার একক গান শোনাতে সম্প্রতি জ্ঞান মঞ্চে তিনি বেছে নিয়েছিলেন নতুন ও পুরনো গানের সম্ভার। শোনা গেল রবীন্দ্রসঙ্গীতও। একুশটি গানের সম্ভার নিয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করলেন গৌতম ঘোষাল। অপূর্ব মুন্সিয়ানায় গায়কির মেজাজ মেলে ধরলেন প্রতিটি গানেই। প্রথমে ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আজি তোমায়’। এ দিন গজল ছাড়াও তিনি পরিবেশন করেছিলেন নিজস্ব কম্পোজিশনের বেশ কয়েকটি আধুনিক গান। গানের তালিকায় সলিল চৌধুরী ও পিন্টু ভট্টাচার্যের গানের সংযোজন অনুষ্ঠানটিকে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে। তবে শ্রোতাদের প্রত্যাশা আরও পূর্ণ হত যদি গানের তালিকায় আরও কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত স্থান পেত।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেওয়া এই শিল্পীর কণ্ঠের ওঠা-নামা, সুর তাল ও লয়ের পরিমিতি বোধ লক্ষণীয়। তবে এ দিনের সেরা গানের তালিকায় শিল্পী অবশ্যই প্রশংসা পাবেন চারটি গানে। তার মধ্যে ‘আবছা আলোয় ঘেরা’, ‘ফিরে আসব আবার’, ‘নাই বা হল আবার দেখা’ প্রভৃতি।
সুর ও কাব্যে
গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে
সম্প্রতি গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার-এ শোনা গেল স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজের ‘রামকৃষ্ণ-কথামৃত’ পাঠ। এই আবহেই উপস্থাপিত হল দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা ও নির্মাণে অ্যাকাডেমি থিয়েটারের ‘বিবেক-বীণায়’। বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষ্য ও দেবজিতের একক গায়নে পরিবেশিত হল স্বামী বিবেকানন্দের নাট্যসঙ্গীত। ‘খণ্ডন-ভব-বন্ধন’ দিয়ে শুরু। ‘আয় গো আয়’ গানে ভিন্ন স্বাদ নিয়ে এলেন শিল্পী। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘মৃণালিনী’র গান ‘সাধের তরণী’ অপূর্ব। তেমনই গিরিশচন্দ্রের ‘জুড়াইতে চাই’তে যেন বৈরাগ্যের সাধন মিলন। যুগল গানের পরিবেশনায় দেবজিত মেলে ধরলেন সমতার মধ্যেও দুই গীতিকারের আপন বৈশিষ্ট্য। ইতি টানলেন স্বামীজির কাব্যসূত্রে দ্বিজেন্দ্রলালের গানের সমতায় ‘ভীষ্ম’ নাটকের ‘নীলাকাশের অসীম’-র সুর ও কাব্যের মূর্ছনায়। বাঁশিতে সৌম্যজ্যোতি ঘোষ, তবলায় প্রীতম সাহা এবং কি-বোর্ডে দেবাশিস সাহা।
এ কি লাবণ্যে
সম্প্রতি আইসিসিআর-এ দুই নৃত্যশিল্পী শুচিস্মিতা গঙ্গোপাধ্যায় ও অলিন্দা বড়ুয়ার নৃত্য পরিবেশনা বেশ মন কাড়ে। পরে গাইলেন স্মার্ত মজুমদার। পীযূষকান্তি সরকারের কনিষ্ঠতম ছাত্র স্মার্তর পরিবেশনা বেশ নজর কাড়ে। নির্ভুল স্বরলিপি, দরাজ কণ্ঠ, স্পষ্ট উচ্চারণ। ‘এসেছিলে তবু আস নাই’তে শিল্পী অনবদ্য। ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী’ থেকে ‘নীলঅঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায়’ সবেতেই নিজস্বতা বজায় রেখে শ্রোতাদের মন জয় করলেন স্মার্ত। ‘একি লাবণ্যে’ কিংবা ‘পিনাকেতে লাগে টঙ্কার’ এ দিনের সেরা প্রাপ্তি। শেষ পর্বে অমৃতা দত্ত শোনালেন পুরনোদিনের কিছু গান।
শুধু গান নয়
শ্রুতিনিকেতন আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল দীপশিখা সংস্থার নৃত্যগীতি আলেখ্য ‘অর্ঘ্য’। পরে ময়ূখ-এর সম্মেলক গান ‘উড়িয়ে ধ্বজা’। অনুষ্ঠানে একক গান গাইলেন প্রবুদ্ধ রাহা, দেবারতি সোম, তনুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, অদিতি গুপ্ত, অলক রায়চৌধুরী, পূবালি দেবনাথ, তানিয়া দাশ, সুছন্দা ঘোষ, অনিরুদ্ধ সিংহ, শমীক পাল, সুকন্যা নাথ, দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
নির্বাচিত আবৃত্তি পাঠে ছিলেন দেবাশিস বসু, প্রণতি ঠাকুর, মধুমিতা বসু ও কৃষ্ণকলি বসু। তবে বিশেষ নজর কাড়ে সঞ্চয়িতা মণ্ডলের ওড়িশি নৃত্য। সঞ্চালনায় ছিলেন সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ও অস্মিতা পাল।
এখনও তিনি
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের জন্মদিন উপলক্ষে রবীন্দ্রসদনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল সমবেত সঙ্গীত। মনোময় ভট্টাচার্যের ‘দোলে দোদুল’ সুন্দর পরিবেশনা। সৈকত মিত্রর ‘এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে’, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের ‘কফি হাউজের’ গান নস্টালজিক অনুভূতি এনে দেয়। সুধীন সরকার পরিবেশন করলেন ‘সে কথা কেউ ভাবেনা’। এ ছাড়াও ছিলেন দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়, রূপরেখা চট্টোপাধ্যায়, পরিমল ভট্টাচার্য প্রমুখ।
সুরেলা ভজন
পণ্ডিত চিন্ময় লাহিড়ি ও পণ্ডিত শ্যামল লাহিড়িকে শ্রদ্ধা জানালেন তিন শিল্পী। ভজনের সুরেলা মাধুর্যে। উর্মিলেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ঐন্দ্রিলা ভট্টাচার্য, অরিন্দম বসু। বিহান মিউজিক থেকে প্রকাশিত ১২টি গানের সংকলনে। সংকলনের সেরা গান ‘জয় জয় মোহন’।