Rajanikanta Sen

প্রাঞ্জল এক প্রয়াস

তিন দিশারী সুরের ধারা আয়োজিত নতুন মিডিয়া ফেসবুক লাইভে অনুষ্ঠিত হল কবি রজনীকান্ত সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান।

Advertisement

সৌম্যেন সরকার

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:৩৭
Share:

গান গাইছেন নূপুরছন্দা ঘোষ

বাংলা কাব্যসঙ্গীতের জগতে রজনীকান্ত সেনের সঙ্গীতের একটি বিশেষ স্থান আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাবশিষ্য ছিলেন রজনীকান্ত। তাঁর জীবন ছিল স্বল্প পরিসরের (১৮৬৫-১৯১০)। আর তাঁর সঙ্গীতের স্নিগ্ধ শান্ত কারুণ্য আজও বাঙালি সঙ্গীতপিপাসুর মনে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। রজনীকান্ত সেন ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই পাবনার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাঞ্জলতাই তাঁর গানের মূল আকর্ষণ। এই প্রাঞ্জলতায় রয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত সৌন্দর্য। যে সৌন্দর্যবোধ কবির হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে উৎসারিত হয়ে সৃষ্টিকে দিয়েছে রসানুভূতি। দুঃখ, শোক, আকুলতা, শ্রদ্ধা, সমর্পণ, দেশাত্মবোধ— প্রতিটি বিচিত্র মানবিক অনুভূতিই তাঁর সঙ্গীতে সার্থকতার সঙ্গে মূর্ত হয়েছে।

Advertisement

তিন দিশারী সুরের ধারা আয়োজিত নতুন মিডিয়া ফেসবুক লাইভে অনুষ্ঠিত হল কবি রজনীকান্ত সেনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান। উপস্থাপন করলেন নূপুরছন্দা ঘোষ। শিল্পীর নির্বাচনে ছিল কবির কাব্যগ্রন্থ ‘বাণী’ ‘কল্যাণী’ ও ‘অভয়া’।

শিল্পী অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন একটি বিখ্যাত প্রার্থনাসঙ্গীত দিয়ে— ‘তুমি নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’। পরের গানটি ছিল ‘তোমারি দেওয়া প্রাণে তোমারি দেওয়া দুখ, তোমারি দেওয়া বুকে তোমারি অনুভব’। আলেয়া মিত্র রাগে রচিত গানটির আবেদন মূর্ত হয়ে উঠল শিল্পীর পরিবেশনায়। এর পরের গানটি বাউল সুরে আধারিত ‘প্রেমে জল হয়ে যাও গলে / কঠিনে মেশে না সে / মেশে রে সে তরল হলে’। গানটি সুগীত। এর পরের নিবেদনে ছিল দু’টি প্রেমের গান। প্রথমটি মিশ্র ভূপালি রাগে ‘সখিরে! মরম পরশে তারি গান / অধীর অকূল করে প্রাণ’ এবং দ্বিতীয়টি ছিল মিশ্র কানাড়া রাগে ‘স্বপনে তাহারে কুড়ায়ে পেয়েছি / রেখেছি স্বপনে ঢাকিয়া’। দু’টি গানই সুখশ্রাব্য।

Advertisement

রজনীকান্ত কিছু হাসির গানও রচনা করে গিয়েছেন। তাঁর গানে বিশুদ্ধ হিউমর এবং স্যাটায়ার দুই-ই আছে। মনোহরসাই কীর্তন রীতিতে সুরারোপিত তাঁর একটি বিখ্যাত গান পরিবেশন করলেন শিল্পী—‘যদি কুমড়োর মত চালে ধরে রত পানতোয়া শতশত / আর সর্ষের মত হত মিহিদানা / বুঁদিয়া বুটের মত!’ শিল্পী গানের মধ্যে মজাটা ধরে রাখতে পেরেছিলেন।

পরের গানটি ছিল কীর্তনের সুরে ‘পাপ রসনারে হরি বল’। হাম্বীর রাগে আধারিত ‘আমি দেখেছি জীবনভরে চাহিয়া কত’ শুনতে ভাল লাগে। বেহাগ রাগে আধারিত ‘আমি অকৃতী অধম বলেও তো কিছু কম করে মোরে দাওনি’ গানটি পরিবেশনে প্রত্যাশা পূরণ হল না।

১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ১৩ সেপ্টেম্বর (বাংলা ২৮ ভাদ্র) রজনীকান্ত অমৃতধামের যাত্রী হলেন। তাঁর দেহ ভাগীরথীর তীরে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন কান্তকবির অনুরাগীবৃন্দ। তাঁদের কণ্ঠে ছিল কান্তকবি রচিত এক বিখ্যাত ভক্তিমূলক গান। শিল্পী গাইলেন সেই কালজয়ী গান। বেহাগের করুণ বিরহের সুর সেই গানের মর্মস্পর্শী বাণীকে আরও আবেগপ্রবণ করে তুলেছিল। গানটি ছিল—‘কবে তৃষিত এ মরু ছাড়িয়া যাইব / তোমারি রসাল নন্দনে’।

এই গান দিয়েই শেষ করলে অনুষ্ঠানটি সর্বাঙ্গসুন্দর হত। এর পরে দেশাত্মবোধক গান না গাইলে অনুষ্ঠানের অঙ্গহানি হত না। কোনও অনুষঙ্গ ছাড়াই শিল্পী সুললিত কণ্ঠে ভিন্ন রসের গান শুনিয়ে শ্রোতাদের আবিষ্ট করে রাখলেন।

পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রজনীকান্তের গান পৌঁছে দেওয়ার এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement