নূপুরছন্দা ঘোষ
সম্প্রতি রবীন্দ্রসদন প্রেক্ষাগৃহে ডায়মেনশন ফোর নিবেদন করল ‘আজি গাও মহাগীত’। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নূপুরছন্দা ঘোষের তত্ত্বাবধানে পরিবেশিত হল দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত ‘আজি গাও মহাগীত মহা আনন্দে’। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল ছ’টায়, কিন্তু উদ্যোক্তারা মঞ্চের পর্দা উন্মোচন করলেন ছ’টা কুড়িতে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে এই ত্রুটি মেনে নেওয়া কষ্টসাধ্য।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নূপুরছন্দা ঘোষের ছাত্রছাত্রীরা সারা মঞ্চ ভরিয়ে তুলেছিলেন। সেটি একটি চমৎকার দৃশ্য। দেখে ভাল লাগল দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত ও অতুলপ্রসাদের গানের আজও একটি টান আছে। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে নূপুরছন্দা ঘোষ সঙ্গীত সূচনা করলেন কবি রজনীকান্ত সেন রচিত ‘তুমি নির্মল করো মঙ্গলকরে মলিন মর্ম মুছায়ে’ গানটি দিয়ে। এর পরের গানটি ছিল পূজা পর্যায়ের গান। রজনীকান্তের ‘অভয়া’ গ্রন্থের প্রথম গান সেটি। তা তিনি রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁরই সুরে নিজের বাণী বসিয়ে রচনা করেছিলেন— ‘শোনাও তোমার অমৃতবাণী’। গানটি নিপুণ ভাবে উপস্থাপন করেন শিল্পী। কীর্তনের সুরে অতুলপ্রসাদ সেন রচিত ‘ঘন মেঘে ঢাকা সুহাসিনী রাধা’ এবং রজনীকান্তের প্রেমের ‘মধুর সে মুখখানি কখনও কি ভোলা যায়’ গান দু’টি সুগীত হলেও, বাদ্যযন্ত্রের অতিরিক্ত আওয়াজ শ্রবণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিল। অতুলপ্রসাদের ‘বঁধুয়া নিদ নাহি আঁখিপাতে’ গানটির প্রতি শিল্পী সুবিচার করতে পারেননি। অথচ ‘দুর্গাদাস’ নাটকের ‘হৃদয় আমার গোপন করে’ আর ‘ওলো সই রইবে না রে’ কিংবা ‘শাজাহান’ নাটকের ‘আজি এসেছি’ শিল্পীর কণ্ঠে চমৎকার মানিয়েছিল। যন্ত্র সহযোগিতা ‘আজি এসেছি’ গানটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।
একক অনুষ্ঠানের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘প্রভাতবেলায়’ সিডিটি উদ্বোধন করেন অপর্ণা সেন। এর পরে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত রজনীকান্তের ‘বিশ্ব বিপদভঞ্জন’, ‘এত আলো বিশ্বমাঝে’, অতুলপ্রসাদের ‘প্রকৃতির ঘোমটাখানি খোল লো বধূ’ এবং দ্বিজেন্দ্রলালের ‘বরষা আইল ওই ঘনঘোর মেঘে’ গানগুলি সুগীত। যদিও গান চলাকালীন সিডির বিজ্ঞাপন ভাল লাগেনি।
সবশেষে পরিবেশিত হয় স্বদেশ পর্যায়ের গান। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কথা ছিল কঙ্কণা সেনশর্মার। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত তিনি উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য তাঁর পরিবর্তে অপর্ণা সেন পাঠে অংশগ্রহণ করলেন। কিন্তু তাঁর সে ভাবে প্রস্তুতি না থাকার দরুন, পাঠের অংশটুকু কোনও মাত্রা পেল না। সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশনের সময়ে নূপুরছন্দা ঘোষের সামনে মাইক্রোফোন না থাকলেই ভাল হত। যন্ত্রসঙ্গীতে দীপঙ্কর আচার্য (তবলা), মানব মুখোপাধ্যায় (বাঁশি), ভাস্কর (সেতার), দিব্যজ্যোতি (বেহালা), আবলু (কিবোর্ড), অনুপ (অক্টোপ্যাড) যথাযথ।