Dance Drama

রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’র মঞ্চায়ন

রবীন্দ্রসদনে নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্করের ১০৫তম জন্মদিন উপলক্ষে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ মঞ্চস্থ করে মমতাশঙ্কর ডান্স কোম্পানি। ‘চণ্ডালিকা’র মূল কাহিনি জাতকের ‘শার্দুল কর্ণাবদান’ থেকে সংগ্রহ করেন রবীন্দ্রনাথ।

Advertisement

শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৩
Share:

নৃত্যনাট্য পরিবেশনায় শিল্পীরা। —নিজস্ব চিত্র।

রবীন্দ্রসদনে ২৮ জুন নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্করের ১০৫তম জন্মদিন উপলক্ষে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ মঞ্চস্থ করে মমতাশঙ্কর ডান্স কোম্পানি। ‘চণ্ডালিকা’র মূল কাহিনি জাতকের ‘শার্দুল কর্ণাবদান’ থেকে সংগ্রহ করেন রবীন্দ্রনাথ। তার পর তাকে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত করে ১৯৩৮ সালের ১৬ মার্চ দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ প্রথম মঞ্চস্থ করান তিনি। ১৯৬৬ সালে উদয়শঙ্কর ইন্ডিয়ান কালচার সেন্টার উদয়শঙ্করের নৃত্য পরিকল্পনায় ‘প্রকৃতি ও আনন্দ’ মঞ্চস্থ করে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’ অবলম্বনে। প্রকৃতির ভূমিকায় নৃত্যাভিনয় করেন ঝর্না দত্ত (গানে পাপিয়া বাগচী), মা— প্রণতি গুহ (গানে কৃষ্ণা গুপ্ত), আনন্দ— শিবশঙ্করণ (গানে অর্ঘ্য সেন), রুদ্রভৈরব— শান্তি বসু এবং বুদ্ধের ভূমিকায় স্বয়ং উদয়শঙ্কর মঞ্চে অবতীর্ণ হন।

Advertisement

মমতাশঙ্কর। —নিজস্ব চিত্র।

১৯৭৯ সালে উদয়শঙ্করের সুযোগ্যা কন্যা মমতাশঙ্করের নৃত্য পরিকল্পনায় মমতাশঙ্কর ব্যালে ট্রুপ ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করে। প্রকৃতির ভূমিকায় নৃত্যাভিনয় করেন মমতাশঙ্কর, মায়ের ভূমিকায় পিয়ালী রায়, আনন্দের ভূমিকায় নন্দা বড়ুয়া। গানে মেয়ের ভূমিকায় রমা মণ্ডল, মায়ের ভূমিকায় প্রথমে ডলি ঘোষ ও পরে প্রমিতা মল্লিক, আনন্দের ভূমিকায় চন্দ্রোদয় ঘোষ। তালবাদ্যে বিপ্লব মণ্ডল। এ বার রাতুল ঘোষের ড্রাম ও কৃষ্ণজিৎ মুনশির তালবাদ্যকে যুক্ত করে, সেই পুরনো সঙ্গীত উপস্থাপনার সঙ্গে নৃত্যাংশকে কিছু পরিবর্তন করে মমতাশঙ্কর ডান্স কোম্পানির প্রযোজনায় উদয়ন কলাকেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীরা মমতাশঙ্করের পরিচালনায় ‘চণ্ডালিকা’ মঞ্চস্থ করল। দেশবিদেশে এটি বহু বার মঞ্চস্থ হয়েছে। সত্তরের দশকে ‘প্রকৃতি ও আনন্দ’ থেকে ‘চণ্ডালিকা’র যাত্রাপথে অমলাশঙ্করের উপদেশ-নির্দেশকেও কাজে লাগিয়েছেন মমতাশঙ্কর—মায়ের প্রতি এই তাঁর শ্রদ্ধা নিবেদন। উদয়শঙ্করের অলৌকিক নৃত্যের ছায়া অবলম্বনে মায়ানৃত্যের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ডাকিনীর ভূমিকায় প্রকৃতির মায়ের পরিবর্তে অন্য এক ডাকিনী ও তাঁর সঙ্গীরা মায়ানৃত্যে অভিনয় করে। সত্তরের দশকে ধুনুচির ধোঁয়ায় (তখন স্মোক মেশিন ছিল না) আলো ফেলে মায়ানৃত্যের পরিবেশ সৃষ্টি করেন মমতা, যা অ-রাবীন্দ্রিক বলে সমালোচিত হয়েছিল। অবশ্য উদয়নের চন্দ্রোদয় ঘোষ জানান, সে কালের নৃত্যশিল্পী অমিতা সেন, সুকৃতি চক্রবর্তী (হাসুদি) বলেন, রবীন্দ্রনাথের নাটক ও নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করার সময়ে সে কালেও নানা পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে।

নৃত্যনাট্য পরিবেশনায় শিল্পীরা। —নিজস্ব চিত্র।

আজ এত বছর পরে উদয়শঙ্কর নৃত্যধারায় ‘চণ্ডালিকা’ মঞ্চস্থ হল— যেখানে স্মোক মেশিন প্রয়োগ করে ধোঁয়ায় আলোআঁধারির খেলা ছিল, মায়ানৃত্যের পরিকল্পনায় মায়ের পরিবর্তে অন্য ডাকিনীদের নৃত্য ছিল, দর্শকদের গ্রহণ করার মানসিক প্রস্তুতিও ছিল। সে দিক থেকে এ বারের উপস্থাপনা একটি বিবর্তনের ইতিহাসও বটে। প্রকৃতির ভূমিকায় শ্রেয়া সামন্ত ও মায়ের ভূমিকায় অমৃতা ভট্টাচার্যের নৃত্যাভিনয় যথাযথ। আনন্দের ভূমিকায় মমতাশঙ্করের নৃত্যাভিনয় দর্শকরা উপভোগ করেন। প্রকৃতিকে আনন্দের ভিক্ষুণীর চীবরবসন প্রদানের ভাবনায় নতুনত্ব ছিল। পুরনো শিল্পীদের গান— বিশেষ করে প্রকৃতির ভূমিকায় রমা মণ্ডলের গান— সেও আর এক প্রাপ্তি। মমতার পোশাক পরিকল্পনা উদয়শঙ্কর ঘরানার অনুসারী। তবে গুজরাতি কাচের কাজ করা পোশাক অতিরিক্ত চমকদার বলে মনে হয়েছে। প্রকৃতির মায়ের আঙুলের চকচকে আংটিও দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রদ্ধাঞ্জলি পর্বে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পূর্ণিমা ঘোষ। তার পর উদয়নের শিল্পীদের নৃত্যানুষ্ঠান ‘আকাশভরা সূর্যতারা’। সঙ্গীতে— বৈকালীর শিল্পীবৃন্দ। উদয়শঙ্করের ‘কল্পনা’ ছায়াছবির অংশবিশেষও প্রদর্শিত হয়— যা নতুন প্রজন্মের কাছে বাড়তি পাওনা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement