স্বপ্নাল’র নাটক ‘কালক্রেতা’র (নাটক ও পরি: প্রেমাংশু রায়) নাম শুনে বোঝার উপায় নেই এই প্রযোজনা একটি দুরন্ত প্রহসন। এই নাটক দর্শককে টেনে রাখে ততটাই যতটা সমকালীন দুর্নীতিপুষ্ট ক্ষমতা-বিকৃত রাজনীতি নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ বিদ্রুপের প্রহসন মঞ্চে উপচে পড়ে। এক দূর্নীতিপরায়ণ, স্বৈরতন্ত্রী রাজা স্তাবক-পরিবৃত হয়ে রাজ্য চালায়, প্রতিবাদী কবি-গায়ককে জেলবন্দি করে। ছাত্রদের প্রতিবাদী কলরব নিস্তব্ধ করতে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেকার দরিদ্র প্রজাদের দুর্দশা ভোলাতে রাজকোষ উজাড় করে রাজ্যের সর্বত্র উৎসব করা হয়। মন্ত্রী যখন ভাঁড়ে-মা-ভবানীর খবর দেন তখন আসে গৌরী সেন।
গৌরী সেনের বুদ্ধিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলা হয় পাঁচ বছরে দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু যে জাদুঘরে সেই টাকা রাখা হয় সেই ঘর ভ্যানিশ হয়ে যায়। সব টাকা চলে আসে রাজার হাতে। নাটকের অভিঘাত জোরালো হয়। তাই এই নাটকে উঠে আসে গুপী গাইন ও বাঘা বাইন, পাগলা দাশু, রবীন্দ্রনাথের নাটক ও টলস্টয়ের গল্পের চরিত্ররা যারা নাটকের প্রতিবাদী প্রহসনের এক সিরিয়াস নৈতিক পরিবেশ রচনা করে। কেবল চরিত্র নয়, কোনও কোনও দৃশ্যে অভিনয়ে সংলাপে রবীন্দ্রনাথের নাটক মনে আসে। আবার রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দৃশ্যে আই-পি-টি-এর নাটককেও মনে করাতে পারে।
নাটকের প্রধান আকর্ষণ গৌতম হালদার। রাজার ভূমিকায় পাগল-সাজা এক অতি ধূর্ত স্বেচ্ছাচারী অথচ বর্ণময় কমিক চরিত্রের সৃষ্টিতে তিনি অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। রা জার যোগ্য জুটি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ করে যখন তিনি রাজার নির্বাক বাণীতে ভাষা দিয়ে সকলকে শোনান। অন্যান্য ভূমিকায় উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেছেন সৃজনী মিত্র, প্রেমাংশু রায় এবং পূবালী বন্দ্যোপাধ্যায়। খুবই ব্যঞ্জনাময় নীল কৌশিকের মঞ্চ।