ছোটবেলায় যখন মায়েরা রীতিমতো জোর করে চুলে তেল মালিশ করতেন কিংবা তার পর ভাল করে চুল আঁচড়ে বেঁধে দিতেন, আমরা অনেকেই বিরক্ত হতাম। ভাবতাম, বড় হলে তো চুলে তেল লাগাতে হবে না। বরং সারা দিন রেশমের মতো নরম আর চোখ ধাঁধানো চুল খুলে বিশ্বজয় করা যাবে। তবে একটু বড় হতেই চোখের সামনে পরিষ্কার হল চুলের সমস্যা। কারও চুল রুক্ষ, কেউ ভোগেন অকালপক্বতায়। কারও চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা, আবার কেউ খুসকিতে নাজেহাল। কিন্তু চুলের অনেক সমস্যারই দাওয়াই তেল। রুক্ষ চুলের সজীবতা ফিরিয়ে আনতে যেমন তেলের ব্যবহার অনবদ্য, তেমনই তৈলাক্ত চুলের জন্যও রয়েছে হালকা তেল। দরকার শুধু নানা সমস্যায় সঠিক তেলের প্রয়োগ।
• চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী নারকেল তেল। এতে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে কন্ডিশনারের কাজও করে। একই সঙ্গে চুল থাকে নরম। নারকেল তেল সামান্য গরম করে স্ক্যাল্পে ভাল করে মাসাজ করে নিন। আধঘণ্টা রেখে, অর্গ্যানিক শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
• ক্যাস্টর বিন থেকে তৈরি ক্যাস্টর অয়েলও চুলের জন্য দারুণ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, প্রোটিন আছে। আবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যাস্টর অয়েল কাজ করে চুলের গোড়া মজবুত করতে। অল্প নারকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মাত্র কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ও চুলে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিন। পরের দিন সকালে শ্যাম্পু করে নিন।
• হোহোবা অয়েলও রুক্ষ চুল এবং খুসকির সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করে। এই অয়েল ব্যবহারের সময় এক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা ইউক্যালিপটাস এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন।
• সপ্তাহে এক বার ১-২ টেব্ল চামচ অলিভ অয়েল সারা চুলে ভাল করে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। পরে ঠান্ডা জলে চুল ধুয়ে নিলেই হল। চুল চকচকে করতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই কোনও।
এ ছাড়াও আমাদের বাড়িতে রান্নার প্রয়োজনেই সরষের তেল ও নারকেল তেল থাকেই। শুধু মাত্র এই দুটো তেলের সঙ্গে নানা রকম উপকরণ মিশিয়ে চুলের নানা সমস্যা দূর করতে পারেন।
• খাঁটি সরষের তেলের সঙ্গে জবা ফুল, মেথি আর আমলকী ফুটিয়ে নিয়ে ঠান্ডা করে নিন। তার পর এই তেল চুলে নিয়মিত লাগালে চুল পড়া, কম বয়সে পেকে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।
• কারি পাতা চুলের গোড়া মজবুত করে। নারকেল তেলের সঙ্গে কারি পাতা আঁচে বসান। ফুটতে শুরু করলে পেঁয়াজ দিয়ে দিন। এই তেল-কারি পাতা-পেঁয়াজের মিশ্রণ ৪০ মিনিট টগবগ করে ফুটলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ব্যবহার করুন।
• শীতকালে খুসকির সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। তার জন্য লেবুর রস এবং জল একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন বেশ খানিকক্ষণ। তার পর হট অয়েল দিয়ে মাসাজ করে শ্যাম্পু করে নিন। এতে খুসকিও উধাও হবে।
• নারকেল তেলের সঙ্গে আমলকী, মেথি ভাল করে ফুটিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। এর পর বেশ খানিকক্ষণ গরম জলে ভেজানো তোয়ালে নিংড়ে চুল মুড়ে রাখুন। এ ভাবে ১৫-২০ মিনিট অন্তর দু’-তিন বার করলে চুল পড়া থেকে রেহাই পাবেন।
• একটি বাটিতে নারকেল তেল, একটা গোটা ডিম আর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস একসঙ্গে ভাল করে ফেটিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। ৩০-৪৫ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। এতে চুল নরম হবে।
• চুলের পরিচর্যায় তিলের তেলও অত্যন্ত উপকারী। তিলের তেল এবং সরষের খোল একসঙ্গে ফুটিয়ে নিন। ঈষদুষ্ণ থাকাকালীন এই তেল চুলে লাগান। একই ভাবে এটা চুলের প্রাকৃতিক প্যাক হিসেবেও কাজে লাগবে। নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করলে চুলের সৌন্দর্য বাড়বে।
তাই চুলের নানা সমস্যার মোকাবিলায় এ বার হাতিয়ার করুন তেলকেই।
মডেল: শ্রীময়ী
মেকআপ: নবীন দাস
পোশাক: রিমি নায়েক
ছবি: অমিত দাস