এ কী গভীর বাণী

রবীন্দ্রসদনে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান। লিখছেন শিখা বসু। হিন্দু স্কুলের বয়স হল দুশো বছর। উৎসব কমিটি রবীন্দ্রসদনে এক চমৎকার সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল— রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানের। খোলামেলা প্রাণবন্ত গায়কিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়। কী ভাল যে গাইলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০০:০০
Share:

হিন্দু স্কুলের বয়স হল দুশো বছর। উৎসব কমিটি রবীন্দ্রসদনে এক চমৎকার সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল— রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানের। খোলামেলা প্রাণবন্ত গায়কিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়। কী ভাল যে গাইলেন। ‘এ কী গভীর বাণী এল’। দ্বিতীয় পর্যায়ে এলেন মনোজ-মনীষা মুরলী নায়ার। ভাই বোনে কখনও দ্বৈত কখনও একক, শেষে শ্রোতাদের অনুরোধে আরও দুটি গান। বর্ষার মেজাজটিকে ঠিকঠাক এনে দিলেন মনীষা ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’ গানে।

Advertisement

মনোজের গলায় ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ বারবার শুনেও আশ মেটে না। ভাই বোনের যুগ্ম নিবেদন ‘বজ্রমানিক দিয়ে গাঁথা’ যথাযথ উচ্চারণ ও ঝোঁকের ব্যবহারে লাবণ্যময়। ইন্দ্রাণী সেনের গলায় কাজি সাহেবের গান শোনা সব সময়েই এক অন্যতর অভিজ্ঞতা, বার বার শুনেও আশ মেটে না। এই সন্ধ্যায় তাঁর নিবেদনে ছিল ‘সাঁঝের আঁচলে’ আর ‘আসিলে কে অতিথি’। অসামান্য সূক্ষ্ম তানের প্রয়োগে দ্বিতীয় গানটি অনেক দিন মনে থাকবে। আশি উত্তীর্ণা কল্যাণী কাজি, নজরুল-পুত্র কাজি অনিরুদ্ধের স্ত্রী, দাপটে গাইলেন। ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব’, এই আসরের শ্রোতারা সহজে ভুলতে পারবেন না। দিদি নজরুলগীতি তো বোন রবীন্দ্রনাথের গান। একই জাদু। সহজ আনন্দে শুরু করলেন শ্রাবণী সেন।

‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’। শান্তিদেব ঘোষ-সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠধন্য ‘কৃষ্ণকলি’ নতুন করে রূপ পেল শ্রাবণীর গানে। ঘনঘোর বরিষায় পৌঁছিয়ে দিলেন শ্রোতাদের ‘ঝরঝর বরিষে’ গেয়ে। সদ্য পুরী ভ্রমণে নাকি ক্লান্ত ছিলেন হৈমন্তী শুক্ল। কিন্তু তাঁর তো প্রতি নিশ্বাসে গান। কী অবলীলায় গেয়ে গেলেন পাঁচ-ছটি গান। সুর তো যেচে এসে ধরা দেয় তাঁর কণ্ঠে। একের পর এক শোনালেন কাজি সাহেবের গান, ‘সন্ধ্যা গোধূলি লগনে’, ‘আমি সূর্যমুখী ফুলের মতো’, ‘আকাশে হেলান দিয়ে’ প্রভৃতি গানগুলি। বাংলাদেশের শিল্পী সুস্মিতা আনিফ দারুণ মেজাজে শোনালেন নজরুলগীতি। শেষ শিল্পী মনোময় ভট্টাচার্যের নিবেদনে ছিল দুই কবিরই গান। শুরু রবীন্দ্রগানে, ‘ভালবেসে সখী’। অসাধারণ গাইলেন রূপে রসে রঙে সাজিয়ে। ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’। কিন্তু তাঁর মাপের শিল্পীর এটুকু কি সচেতনতা প্রয়োজন ছিল না যে অগ্নিভ এই গানটিই প্রথম আসরে গেয়ে গিয়েছেন! মনোময় তারপর গাইলেন নজরুলগীতি।

Advertisement

সামান্য সময় নির্ধারিত ছিল বাচিক শিল্পীদের জন্য। সু-সঞ্চালনার পাশাপাশি নিবেদন দেবাশিস বসুর দুর্দান্ত নজরুল কবিতা ‘হাবুদের তালপুকুরে’। কিন্তু অপর সঞ্চালিকা বাংলা গানের আসরে কথার মধ্যে এত বেশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলেন, বড়ই শ্রুতিকটু। মধুমিতা বসু আর বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী পাঠাভিনয় করলেন রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার কিছু অংশ। উচ্চারণ ও কথার চলনে মধুমিতা বসু লাবণ্যর চরিত্রে ভাল। কিন্তু বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর নিবেদনে, অমিত রায় রইল সম্পূর্ণ নিষ্প্রাণ। তা ছাড়া হঠাৎ বিক্ষিপ্ত কয়েকটি পাতার পাঠে এই উপন্যাসের আত্মা কি প্রকাশ পায়!

প্রাণ চায়

ভিন্ন সুরে ইদানীং বিভিন্ন গোত্রের সুর ও সঙ্গীত নিয়ে অনুষ্ঠান করার চল শুরু হয়েছে। মোৎসার্ট, বিটোফেনের করা সুর যেমন বাজাচ্ছেন শিল্পীরা, তেমনই থাকছে রবীন্দ্রনাথের ‘যদি তোর ডাক শুনে’, ‘প্রাণ চায়’। সম্প্রতি জিডি বিড়লা সভাঘরে ‘সিটি ইউথ অর্কেস্ট্রা’-র ‘অ্যালেগ্রেজা’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠানেও ছিল সেই মেজাজ। অর্কেস্ট্রার সঙ্গে কণ্ঠে সুরের ঢেউ তুলে সেই উচ্ছ্বাস আনলেন সৌরিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্প্রীতি ঘোষ, সৌমি ভৌমিকেরা। পরিচালনায় অনুপম হালদার।

মনে থাকবে

সম্প্রতি বেলেঘাটা সুরলোকের অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল প্রবাসী বাঙালি শিল্পীদের সমবেত গান ‘তোমারি গেহে পালিছ স্নেহে’। এর পর গান শোনালেন বিভা সেনগুপ্ত, অব্যয় চট্টোপাধ্যায়, অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। অজয় ঘোষ গাইলেন ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’। সব শেষে গাইলেন অলক রায়চৌধুরী ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’। এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল গীতি-আলেখ্য ‘প্রেম-অপ্রেম’। পরিচালনায় সুস্মেলি দত্ত, নৃত্য পরিচালনায় সঞ্জয় ও শৌভনিক।

রবিখেলা

সম্প্রতি ‘রবিখেলা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে, প্রণতি ঠাকুরের সঞ্চালনায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন সুক্তি মুন্সী। শিল্পীর নির্বাচনে ছিল ‘মেঘের কোলে’, ‘ফুলে ফুলে’, ‘কোথাও আমার’ প্রভৃতি গানগুলি। শ্রুতিমধুর পরিবেশনা। উল্লেখের দাবি রাখে ‘আমরা সবাই রাজা’ গানটি। যন্ত্রানুসঙ্গে সৌম্য বসু।

গান শুনে

সম্প্রতি মোহিত মৈত্র মঞ্চে ‘আলো আর আলো’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে গান শোনালেন বেলা সাধুখাঁ। শিল্পী গাইলেন ‘মোর স্বপ্নের সাথী তুমি’, ‘রিমিঝিমি এই’, ‘বন্ধ মনের দুয়ারে’ প্রভৃতি আধুনিক গান। এর পর ছিল শ্রুতি নাটক।

সারথির প্রয়াস

গান ও আবৃত্তির অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সারথি। শিল্পীরা ছিলেন অলোক রায়চৌধুরী, রাখী সরকার, শ্রাবণী সেন, ইমন চক্রবর্তী। সম্পূর্ণ এক মনোরম আবৃত্তির পরিবেশ এনে দিলেন শ্রীমন্তি দাশগুপ্ত, স্বাগতা পাল, সৌরদীপ রায়চৌধুরী, বর্ণালী সরকার ও পার্থ মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীত ও আবৃত্তি একে অপরের পরিপূরক ছিল। শ্রীমন্তির ‘তেজ’ ও সৌরদীপ রায়চৌধুরীর ‘জ্যোতির্ময়’ অনবদ্য। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন পার্থ মুখোপাধ্যায়।

আলোয় ফেরা

বিস্তৃতপ্রায় মঞ্চকথা ও গান। প্রয়াসের অভিনব আয়োজন দেখা গেল রবীন্দ্রসদনে। ‘আলোয় ফেরা’ ঊনবিংশ-বিংশ শতকের অভিনেত্রীদের জীবন-গান। এই ভাবনায় সংবর্ধনা জানানো হল আরতি দাসকে। যিনি ‘মিস্ শেফালী’ নামে খ্যাত। ‘আলোয় ফেরা’র শুরুতেই ভাল লাগল অভিনেত্রীদের এই জীবন-গানকে (সংস্ট্রেস) ‘মাতৃতর্পণ’ বলে উল্লেখ করা হল। ভাষ্যপাঠে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। একের পর এক গওহরজান, বিনোদিনী, কঙ্কাবতী, কৃষ্ণভামিনী, সুবাসিনী, রানীবালা, আঙুরবালা, ইন্দুবালা, নীহারবালা, কাননবালা—প্রমুখ রঙ্গমঞ্চ ও গানের জগতের অবিস্মরণীয় শিল্পীদের জীবন-কথা ফুটে উঠল তাঁদের আন্তরিক উচ্চারণে। শিল্পীদের শ্রুত-অশ্রুত কত গান উঠে এল দেবজিত্-ঋদ্ধি, দীপ্তেন্দু বসুর নিবেদনে। অতীত যেন কথা বলল ঋদ্ধির গাওয়া ‘বসন্ত করিছে ভবে’, ও দেবজিতের ‘ফাঁকি দিয়ে প্রাণের পাখি,’ গানে। দীপ্তেন্দু বসু’র ‘হিমের রাতে’-তে সুরের বিচলন লক্ষ করা গেল। নৃত্যে মুগ্ধ করেছেন দেবলীনা কুমার, অভিরূপ সেনগুপ্ত, লোকনাথ ভট্টাচার্য এবং কোমলগান্ধার (দুর্বার) শিল্পীরা। ঘোষণায় ছিলেন মধুমিতা বসু।

সুলগ্না বসু

ধলেশ্বরী নদীরে

যোগ্য শিক্ষকের হাতে পড়লে ওরাও যে অসাধ্যসাধন করতে পারে তার স্বাক্ষর রাখল লাইটহাউস ফর দ্য ব্লাইন্ডের শিক্ষার্থীরা।

দীর্ঘদিন ধরে ওদের বিনা পয়সায় তালিম দিয়েছেন লোকগানের শিল্পী প্রাণেশ সোম। সম্প্রতি জ্ঞানমঞ্চে দৃষ্টিহীন ছোট শিল্পীরা গান শোনালেন প্রাণেশের ‘গুরু’ অমর পালের সামনে। পরে আটানব্বই বছর বয়সী গুরু যখন ‘ধলেশ্বরী নদীরে---’ বলে সুর ধরলেন তখন গোটা প্রেক্ষাগৃহ মোহিত। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল শ্রাবণী সেনের রবীন্দ্রসঙ্গীত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement