সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে মঞ্চস্থ হল ওড়িশি নৃত্যমালা, তরঙ্গিনী, যার মূল ভাবনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন দেবমিত্রা সেনগুপ্ত। নদী যেমন অবিরাম বহমান থেকে বহু ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে, তেমন ওড়িশি নৃত্যও প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক সমাজে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বমহিমায় তার গতিশীলতা বজায় রাখে। এই ভাবনাকে নিপুণ গ্রন্থনা ও নিখুঁত নৃত্যবিন্যাসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে দেবমিত্রা ও ময়ূর ললিত ডান্স অ্যাকাডেমির সদস্যরা। মঙ্গলাচরণ, বটু ও পল্লবীর মতো চিরাচরিত নৃত্যপদগুলি ছাড়াও জৈন, বৌদ্ধ, শৈব তন্ত্রবাদ ও বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শন এই নৃত্যশৈলীকে যে কতটা প্রভাবিত করে তা উপস্থাপিত হয় ‘জটাটাবি’, পর্বতেন্দু, দুর্গা, ভঙ্গিচাহ ও কুরুযদুনন্দন নৃত্যপদগুলির মাধ্যমে। এছাড়া জয়দেবের গীতগোবিন্দ আধারিত ‘দশাবতার স্ত্রোত্র’ ও ‘ললিত লবঙ্গলতা’ নৃত্যপদে দেবমিত্রার পরিণত অভিনয় ও লাবণ্যমণ্ডিত ভঙ্গিমা অনুষ্ঠানটিকে নান্দনিক করো তোলে। সহকারী শিল্পীদের নৃত্যেও দীর্ঘ অনুশীলনের ছাপ বর্তমান। অনুষ্ঠানের অন্তিমলগ্নে পরিবেশিত হয় হংসধ্বনি রাগে নিবদ্ধ একটি সমবেত নৃত্যাংশ যা দর্শক মনে রেশ রেখে যায়।
চৈতী ঘোষ