পদাতিকের প্রযোজনা ‘সফরনামা’ (পরি: মাহমুদ আলম) হিন্দি অনুবাদে (সঞ্চয়িতা ভট্টাচার্য) ৬টি মার্কিন নটিকা। কাহিনি বা পরিস্থিতিতে কোনও যোগসূত্র নেই। ছটি একাঙ্কিকা— নায়িকার নাম এক হলেও এক একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক। আবহে ট্রেনের শব্দে বোঝা যায় নায়িকা সফররতা। এই সফর জীবনের প্রতিকল্প।
মেরী নামের এক নারীর (সঞ্চয়িতা ভট্টাচার্য) বিচিত্র জীবন-অভিজ্ঞতার এক একটি নিটোল নাটক। প্রথমে দর্শকদের স্বাগত জানিয়ে মেরী বক্তৃতা দিতে গিয়ে দেখে বক্তব্যের নোট আনতে ভুলে গেছে। নার্ভাস মেরী তখন স্মৃতি থেকে বক্তৃতা করে পরিস্থিতির সামাল দেয়। দ্বিতীয় নাটকে মেরী তার প্রাক্তনের বাড়িতে, যে এখন বিবাহিত এবং প্রথম সন্তানের জনক। পুরনো প্রেমের স্মৃতিতে কাতর মেরী মেনে নিতে পারে না তার প্রত্যাখ্যাত প্রেমের এমন সুখী পরিণতি, হারানো প্রেম ফিরে পেতেও পারে না। তৃতীয়টিতে মেরীর বান্ধবী তাকে হঠাৎ প্রেম নিবেদন করে। মেরী প্রত্যাখ্যান করে নাছোড় সমকামীকে, যদিও তাদের বন্ধুতায় এমন প্রেমের বীজ ছিল। পরের দৃশ্যে দরিদ্র মেরী চলন্ত মেট্রোয় এক ধনী সহযাত্রিনীকে বিপর্যস্ত করে নানা কথা বলে, প্রায় শ্রেণিবিদ্বেষের তিক্ততা নিয়ে। এর পরে নাগরদোলায় মেরী, সঙ্গী এক পুরুষ সহযাত্রী। দুজনেই নিঃসঙ্গ, পুরুষটি ঘনিষ্ঠ হতে চায় কিন্তু আচমকা নাগরদোলা থেমে যাওয়ার মতো অনিশ্চয়তায় পরিচয় শেষ হয়।
শেষ দৃশ্যের মেরী আত্মকথায় তার ব্যর্থ বিবাহিত জীবনের করুণ ইতিবৃত্ত জানায়। ছটি ভিন্ন নাটিকা হলেও বিষয়গত ঐক্যের জন্যে সেগুলি একত্র করেছেন পরিচালক। প্রতিটি নাটকেই নায়িকার সঙ্গে অন্যের-প্রেমের, বন্ধুতার বা নিছক পরিচয়ের—সম্পর্ক গড়ে ওঠে বা ভেঙে যায়, কারণ তুচ্ছ বা গুরুতর, যাই হোক। নায়িকার ভূমিকায় সঞ্চয়িতা প্রতিটি মেরীকে এক সুস্পষ্ট স্বাতন্ত্র্য দিয়েছেন, তবু গোটা প্রযোজনা তাঁর অভিনয় ব্যক্তিত্বে সুসংবদ্ধ হয়েছে। অবশ্যই তাঁকে যোগ্য সহায়তা করেছেন অন্যান্য ভূমিকায় সাহির সিদ্দিকী ও প্রতিজ্ঞা ঘোষ। শেষ নাটকটাতে আয়নার ব্যবহার করে পরিচালক নারীর আত্মকথনে এক তাৎপর্যের মাত্রা যোগ করেছেন।