সুজয়প্রসাদ। —ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি পরিবেশিত হল ‘চুপকথার গান’। সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে চুপকথার নিস্তব্ধতা ভরে উঠল গানে। কোলাহল বারণ যেখানে, প্রাণের আলাপ কেবল মাত্র গানে পূর্ণ হল। এই নতুন ভাবনাকে সম্পূর্ণ করল নানা ধরনের গান— কখনও তা রবীন্দ্রনাথের, কখনও ছায়াছবির হিন্দি গান, কখনও শচীনদেব বর্মণের গান আর কখনও ইংরেজি গান। এখানে ভাষার চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে গানের মূল ভাবনা ও সুরের ভাষা।
কিছু নিকট কথা— কখনও তা অতীতে, কখনও বা এক্ষুনি, যা মালার মতো পাঠে-সঙ্গীতে গাঁথা হয়ে উঠল।
কখনও শিল্পীর ‘তুমি’ ফিরে আসে শহরে। ‘তুমি’র আলো ঠিকরে পড়ে শিল্পীর গানে। অনেক গোপন গহন না বলা কথা ভিড় করে, যা ভরে দেয় সোমলতার গানে। কখনও এক একা মানুষের কথা। চার দিকে যার ভিড় করে থাকে বন্ধুর হাসিঠাট্টা, যুগলের আলাপ। মানুষটি থাকে একা— থেকে যায় সেই অমর মোনোলগ ‘দেয়ারস নো এসকেপ, আয়্যাম গডস লোনলি ম্যান’। শোভনের গানে সেই একলা মানুষের আকুতি ধরা পড়ে, ‘যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে, তাহারে আনিবে ডাকি।’
অনেক সময়ে প্রকৃতির হিংস্র রূপ বুঝিয়ে দেয়, মানুষ চেরি ব্লসম চায় না, নিজের চেনা হলুদ আলোতেই খুশি থাকতে শেখে। সোমলতা গেয়ে ওঠেন ‘রাত কি হামসফর’।
সুজয়প্রসাদ এক উইয়ার্ড জেনারেশনের কথা বলেন। শেখান ভালবাসাই একমাত্র ধর্ম, যা সকলের জন্য সমান। প্রেম হল ঈশ্বরের স্বচ্ছ রূপ। তাই ‘দহনবেলায় প্রেমের তাপসী, বরষাতে প্রেমধারা, শরতের শশী।’ অনেকের গল্প শোনান— রাজা, আসমদিন, ক্রিস্টিনার গল্প, যারা সবাই আলাদা ভাবে জীবন কাটায়। এরা সবাই তুমি। এদের চুপকথারা সুরের আড়ালে গুনগুন করে ঘুরে বেড়ায়— যা বুঝে নেয় অন্যজন।
‘চুপকথার গান’ বলে— পৃথিবীটা ভিক্টোরিয়ার পরির মতো ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। আমরাও ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত— হারিয়ে ফেলছি পাঁচিল, আচারের বয়াম, ঠাকুমার কোল। চলছি বোকা বাক্সের অ্যান্টেনা ঠিক করতে। সোমলতা, শোভনের গলায় ভরে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ, ‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে’।
সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের এই লেখা শোনা একটা অভিজ্ঞতা। তাঁর পাঠ আগাগোড়া সূক্ষ্ম সুতোতে কবিতার মতো গেঁথে চলে। পাঠ ব্যাপারটিকে কখন অভিনয়ে পরিণত করা যায়, সেই জাদু সুজয়ের জানা। সোমলতা ও শোভন চমৎকার ভাবে মূল ভাবনাকে গানে রূপ দিলেন। শিবাশিসের যন্ত্র সহযোগিতায় কোনও আড়ম্বর ছিল না। পুরো অনুষ্ঠানটিকে এক সুরে গাঁথলেন তিনি। অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি নতুন ভাবনা দিয়ে সন্ধ্যাটিকে সুন্দর করে তোলার জন্য।