‘বাংলা মেগা সিরিয়াল আমাদের একশো বছর পিছিয়ে দিয়েছে’

আর রেখে ঢেকে বলা পোষায় না! প্রযোজক-পরিচালকদের বলে বলে ছক্কা মারলেন সায়নী ঘোষ। তাঁর আগুনে কথা শুনলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়২০১৭-য় চুল নিয়ে নাজেহাল তিনি। ফোটোশ্যুটের জন্য চুল সেট করতেই লেগে গেল দু’ ঘণ্টা। বললেন, ‘‘আমার ডাকাবুকো ইমেজের সঙ্গে বড় চুল একদম যায় না!’’

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

ছবি: কৌশিক সরকার

২০১৭-য় চুল নিয়ে নাজেহাল তিনি। ফোটোশ্যুটের জন্য চুল সেট করতেই লেগে গেল দু’ ঘণ্টা। বললেন, ‘‘আমার ডাকাবুকো ইমেজের সঙ্গে বড় চুল একদম যায় না!’’

Advertisement

পত্রিকা: আপনি তো ইন্ডাস্ট্রিতে পাঁচফোড়নের কাজ করছেন! এক বছরে চোদ্দোটা ছবি অথচ অভিনেত্রী হিসেবে জায়গাটা এখনও পাকা নয়।

Advertisement

সায়নী (থামিয়ে দিয়ে): এখন সায়নী ঘোষ ‘না’ বলতে শিখেছে। ওই যে ‘তুই খুব ভাল অভিনেত্রী, প্লিজ এই চরিত্রটা করে দে’ বা ‘কী ভাল অভিনয় করিস। আমার ছবিতে নায়িকার ডাবিংটা করে দিবি’। এমন ঘ্যানঘ্যানে আবদার থেকে নিজেকে সরিয়ে এনেছি। আসলে আগে মনে হত আমিও এই ইন্ডাস্ট্রির কেউ। সাত বছর কাটাবার সব বাকোয়াস!

পত্রিকা: সে কী কেন!

সায়নী: আমি তো বুঝেই উঠতে পারি না আমি কমার্শিয়াল ছবির অভিনেত্রী নাকি প্যারালাল সিনেমার।

পত্রিকা: কেন? দিব্যি তো ‘কানামাছি’ থেকে বিরসার (দাশগুপ্ত) ‘গল্প হলেও সত্যি’...

সায়নী: তাতে কী? বিরসার ছবিতে ভূতের চরিত্র করলাম। বিরসা বলল দারুণ হয়েছে। প্রোডিউসররাও খুশি। কিন্তু পরের ছবিতে কি ডাক পেলাম? না। সবাই বলে, ‘সায়নী ঘোষ ফ্যা-আ-আ-ন্টা-স-স-টি-ক। তাতে লাভটা কী? চার মাস হয়তো বসে আছি। হাতে একটাও কাজ নেই। একদিনের প্রিমিয়ার। একদিনের পার্টি। ব্যস, খেলা শেষ।

পত্রিকা: কাজ পাচ্ছেন না বলে ইন্ডাস্ট্রিতে পোষাচ্ছে না?

সায়নী: (বেশ রেগে) উইথ ডিউ রেসপেক্ট বলতে চাই, এখনকার ডিরেক্টররা একটা নির্দিষ্ট ছকে বাধা পড়ে গেছেন। আগে এই বাংলার দর্শকরাই উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেনের ছবি দেখেছে। এখন দর্শক ভাগ হয়ে গেল কেন? কী করেই বা? যে দেবের ‘পাগলু’ দেখবে সে দেবের ‘আরশিনগর’ দেখবে না কেন? তাছাড়াও পরিচালকদের এখন প্রযোজকের পছন্দের চাপ মাথায় রেখে ছবি করতে হয়। ভাবুন তো, আগে সত্যজিৎ রায়কে কোনও প্রযোজক এসে বলতে পারতেন ‘ওই নায়িকাকেই নিতে হবে, নয়তো ছবি হবে না?’ সত্যজিৎ রায় তো বলতে গেলে, পথ চলতি মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়েও ছবি করেছেন। আমার আফসোস আমি ওই সময়ে জন্মায়নি।

পত্রিকা: মানে কী? সত্যজিৎ রায় বেঁচে থাকলে আপনাকে তুলতেনই। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

সায়নী (মজা করে): আমাকে তোলা অত সহজ নয়...(প্রচণ্ড হাসি) জাস্ট জোকিং। আসলে আমি বলতে চাইছি প্রতিভা বুঝে চরিত্র নির্বাচন এখন খুব একটা হয় না। এখন বাজারে কোন মুখ চলছে, বক্স অফিসে টাকা কী সে উঠবে সে গুলো ভেবে ছবি হয়।

পত্রিকা: তো?

সায়নী (অস্বস্তি নিয়ে): আরে এত বছর ধরে কামু, কাফকা পড়ে, গদার দেখে যদি গাছের ডালে ঝুলে গান গাইতে হয়...! আরও কী জানেন, বাংলা মেগা সিরিয়াল আমাদের রুচিকে একশো বছর পিছিয়ে দিয়েছে।

পত্রিকা: ও বুঝেছি। আঙুর ফল টক। কমার্শিয়াল ছবিতে হিরোইন না হওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না।

সায়নী: বাংলা আর তামিল ছবিতে কমার্শিয়াল নায়িকা হতে গেলে মিষ্টি মুখের দরকার হয়। আর দশ কিলো ওজন কমাতে হয়। একটু সেক্সি, ফেমিনিন লুক আনতে হয়...

পত্রিকা: তাতে আপত্তি?

সায়নী: আরে বিদেশি ছবি দেখুন বুঝতে পারবেন। একটা উদাহরণ দিই, আমাদের এখানে ‘অ্যান্ড্রোজিনি’ কনসেপ্টটাই নেই। আমি শিখে এসেছি চেহারা নয়, অভিনয় ক্ষমতাই একজন মানুষকে আরেকজনের থেকে আলাদা করে। আর মুখ? যে কোনও মুখেরই তো একটা চরিত্র আছে। সেটাকে বড় করে দেখার কী আছে?

পত্রিকা: কিন্তু কমার্শিয়াল ছবি থেকেই তো অভিনেত্রীদের আসল রোজগার। মিমি, সায়ন্তিকাদের জনপ্রিয়তাও তো এখান থেকে...

সায়নী: হ্যাঁ। অবশ্যই। আমি তো প্যারালাল সিনেমা করি। ওদের মতো মাচায় ডাক পাই না। ওদের বড় গাড়ি, বাড়ি। আমার ‘আই টেন’, তাও বাবার থেকে লোন নেওয়া। আসলে ওদের ভিশন আর আমার ভিশন সম্পূর্ণ আলাদা। অবশ্য আমারও দোষ আছে।

পত্রিকা: কী কী দোষ আপনার?

সায়নী: বানিয়ে বানিয়ে ভাল বলতে পারি না। পরিচালক বা প্রযোজকের সঙ্গে আলাদা দেখা করতে পারি না। আমাদের মতো অভিনেত্রীদের এটা একটা বড় সমস্যা।

পত্রিকা: আমাদের মতো বলতে?

সায়নী: প্রিয়াঙ্কা (সরকার)। আমাদের জেনারেশনে ও সেরা অভিনেত্রী। সোহিনীও (সরকার) ভাল কাজ করছে। তবে ওর অভিনয় সত্তার সঙ্গে ঠিকমতো জাস্টিস হয়নি।

পত্রিকা: আর অভিনেতাদের নিয়ে...

সায়নী: দেখুন, আমি ফেমিনিস্ট নই। তবে একটা কথা বলতে পারি ক্যামেরার পিছনে কমান্ড হাঁকাবে এমন মহিলা পরিচালক এখন কোথায়? মহিলা সিনেমাটোগ্রাফার, এডিটর কোথায়? আজও দেখি একজন মহিলা ডিওপি কিছু বললে একজন পুরুষ টেকনিশিয়ান তাঁকে পাত্তা না দিয়ে বলে, ‘চল হাট।’ যাই হোক অভিনেতাদের মধ্যে ঋত্বিকদা (চক্রবর্তী), অপুদা (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যিশু (সেনগুপ্ত)-র কথা বলতে চাই।

পত্রিকা: বেশ ক্যাটক্যাট করে কথা বলেন আপনি। অথচ ইন্ডাস্ট্রিতে সায়নী ঘোষ বললেই সেক্সি, আউটগোয়িং, খোলামেলা...

সায়নী (থামিয়ে): জোর করে চাপিয়ে দেওয়া, ছবিতে দু’ মিনিটের ইরোটিক দৃশ্য করার অফার আসে। করি না। তবে ২০১৭-য় কিরীটী-তে আমার অভিনয় মানুষের ভাল লেগেছে। অনীক দত্তর ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ আসছে। এ ছাড়াও ‘সাক্ষী’ ও ‘অন্দরকাহিনী’ বলে দুটো ছবি আসছে।

পত্রিকা: এর জন্য আপনিও দায়ী।

সায়নী: মানে?

পত্রিকা: আপনাকে ওয়াডড্রোবের পোশাক নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তো যেচেই আগে লজারির কথা বলেন।

সায়নী (উত্তেজিত হয়ে): আমি যা, তাই-ই তো বলব।

পত্রিকা: আচ্ছা বলুন। কোন কোন ছবি করাটা আপনার ভুল হয়েছে?

সায়নী: ‘রাজকাহিনী’ এমন একটা ছবি যেটা না করলেও হতো। এটা শুধু আমি নয়, আমার মতো ‘রাজকাহিনী’র অনেক অভিনেত্রীই তাই মনে করেন। তারা বলছেন না। আমি বলছি। তিন ডিগ্রি টেম্পারেচরে পিঠ খোলা শাড়ি পরে অভিনয় করার অভিজ্ঞতাটুকুই হয়েছে, আর কিছু লাভ হয়নি। আরেকটা ছবির কথাও লিখবেন প্লিজ। ‘নাটকের মতো’।

পত্রিকা: ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে এ রকম বক্তব্য রাখছেন। ভয় করছে না?

সায়নী: ভাল বক্তব্য রেখেও দেখেছি কাজ জোটেনি।

পত্রিকা: এবার কী করবেন ভাবছেন?

সায়নী: ক্যামেরা দেখলেই আমার মধ্যে একটা অ্যাড্রিনালিন রাশ হয়। আমি অপেক্ষায় আছি এমন একজন ডিরেক্টরের যিনি এসে বলবেন, এতদিন যা করেছ তার নিট রেজাল্ট জিরো। অভিনয়টা কিছুই পারো না। আমার কাছে শেখো। মুম্বই না গিয়ে এই কলকাতাতেই অপেক্ষা করছি তার জন্য। আর শর্ট ফিল্ম ডিরেক্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

পত্রিকা: প্রেমের প্রস্তুতি নেই?

সায়নী: আমি সিঙ্গল। তবে এই সাক্ষাৎকারটা দিয়ে বেরিয়ে সে রকম রোম্যান্টিক কাউকে যদি দেখি, বলা যায় না তার প্রেমে পড়ে যেতেও পারি। আসলে আমি খুব ফিল্মি জানেন। ব্রেনের ওয়্যারিংটাই আলাদা (প্রচণ্ড হাসি)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement